পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারীদের যোগসাজশেই দালালদের দৌরাত্ম্য
পাসপোর্ট করতে ৪১ শতাংশ সেবাগ্রহীতা দালালের সহায়তা নেয়। দালালের সঙ্গে পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারীদের এবং এসবি পুলিশের একাংশের যোগসাজশের ফলে পাসপোর্ট সেবায় অনিয়ম ও দুর্নীতি সংগঠিত হয় বলে জানিয়েছে দুর্নীতি বিরোধী বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবি।
সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে সংস্থাটির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে 'পাসপোর্ট সেবায় সুশাসন, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়' শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পাসপোর্ট অফিসের সেবায় গড়ে প্রতি পাসপোর্টে দুই হাজার ২২১ টাকা ঘুষ দিতে হয়। দালালরা সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে যে অতিরিক্ত টাকা নেয় তার একটি নির্দিষ্ট অংশ পায় পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারীর একাংশ এবং এসবি পুলিশের একাংশ। এরফলে পাসপোর্ট তৈরিতে দালালের দৌরাত্ম্য রয়েছে।
গবেষণায় উঠে আসে শতকারা ৪১ শতাংশ সেবাগ্রহীতা দালালের সহায়তা নেয়। তারা পুলিশি হয়রানিসহ বিভিন্ন ঝামেলা এড়াতে ও দ্রুত পাসপোর্ট পেতে দালালের আশ্রয় নেয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, টিআইবির প্রোগ্রাম ম্যানেজার রিসার্চ ও পলিসি মো. শাহনূর রহমানের নেতৃত্বে দেশের ২৬টি জেলায় পরিচালিত এক সমীক্ষার ভিত্তিতে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়। যার সময় ছিল ২০১৬ এর সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৭ এর মে পর্যন্ত।
গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে সিলেট অঞ্চলের গ্রাহকরা সবচেয়ে বেশি দালালের সহযোগিতা নিয়েছে। অন্যদিকে রাজশাহী অঞ্চলের গ্রাহকরা কম নিয়েছে।
সিলেটে ৬০, ময়মনসিংহে ৫৬, চট্টগ্রামে ৫৫, ঢাকায় ৪৭, বরিশালে ৩৭ , খুলনায় ৩৫, রংপুরে ২৩, রাজশাহীতে ২০ শতাংশ লোক দালালের সহোযোগিতা নেয়।
সংবাদ সম্মেলনে পাসপোর্ট অফিসগুলোকে ঘিরে দালালদের উৎপাত ও দুর্নীতি প্রসঙ্গে টিআইবির চেয়ারপার্সন সুলতানা কামাল বলেন, পাসপোর্ট অফিসের ভেতরে থেকেই কর্মকর্তারা দুর্নীতি প্রশ্রয় দেন, এ কারণেই দালালদের তৎপরতা বন্ধ করা যায় না। তিনি অভিযোগ করেন, বিভিন্ন কাগজপত্র সত্যায়িত করার জন্য অনিয়ম দুর্নীতির ক্ষেত্রে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাইরের ফটোকপির দোকানের যোগাসাজশ রয়েছে।
টিআইবির গবেষণায় বলা হয় , পাসপোর্ট সেবায় মধ্যস্থকারী হিসেবে এক শ্রেণির ব্যক্তি কাজ করে থাকে যারা স্থানীয়ভাবে দালাল হিসেবে পরিচিত। টিআইবির জরিপে দেখা যায়, ৪১ শতাংশ সেবাগ্রহীতা পাসপোর্ট তৈরি করতে দালালের সহোযোগিতা নিয়েছে। যার ভেতরে ৮২ শতাংশ পুরো কাজটি সম্পন্ন করতে দালালের সঙ্গে চুক্তি করেছে আর ১৮ শতাংশ আংশিক চুক্তি করেছে।
শাহনূর রহমান জানান, দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট করার ব্যাপারে সেবাগ্রহীতাদের বিভিন্ন মত রয়েছে। ২২ শতাংশ বলেছে, দালালের সহোযোগিতা ছাড়া আবেদনপত্র জমা দিলে কর্তৃপক্ষ জমা নেয় না, ৫১ শতাংশ পাসপোর্ট সেবার নিয়মকানুন সম্পর্কে না জানার কারণে ৫.৭ সতাংশ পুলিশি তদন্তে হযরানি এড়ানোর জন্য এছাড়া কেউ বলেছে, তারা নির্ধারিত সময়ের আগে পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য, দীর্ঘ লাইন, একাধিকবার পাসপোর্ট অফিসে আসা ইত্যাদির কারণে দালালের সহযোগিতা নেয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দালালরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়াফ তাদের দৌরাত্ম্য রজায় রাখে। তারা এসবি পুলিশ এবং পাসপোর্ট আফিসের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। পাসপোর্ট আবেদনকারীদের কাছ থেকে তারা যে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করে তার একটি অংশ পাসপোর্ট অফিসের কর্মকরতা কর্মচারী ও এসবি পুলিশের একাংশকে দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, একটি পাসপোর্ট অফিসকে কেন্দ্র করে দালালদের মধ্যে এলাকা ভিত্তিক যোগাযোগ বা নেটওয়ার্ক থাকে। এ নেটের মাধ্যকে দাললদের কাছে সেবাগ্রহীতারা আসে। এছাড়া পাসপোর্ট আফিসের কর্মচারীদের একাংশ স্থানীয় হওয়ার কারণে তাদের মাধ্যমেও কিছু সেবাগ্রহীতা সহযোগিতার জন্য আসেন।
গবেষণায় উঠে আসে, সেবাগ্রহীতারা ২৭ শতাংশ বিতরণ স্লিপের নির্ধারিত তারিখে পাসপোর্ট পায়নি। এ পাসপোর্ট পেতে গড়ে ১২ দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে তাদের।
গবেষণা প্রতিবেদনে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।
এর মধ্যে পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন ও সত্যায়নের নিয়ম পুরোপুরি বাদ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়।
এছাড়া পাসপোর্ট নবায়ন বা রিনিউ করার মেয়াদ দশ বছর করার সুপারিশ করেছে টিআইবি। এতে দুর্নীতি কমবে বলে মনে করে সংস্থাটি।
এছাড়া পাসপোর্ট প্রক্রিয়াকরণে ১৮টি ধাপ অতিক্রম করা হয় এ ধাপ গুলো কমিয়ে আনা।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও গবেষণা প্রতিবেদনটির পরিচালক মো. শাহনূর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
(ঢাকাটাইমস/২১আগস্ট/জেআর/জেডএ)