আমাদের মহানায়ক নেই, ছিলেন নায়করাজ

জান্নাতুন নাঈম প্রীতি
 | প্রকাশিত : ২২ আগস্ট ২০১৭, ১২:২০

আমাদের বাংলা সিনেমার ইতিহাসে নায়ক নামের যত পুরুষ এসেছেন তাঁদের রাজা নায়করাজ রাজ্জাক চলে গেলেন। তিনি আর কখনো আমাদের আয়নাতে মুখ দেখে কপোলের কালো তিলের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন না।

পৃথিবীর সবচেয়ে এক্সপেন্সিভ চিত্রশিল্পী বলা হয় পাবলো পিকাসোকে। তাঁর একেকটা শিল্পকর্মের দাম কয়েক মিলিয়ন ডলার করে। পিকাসো তখন অখ্যাত অচেনা এক শিল্পী, প্যারিসে তাঁকে জায়গা দিয়েছেন লেখক গার্ট্রুড স্টাইন। পিকাসো স্টাইনের একটা পোট্রেট আঁকলেন। স্টাইন সেই পোট্রেট দেখে বড়ই বিরক্ত হলেন। তিনি জানতে চাইলেন- এটা কি এঁকেছ? আমিতো এরকম দেখতে না! পিকাসো উত্তর দিলেন- You will(তুমি এরকম দেখতে হবে)। ৩০ বছর পর দেখা গেলো লোকজন স্টাইনকে বলছে- তুমি দেখতে হুবুহু পিকাসোর ছবির মতো হয়ে গেছো!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাশিয়া গিয়েছিলেন। তখন রাশিয়ার নাম ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। তিনি রাশিয়া ঘুরে এসে লিখলেন তাঁর বিখ্যাত ভ্রমণ কাহিনী ‘রাশিয়ার চিঠি’। আমি পড়ে অবাক হয়েছি যে তিনি অনেক আগেই মন্তব্য করে গিয়েছিলেন- সোভিয়েত ইউনিয়ন টিকবে না। কেন টিকবে না সেই বর্ণনাও করে গিয়েছেন। রবিঠাকুরের মন্তব্যের ত্রিশ বছর পূর্তির আগেই সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলো!

আরেক নোবেল বিজয়ী ঔপন্যাসিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে কিউবায় ত্রিশ বছরের বেশি সময় থেকেছেন। কিউবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ট্রো ছিলেন তাঁর অন্যতম ভালো বন্ধু। স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধ নিয়ে হেমিংওয়ে লিখেছিলেন তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘ফর হুম দ্যা বেল টোলস’। তিনি ক্যাস্ট্রোকে বলেছিলেন এই বইটা তোমার রাষ্ট্রপরিচালনায় কাজে লাগবে। ক্যাস্ট্রো এই বই মাথার কাছে নিয়ে ঘুমাতেন প্রতিদিন।

এসব কথাগুলির বলার কারণ হচ্ছে যারা মেধাবী, প্রতিভাবান তাঁরা তাদের বিচক্ষণতার জোরে সামনে ভবিষ্যতে কি হতে যাচ্ছে সেটা বলতে পারেন। একটা দেশ কতো সভ্য সেটা নির্ভর করে তাঁরা জ্ঞানীগুণীদের ঠিক কতোটা দাম দেয়- এর ওপর।

বাঙালির শিল্পবোধ ভয়াবহ। তারা কোনো শিল্পী কেউ অসুস্থ হয়ে গেলে তাঁকে সাহায্য তো ভালো, গালাগালি করতে ছাড়েনা।

শিল্পীদের টাকাপয়সা থাকেনা, কিন্তু আত্মসম্মান থাকে। এজন্যই ভ্যানগঘকে মরে যেতে হয়, মাইকেল মধুসূদন দত্তকে মরে যেতে হয়, সঙ্গীতশিল্পী জাব্বারকে টাকা চাওয়ার জন্য টিটকারি শুনতে হয়! কিন্তু মরে গেলে আপনি গল্প করতে ছাড়বেন না- অমুক কিন্তু আমাদের দেশেরই মানুষ! আজকেও যেমন জপে যাচ্ছেন- আমাদের উত্তম কুমার ছিলোনা, কিন্তু রাজ্জাক ছিলেন!

ইউরোপের লোকজন যখন কাঁচা মাংস খেতো মহেঞ্জদারো, হরপ্পার শিল্পীরা তখন অনন্য শিল্প তৈরি করেছিল। এখন সেইসব নিদর্শন আছে ফ্রান্সের ল্যুভে, মাদ্রিদের প্রাডোতে, ইতালির উফিজিতে। আমাদের জিনিস ওদের কাছে গেলো কেন? কারণ ওরা শিল্প আর শিল্পীকে আপন করে নিতে জানে!

তাই বলি- শিল্পী হোক, সাধারণ মানুষ হোক, মানুষের বিপদে তার পাশে দাঁড়ানোর অভ্যাস করুন। মানুষ মরে গেলে পচে যায়, কিন্তু শিল্পী মরে গেলে অমর হয়। যে জাতি তাঁদের শিল্পীদের বাঁচিয়ে রাখতে জানেনা, তাঁদের ঘরে শিল্প বাঁচেনা। ঠিক আছে?

জান্নাতুন নাঈম প্রীতি: লেখক সমাজকর্মী

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :