সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় রাজনৈতিক সংস্কৃতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২২ আগস্ট ২০১৭, ১৭:৪৮ | প্রকাশিত : ২২ আগস্ট ২০১৭, ১৭:৪০

সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নির্রাচন হতে পারে। কিন্তু এর অন্তরায় হচ্ছে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, দলীয়করণ ও নিরাপত্তাহীনতা। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে ঠিক করতে হবে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন চায় কি না। আবার ইসির ওপর সবার আস্থা না থাকলেও তাদের পক্ষে নির্বাচন করা কঠিন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক গোলটেবিল বৈঠকে সাবেক এ নির্বাচন কমিশনার এসব কথা বলেন।

‘সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে করণীয়’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন।

সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে আলোচনায় অংশ নেন বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুজন নির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবুল মকসুদ, অধ্যাপক আসিফ নজরুল প্রমুখ।

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘তাত্ত্বিক বা ক্ষমতার দিক থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন দক্ষিণ এশিয়ার যে কোনো দেশের কমিশনের চেয়ে শক্তিশালী ও বড়। কিন্তু সরকার শতভাগ সহায়তা করলেও কী ভালো নির্বাচন সম্ভব? এসময় তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে।

সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার মনে করেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে আদালতেরও ভূমিকা আছে। ভারতীয় নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ সেখানকার শক্তিশালী বিচার বিভাগ। তবে তিনি তার বক্তব্যে আদালতের ভূমিকা স্পষ্ট করেননি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিচারপতি কাজী এবাদুল হক বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে দেশে অশান্তি দেখা দেয়। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ রাখার জন্য ভোটার-প্রার্থীদের নিয়ে প্রজেকশান মিটিং হওয়া দরকার এবং নির্বাচনী আইন মানা দরকার।’

কলামিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘ইসি যদি শুধু আওয়ামী লীগকে ডেকে আলোচনা করত, তারা কী রকম নির্বাচন চায়, কী রকম সহায়তা করবে, সেটা জানত, তাহলে ভালো হতো। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘন ঘন বসলে ভালো। কারণ, সব দল যদি বলে, তারা সুইজারল্যান্ডের মতো নির্বাচন চায়, কিন্তু আওয়ামী লীগ না চাইলে তা হবে না।’

আবুল মকসুদ বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সরকারের সহায়তা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তবে কমিশনকেই উদ্যোগী হতে হবে এবং তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে তারা কতটা অসহায় বা শক্তিশালী।

আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল। বলেন, ‘ইসির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ আছে। তাদের এমন কিছু বলা উচিত না, যাতে এই সন্দেহ আরও বাড়ে।’ ইসি রাজনৈতিক মধ্যস্থতা করবে না সিইসির এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘যেসব আইন আছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন ও আস্থা তৈরি করতে পারলে মধ্যস্থতার প্রয়োজন হবে না।’

আসিফ নজরুল বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে কী অবস্থা হয়, তা গত চার বছরে দেখা গেছে। সরকার সব সময় নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে ভীতির মুখে থাকে। এ কারণে ইমরান এইচ সরকার বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ করতে গেলে হামলার শিকার হন। বিএনপি সভা করতে গেলে বাধা আসে এবং প্রধান বিচারপতি কী বলেছেন, তা নিয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে সরকার।’

সভাপতির বক্তব্যে এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, প্রয়োজন মনে করলে সঠিক নির্বাচনের স্বার্থে ইসি তার বাইরেও তা প্রয়োগ করতে পারে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, রাজনৈতিক দলের মধ্যস্থতা বা তফসিলের আগে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা ইসির দায়িত্ব নয়। এই বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এক দল ভোট চাইছে। আরেক দল শৃঙ্খলিত হয়ে আছে। তফসিলের ৪৫ দিনে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার কথা অবাস্তব। এখন থেকে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।’

মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। বলেন, ‘বর্তমান সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যেই পরবর্তী মেয়াদের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তা বর্তমান সংসদ বহাল রেখেই। এই বিধান বহাল রেখেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ‘লেভেল প্লেইং ফিল্ড’ বা সবার জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা দুরূহ হবে। আর সেক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে সুদূরপরাহত।’

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন তাদের রোডম্যাপ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে সংলাপ শুরু করেছে। আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকা সত্ত্বেও সংলাপের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের মতামত গ্রহণের জন্য আমরা কমিশনকে সাধুবাদ জানাই।’

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে নির্বাচনী বিধি-বিধানে সংস্কারসহ নির্বাচন কমিশনের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ করণীয় রয়েছে। একইসঙ্গে করণীয় রয়েছে সরকার, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবার।’

ঢাকাটাইমস/২২আগস্ট/জিএম/জেডএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

ট্রেনে ঈদযাত্রা: ৮ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি শুরু

ঢাকায় কর দিয়ে ২৬৮০ বিয়ে 

সংরক্ষিত আসনের এমপিদের মধ্যেও সংখ্যায় এগিয়ে ব্যবসায়ীরা: সুজন

মানবাধিকার ও ভোক্তা অধিকার রক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা জরুরি: ড. কামাল উদ্দিন

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে রেলকে গড়ে তুলতে হবে: রেলমন্ত্রী

ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার

জিম্মি নাবিকদের মুক্তির আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ডিএনসিসি কার্যালয় সরানোর মধ্য দিয়ে কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু 

বিএসএমএমইউ উপাচার্যের দায়িত্ব নিলেন দীন মোহাম্মদ, বললেন ‘কোনো অন্যায় আবদার শুনব না’

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :