রায় দ্রুত কার্যকর চান নজরুলের স্ত্রী-শ্বশুর
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলায় হাইকোর্টে প্রধান আসামিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও তার শ্বশুর শহিদুল ইসলাম (শহীদ চেয়ারম্যান)।। তারা দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার পর সেলিনা হোসেন বিউটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আসামিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকায় আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট। আপিল বিভাগেও এ রায় বহাল থাকবে বলে আশা করি।’
বিউটি বলেন, ‘এখন এই খুনিদের রায় দ্রুত কার্যকরের মাধ্যমে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে। দ্রুত এই রায় কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি।’
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচারের পক্ষে থাকায় প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান নজরুলের স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সারা দেশের জনগণ ও গণমাধ্যম এই যুদ্ধের শুরু থেকে পাশে ছিলেন। তাদের এই ঋণ আমি কোনো দিন শোধ করতে পারব না।’ বিচারের শেষ ধাপ পর্যন্ত সবাই তার পাশে থাকবেন বলে আশা করেন তিনি।
নজরুলের শ্বশুর শহীদ চেয়ারম্যান বলেন, ‘মূল আসামিদের জজকোর্টে ফাঁসি হয়েছে হাইকোর্টেও ফাঁসি বহাল রয়েছে। আমরা এই রায়ে খুশি। এখন আমরা চাই দ্রুত এই রায় কার্যকর করা হবে।’
ফাঁসির আসামি হলেও নূর হোসেনকে কনডেম সেলে না রেখে সাধারণ কয়েদিদের সেলে রাখা হচ্ছে এমন অভিযোগ করে শহীদ চেয়ারম্যান বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সহযোগিতায় নূর হোসেনকে ভারত থেকে এনে আদালতে দাঁড় করিয়েছেন। জজকোর্টের রায়ে তার ফাঁসির দণ্ড হয়েছে। তার থাকার কথা কনডেম সেলে। কিন্তু তাকে রাখা হচ্ছে সাধারণ কয়েদিদের সেলে।’ নূর হোসেনের বেলায় কারবিধি মানা হচ্ছে ন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সাত খুন মামলায় নারায়ণগঞ্জের বিচারিক আদালত ২৬ আসামির মৃত্যুদন্ডের রায় দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। অন্য ১১ জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। এই মামলার মোট ৩৫ আসামির বাকি নয়জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের সাজা বহাল রয়েছে উচ্চ আদালতের আজকের রায়ে।
যাদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রয়েছে তারা হলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, র্যাবের ক্যাম্প কমান্ডার সাবেক মেজর আরিফ হোসেন, র্যাবের ক্যাম্প কমান্ডার, সাবেক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানা, হাবিলদার এমদাদুল হক, আরওজি-১আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহি আবু তৈয়ব, কনস্টেবল মো. শিহাব উদ্দিন, এসআই পুর্নেন্দু বালা, সৈনিক আব্দুল আলীম, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী, সৈনিক তাজুল ইসলাম, সৈনিক আল আমিন।
মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমে যাদের যাবজ্জীবন হয়েছে তারা হলেন- সৈনিক আসাদুজ্জামান নুর, সার্জেন্ট এনামুল কবীর, নুর হোসেনের সহযোগী মুর্তুজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দিপু অরফে মিজান, মো. রহম আলী, মো. আবুল বাসার, সেলিম, মো. সানাউল্লাহ অরফে সানা, ম্যানেজার শাহজাহান, জামাল উদ্দিন।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয়টি লাশ। পরদিন মেলে আরেকটি লাশ। নিহত অন্যরা হলেন নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম।
ঘটনার এক দিন পর কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে নূর হোসেনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন।
(ঢাকাটাইমস/২২আগস্ট/এমএবি/মোআ)