নারায়ণগঞ্জে জেএমবির সারোয়ার তামীম গ্রুপের তিন সদস্য গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২২ আগস্ট ২০১৭, ২২:৫৩ | প্রকাশিত : ২২ আগস্ট ২০১৭, ২২:৪৯

র‌্যাবের অভিযানে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে জেএমবির (সারোয়ার-তামীম গ্রুপের) সক্রিয় তিনজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১১।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- আবদুর রহমান ওরফে রুবেল ওরফে সুফিয়ান (৩২),সৈয়দ রায়হানুল আহসান ওরফে নাফিস (৩২), এবং মোহাম্মদ ইমাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে রফিক ওরফে আবু উমামা আল বাহিরী (২৭)। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি, একটি চাপাতি, একটি চাকু এবং বেশ কিছু জঙ্গিবাদী বই ও লিফলেট উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায় যে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকায় একটি জঙ্গি সংগঠনের বেশকিছু সদস্য নাশকতার পরিকল্পনার উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠকের জন্য মিলিত হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে র‌্যাব-১১ এর একটি বিশেষ দল গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে পাঁচটার পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের বন্দর এবং রুপগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সারোয়ার-তামীম গ্রুপের তিনজন সক্রিয় সদস্যদের গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত সদস্যরা স্বীকার করে যে, তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সারোয়ার-তামীম গ্রুপের সক্রিয় সদস্য।

তারা সাংগঠনিক কর্মকান্ডের সমন্বয় ও নাশকতার পরিকল্পনার জন্য এই গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিল বলা হয় ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তারকৃত আবদুর রহমান ওরফে রুবেল ওরফে সুফিয়ান ২০০১ সালে লালবাগের একটি স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণি পাশ করে। এরপর ২০১০ সাল পর্যন্ত সে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকুরিসহ ক্ষুদ্র ব্যবসা করে আসছিল।

২০১০ সালের পর ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরর পাশাপাশি বিভিন্ন মাদরাসা ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে খন্ডকালীন নৈশকালীন কোর্সে ভর্তি হয়ে আরবী ভাষার কলা কৌশল রপ্ত করে। ২০১৩ সালে জেএমবির শুরা সদস্য ও শীর্ষ স্থানীয় নেতা ইমরান আহমেদের মালিকানাধীন জীম টেঙ নামক পোষাক কারখানায় চাকুরি শুরু করে।

পরে ইমরান আহমেদের অনুপ্রেরণা এবং পৃষ্ঠপোষকতায় চাকুরি থেকে ছুটি নিয়ে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ঢাকার রামপুরা এবং বনশ্রী এলাকায় বিভিন্ন ধর্মীয় শিক্ষকের কাছে আরবী শিক্ষা গ্রহণ করে। ২০১৭ সালে যাত্রাবাড়ির একটি মাদ্রাসা থেকে আরবী শিক্ষা শেষ করে। সে বেশ কিছুদিন যাবৎ বিভিন্ন বাসায় আরবী পড়ানোর কাজ করছিল বলে জানিয়েছে। সে ২০০২ সালে তানজিম আল ইসলাম নামক মৌলবাদী সংগঠনের মাধ্যমে জিহাদের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং ২০০৪ সালে তার পিতার ঘনিষ্ঠ বন্ধু দাউদের মাধ্যমে হানাফি মতাদর্শ থেকে সালাফি মতাদর্শে মতান্তরিত হয়।

২০০৬ সালে জনৈক এক ‘স্যারের ’ মাধ্যমে সে জেএমবিতে যোগদান করে দাওয়াতি কাজ করতে থাকে। তিনি জসিম উদ্দিন রাহমানির জঙ্গি সংক্রান্ত কর্মকান্ডের একান্ত সহকারী হিসেবে প্রায় চার বছর কাজ করেছিল এবং জসিম উদ্দিন রাহমানি গ্রেপ্তার হওয়ার পর সে মাওলানা আব্দুল হাকিমের সহকারী হিসেবে প্রায় এক বছর কাজ করেছে। মূলত মাওলানা আব্দুল হাকিম গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে ইমরান আহমেদের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করে আসছিল। আবদুর রহমান ওরফে রুবেল ওরফে সুফিয়ান ২০০৬ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রায় ১১ বছর মূল জেএমবির সদস্য হয়ে কাজ করে জেএমবির সদস্য সংগ্রহ করেছে। পরবর্তীতে সে ২০১৬ সালে তার গুরু কথিত ‘স্যারের ’ মাধ্যমে জেএমবির (সারোয়ার-তামীম) গ্রুপে যোগদান করে দাওয়াতি শাখা থেকে সামরিক শাখায় আত্মপ্রকাশ করে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সৈয়দ রায়হানুল আহসান ওরফে নাফিস ২০০০ সালে গাজীপুরের একটি স্কুল থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এসএসসি এবং ২০১৬ সালে ঢাকার একটি সরকারী কলেজ হতে ডিগ্রী পাশ করে। সে ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে সন্ধ্যাকালীন মাস্টার্স এ অধ্যায়নরত।

সৈয়দ রায়হানুল আহসান নাফিস ২০০৫ সালে তার নিজ জেলা ময়মনসিংহে জেএমবিতে যোগদান করে কাজ করতে থাকে। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে ময়মনসিংহ জেলার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কারণে সে আত্মগোপনে চলে যায় এবং ঢাকার নিউমার্কেট এলাকায় ছদ্মবেশে আশ্রয় নেয়। সেখানে একটি কম্পিউটার কম্পোজের দোকানে কাজ করা অবস্থায় অপর জেএমবি সদস্য গ্রেপ্তারকৃত আব্দুর রহমান ওরফে রুবেল ওরফে সুফিয়ানের সাথে তার পরিচয় হয়। এরপর আব্দুর রহমানের মাধ্যমে সে জসিম উদ্দিন রাহমানির কাছে যাতায়াত শুরু করে।

পরবর্তীতে ২০০৭ সালে জনৈক ‘স্যারের ’ মাধ্যমে আবারও জেএমবিতে সক্রিয় হয় এবং দাওয়াতি কাজ শুরু করে। কম্পিউটারের উপর দক্ষতার কারণে জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ের অনেক সদস্যদের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায়। ২০০৭-২০১৫ সাল পর্যন্ত সে মূল জেএমবির হয়ে ঢাকা অঞ্চলের দাওয়াতি ও সাংগঠনিক কাজ পরিচালনা করত। এর মধ্যে ২০০৭-২০১০ সাল পর্যন্ত তৎকালীন জেএমবির আমীর মাওলানা সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে কাজ করেছে। ২০১৫ সালের শেষ দিকে সে কথিত ‘স্যারের’ মাধ্যমে জেএমবির সারোয়ার-তামীম গ্রুপে যোগদান করে এবং চাকুরির অন্তরালে জঙ্গি সংগঠনটির সাংগঠনিক কাজ করতে থাকে। সে নিজ ঠিকানা গোপন করে বাগেরহাট জেলার ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০০৮ সাল থেকে অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকুরি করে আসছে। সে দীর্ঘদিন যাবৎ এই চাকুরির পাশাপাশি মূল জেএমবির ও পরবর্তীতে জেএমবি সারোয়ার-তামীম গ্রুপের দাওয়াতি, আইটি এবং গবেষণা শাখার একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করে আসছিল।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়,মোহাম্মদ ইমাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে রফিক ওরফে আবু উমামা আল বাহিরী ২০০৬ সালে হাজীগঞ্জ পাইলট হাই স্কুল থেকে এসএসসি, ২০০৮ সালে তেজগাঁও কলেজ ঢাকা থেকে এইচএসসি এবং ২০১৫ সালে ঢাকার একটি সনামধন্য বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পাশ করে। পরে একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে থাকে। ২০১৩ সালে জনৈক তাওহীদুল ইসলাম ওরফে আবু সাদের সাথে তার পরিচয় হয় এবং যার মাধ্যমে সে হুজির পক্ষে কিছুদিন দাওয়াতি কাজ করে। পরবর্তীতে জনৈক সাজিদ লাল ভাইয়ের সাথে পরিচয়ের সূত্রে জেএমবির সারোয়ার-তামীম গ্রুপে যোগদান করে। রাশেদ আবু উমামা ইতিপূর্বে র‌্যাবের কাছে গ্রেপ্তারকৃত জেএমবির সারোয়ার-তামীম গ্রুপের শরীয়াহ বোর্ডের প্রধান শায়েখ মামুনের সাথে ডেমরার মাদ্রাসায় নিয়মিত সাক্ষাত করত । সেখান থেকে হাতে লেখা জঙ্গিবাদী নোট নিয়ে কম্পিউটার কম্পোজ করে দিত বলে স্বীকার করেছে। এছাড়া সে ইতিপূর্বে গ্রেপ্তারকৃত শুরা সদস্য ইমরান আহমেদের বাসায় প্রায়ই অবস্থান ও গোপন বৈঠক করত এবং জঙ্গি হামলা সংক্রান্ত বিভিন্ন কলা-কৌশল ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে অন্য সদস্যদের মাঝে প্রচারের কাজ করত। রাশেদ ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র হওয়ার কারনে সংগঠনে তার অনেক গুরুত্ব ছিল। তার বেশ কিছু সহযোগী গ্রেপ্তার হওয়ার পর গত জুন মাসের প্রথম দিকে সে আত্মগোপনে চলে যায় বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।

ঢাকাটাইমস/২২আগস্ট/এএ/এমএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :