দুদকের মামলায় প্রাথমিক শিক্ষার দুই কর্মকর্তা-কর্মচারী ‘আত্মগোপনে’

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
| আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০১৭, ১৬:৩৮ | প্রকাশিত : ২৩ আগস্ট ২০১৭, ১৫:৪৯

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর পরীক্ষায় বৃত্তি নিয়ে জালিয়াতির ঘটনায় মামলা দায়েরের পর প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের রাজশাহীর দুই কর্মকর্তা-কর্মচারী ‘আত্মগোপন’ করেছেন। গত সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জালিয়াতির ওই মামলাটি দায়েরের পর সাবেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেমকে গ্রেপ্তার করেছে।

এরপর এ মামলার অপর দুই আসামি আত্মগোপন করেছেন। তারা হলেন- জেলার গোদাগাড়ী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রাখি চক্রবর্তী ও রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সোনিয়া রওশন।

পুলিশ বলছে, তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে, কিন্তু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের এই তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৫ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে তারা পরষ্পর যোগসাজস করে রাজশাহীর ৪০ শিক্ষার্থীর নম্বর বাড়িয়ে দিয়ে তাদের বৃত্তি পাইয়ে দিয়েছিলেন। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেমের মেয়েও ছিল।

বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে তদন্ত শুরু করে দুদক। তদন্ত করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরও। অধিদপ্তরের তদন্তে বেরিয়ে আসে, মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে রাজশাহীর শিমুল মেমোরিয়াল নামে একটি বেসরকারি স্কুলের অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিতে এই ফল জালিয়াতি করা হয়।

কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এই ফল জালিয়াতির মূলহোতা তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেম, বোয়ালিয়া থানার শিক্ষা কর্মকর্তা রাখি চক্রবর্তী ও তার অফিসের সহকারী সোনিয়া রওশন। এরপর তাদের শাস্তির দাবিতে ‘সুশিক্ষা আন্দোলন মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে অভিভাবকেরা আন্দোলন শুরু করেন।

পরবর্তীতে আবুল কাশেমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আর রাখি চক্রবর্তীকে শাস্তিমূলক বদলি হিসেবে গোদাগাড়ীতে পাঠানো হয়। তবে বহাল তবিয়তে ছিলেন সোনিয়া রওশন। এরই মধ্যে গত ৮ আগস্ট আবুল কাশেমের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে তাকে চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে সংযুক্ত করা হয়।

তবে গত সোমবার এই তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে নগরীর রাজপাড়া থানায় মামলা করেন দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী উপ-পরিচালক তরুণ কান্তি ঘোষ। এরপর ওই দিনই আবুল কাশেমকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে রাখি চক্রবর্তী ও সোনিয়া রওশন সেদিনই অফিস থেকে পালিয়ে যান। এরপর তারা আর অফিসে যাননি।

গোদাগাড়ী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মচারীরা জানান, গত সোমবার বিকালে রাখি চক্রবর্তী একটি মাইক্রোবাসে চড়ে অফিস থেকে চলে গেছেন। যাওয়ার সময় বলে গেছেন, তিনি তিন দিনের ছুটি নিয়েছেন। তবে তিনি কার কাছে ছুটি নিয়েছেন তা কর্মচারীরা জানেন না।

এদিকে বুধবার সকালে বোয়ালিয়া থানা শিক্ষা অফিসে গেলে সেখানেও অফিস সহকারী সোনিয়া রওশনকে পাওয়া যায়নি।

এ অফিসের প্রধান সহকারী কে.এম শামিম হোসেন জানান, গত সোমবারই সোনিয়া রওশন অফিস থেকে চলে গেছেন। পরবর্তীতে চিকিৎসার কারণ দেখিয়ে অফিসে এক মাসের একটি ছুটির আবেদন পাঠিয়েছেন।

ছুটি মঞ্জুর হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে বোয়ালিয়া থানা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সানাউল্লাহ কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক আবুল খায়ের বলেন, নাটোরের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাফিসা বেগম এখন অতিরিক্ত দায়িত্বে রাজশাহীতে আছেন। এ বিষয়টি তিনি বলতে পারবেন।

তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে গিয়ে নাফিসা বেগমকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটিও বন্ধ পাওয়া গেছে। তাই এ দুই কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি মঞ্জুর হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মুঠোফোন বন্ধ থাকায় রাখি চক্রবর্তী ও সোনিয়া রওশনের সাথেও এ ব্যাপারে কথা বলা যায়নি।

নগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, রাখি চক্রবর্তীর দেশের বাড়ি টাঙ্গাইলে। আর সোনিয়া রওশনের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বিদিরপুরে। থানায় মামলা হওয়ার পর তাদের বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাদের পাওয়া যায়নি। তারা আত্মগোপন করেছেন।

(ঢাকাটাইমস/২৩আগস্ট/আরআর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :