স্বাভাবিক জীবনে ফেরা দস্যুদের আহ্বান

বাগেরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৩ আগস্ট ২০১৭, ২২:৪৮

সুন্দরবন ও সাগরে দাপিয়ে বেড়ানো ১২টি জল ও বনদস্যু দলের ১৩২ জন সদস্যকে স্বাবলম্বী করতে সরকার তাদের আর্থিক সাহায্য করেছে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে দেয়া হয়েছে। ১৩২ জনকে মোট এক কোটি ৩২ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। তারা এই টাকা নিয়ে ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হওয়ার অঙ্গীকার করছে।

এক বছর আগেও সুন্দরবন ও সাগরের উপর নির্ভরশীল বিভিন্ন পেশার মানুষদের অপহরণ করে তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করা ছিল তাদের পেশা। এই ১২টি দল নিজ নিজ নামে বাহিনী গড়ে তুলে জেলেদের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা আদায় করত। এরমধ্যে সুন্দরবনের অন্যতম এক আতংকের নাম ছিল মাস্টার বাহিনী। তার বাহিনীর অব্যাহত অপহরণ ও চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট ছিল জেলেরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও এদের অপরাধ রোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। হঠাৎ করে মাস্টার বাহিনীর প্রধান কাসেম মাস্টার ও তার সহযোগীরা সুন্দরবনে দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন।

গত বছরের ৩১ মে মাস্টার বাহিনীর প্রধানসহ নয়জন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ তুলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। তার দেখা দেখি গত এক বছরে একে একে অন্য আরও ১২টি বাহিনীর সদস্যরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আত্মসমর্পণের পথ বেছে নেয়।

মৎস্যজীবী সমিতির নেতা, রফিকুল ইসলাম বাবুল বলেন, আমরা দস্যুদের হাতে জিম্মি ছিলাম। বনে ও সাগরে গেলে দস্যু বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায় করত। চাঁদা না দিলে আমাদের তারা মারধরসহ মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করে নিয়ে যেত। দস্যুতা ছেড়ে তাদের এই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসায় জেলে, বাওয়ালী, মৌয়াল, মহাজন ও আড়ৎদাররা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। তারা এখন বলছেন, এই বাহিনীগুলো দস্যুতা ছেড়ে দেয়ায় সুন্দরবন ও সাগরে চাঁদাবাজি অনেকাংশে কমে গেছে। অন্য যারা এখনো দস্যুতা করছে তারাও সরকারের উদ্যোগে সাড়া দেবে এমটাই আশা তাদের।

স্বাভাবিক জীবনে ফেরা মজনু বাহিনীর প্রধান মজনু বলেন, আমি আমার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে সরকারের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছি। আমি বর্তমানে স্বাভাবিক জীবনে পরিবার পরিজন নিয়ে ভাল আছি। স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনায় সরকারের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। বনে ও সাগরে যারা এখনো ডাকাতি করছে তাদেরও দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান ওই দস্যু নেতা।

র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপতায় ১২টি বাহিনীর ১৩২ জন অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করেছে। আত্মসমর্পণ, গ্রেপ্তার ও গোলাগুলিতে এ পর্যন্ত ৬০০ জন বনদস্যু মুক্ত হয়েছে সুন্দরবন। এদের কাছ থেকে প্রায় দেড় হাজার অস্ত্র, ৪০ হাজারের বেশি গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে। বনের উপর নির্ভরশীলদের সুন্দরবন হবে নির্বিঘ্ন। কোন অবস্থাতেই আমরা আর সুন্দরবনে বনদস্যুদের অস্ত্রবাজি করতে দেব না। তাদের দস্যুতা ছাড়তেই হবে।

বনে ও সাগরে যারা এখনো দস্যুতা করছেন তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সুন্দরবনে দস্যুতা করতে দেয়া হবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। তাই এখনো যারা বনে ও সাগরে দস্যুবৃত্তিতে আছেন তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন, সরকার আপনাদের সহযোগিতা করবে। আপনারও ভাল থাকেন দেশকেও ভাল থাকতে দেন। এখানে শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, এটা হতে পারে আধুনিক পর্যটনের স্থান। অপার সম্ভবনার দেশ বাংলাদেশ। পর্যটনের জন্য সুন্দরবন অপার সম্ভবনময়। পর্যটকদের জন্য যে সুন্দরবন আকর্ষণীয় স্থান হতে পারে। তাদের জন্য সুন্দরবনকে জল ও বনদস্যু মুক্ত করতে চাচ্ছি না আমরা সুন্দরবনকে একটি নিরাপত্তার চাদরে আবৃত্ত করব। সেজন্য পুলিশ বাহিনীকে শক্তিশালী করছি। আমাদের নৌপুলিশকে এখানে নিয়োজিত করা হচ্ছে। র‌্যাব আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করছে। তাদের পাশাপাশি কোস্টগার্ডকেও আরো শক্তিশালী করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে সুন্দরবনকে একটা নিছিদ্র নিরাপত্তার চাঁদরে আবৃত্ত করা হবে। বন ও সাগরের উপরের যাদের জীবিকা তাদের কথা চিন্তা করে এটা করা হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/২৩আগস্ট/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :