গাইবান্ধায় ডাকাত আতঙ্কে বানভাসিরা

জাভেদ হোসেন, গাইবান্ধা
 | প্রকাশিত : ২৪ আগস্ট ২০১৭, ১৪:৫০

গাইবান্ধার সাত উপজেলায় দ্বিতীয় দফায় ভয়াবহ বন্যার পর পানিবন্দি থেকে ধীর গতিতে মুক্তি পাওয়া প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ- বিশেষ করে চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলগুলোতে খাবার, ওষুধ ও গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

পাশাপাশি বেড়েছে সাপ, পোকামাকড় ও চোর-ডাকাতের আতঙ্ক। এতে করে ওইসব এলাকার মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। রাত জেগে বাড়ি পাহারা দিলেও ডাকাতদলের অস্ত্রের মুখে জিম্মি হয়ে শেষ রক্ষা করতে পারছেন না তারা। ফলে কম দামে গবাদি পশু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন এসব বানভাসি।

জেলা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহর। সেখান থেকে প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে দুর্গম চরাঞ্চল কাপাশিয়া ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে সাড়ে চার হাজার পরিবারে ১৬ থেকে ১৭ হাজার মানুষের বসবাস। এর মধ্য প্রায় চার হাজার পরিবারই পানিবন্দি ছিল।

বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেল, নদীর তীরবর্তী এলাকা হওয়ায় এই ইউনিয়নে শুধু পানি আর পানি। কাপাশিয়া ইউনিয়নের উত্তর দিকে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারি উপজেলার সীমান্ত এলাকা। পূর্বে একই জেলার রাজীবপুর উপজেলার মহনগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা, পশ্চিমে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চণ্ডিপুর এবং দক্ষিণে সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়ন।

ইউনিয়নটির কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেলো, প্রতিটি পরিবারে কমপক্ষে দুইটি থেকে ২০টি পর্যন্ত গরু আছে। গরুই হচ্ছে তাদের একমাত্র সম্বল। তারা সারা বছর গরু লালন-পালন করে বছর শেষে কোরবানির ঈদে এককটি গরু বিক্রি করে থাকে ৪০ থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

এই ইউনিয়নের ভাটিকাপাশিয়া গ্রামের কলেজছাত্র ইছাব উদ্দিন সরকারের ছেলে মাসুদ সরকার বলেন, আমি পড়ালেখার পাশাপাশি ১০টি গরু লালন-পালন করছি। আশা করছি, এবার কোরবানির ঈদের দুই তিনদিন আগে সবকটি বিক্রি করব। কিন্তু এখন যেভাবে ডাকাতের উপদ্রব শুরু হয়েছে, তাতে গরুগুলো নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি। আমার মতো গ্রামের সকলেই ডাকাত আতঙ্কে আছে।

তিনি বলেন, এই সুযোগে এলাকার কয়েকজন গরুর ব্যাপারী যে গরুর দাম বাজারে ৫০ থেকে ৬০ হাজার, সেই গরুর দাম তারা করছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। গরুর দাম একেবারেই কম বলছে তারা। আবার অনেকে বাধ্য হয়ে কমদামে তাদের কাছে গরু বিক্রিও করছে।

উজান বুড়াইল গ্রামের লালচাঁন ব্যাপারী বলেন, গরু চারডো ছাড়া হামার আর কিচ্চু নাই। ডাহাতের উৎপাতে রাইতোত জাগি থাকপ্যার নাগছি। কিনতো ডাহাতরা বন্দুক নিয়া আহে। গুলি কইরা গরু নাওত (নৌকা) তোলে। হামারা কিচ্চু করব্যার পাই না। পাইকার আইলে গরু চারডোর যে দাম হাকাইবো, হেই দামে বিকামু। যা পামু তাই লাব।

ইউনিয়নের লালচামার এলাকার ছালাম বলেন, বানের পানিত পোলাপান লইয়া খোপ (খুব) কসটে আচি। হামরা কি খাই, গরু নয়ডারে কি খাওয়াই। তার মদ্দে ফির ডাহাতের যন্তনা। পাকার (পাইকার) যে দাম কইব, হেই দামে সোগগুলা গরু বেচ্চা দিমু।

কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন সরকার বলেন, এই ইউনিয়নে প্রতিটি পরিবারের কমবেশি গরু আছে। তারা গরুর দুধ বিক্রি করে বাজারঘাট, ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগান। আর বছর শেষে কোরবানি ঈদ এলে বেশি দামে গরু বিক্রি করাই তাদের মূল পেশা। কিন্তু চরবাসীর মধ্যে বর্তমানে ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাই তারা কমদামে পশু বিক্রি করছে।

তিনি বলেন, গত রবিবার মধ্য রাতে দুইটি নৌকায় করে প্রায় ৩৫ জনের একদল ডাকাত কাজিয়ারচর গ্রামে এসে পৌঁছে। এসময় ডাকাতদল মানুষজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ইউনুস আলীর ৮টি, রহিম মিয়ার ৮টি, সামাদ মিয়ার ৬টি, ছকমল মিয়ার ২টি ও জামাল মিয়ার ১টিসহ ২৫টি গরু নৌকায় তুলে নিয়ে যায়। এসময় বাঁধা দিতে গিয়ে ডাকাতদলের গুলিতে ওই গ্রামের আজাহার মণ্ডল, তার ছেলে বিশা মণ্ডল ও মৃত হাতেম আলীর ছেলে রহম আলী গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাদের প্রথমে গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল ও পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

তিনি দাবি করেন, বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত প্রশাসন যদি চরাঞ্চলে পুলিশি টহল জোরদার করে তাহলে হয়তবা চরবাসী ডাকাতের হাত থেকে রক্ষা পাবে।

সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, নদী পথে টহল পুলিশ জোরদার করা হয়েছে। রবিবারের লুট হওয়া ২৫টি গরুর মধ্য জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ এলাকা থেকে ২৩টি গরু উদ্ধার ও সাইদুর রহমান নামে এক গাড়িচালক আটক করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, শিগগির বাকি গরু উদ্ধার ও ডাকাতদের আটক করা সম্ভব হবে।

পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, আপনারা জানেন- যমুনা নদী গাইবান্ধায় চার, পাঁচটা নদীর মোহনা, চার, পাঁচটা জেলা। বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে নৌ-ডাকাতরা ঢুকে পড়ে। তারপরেও আমরা সর্বদা চরাঞ্চলের বানভাসি মানুষের জানমাল রক্ষার জন্য পুলিশি টহল চালিয়ে আসছি। গত তিন দিনের ব্যাবধানে চরাঞ্চলে পরপর দুইটি ডাকাতি হওয়ায় নদী পথে সবগুলো চরে পুলিশি টহল আগের চেয়ে আরও অনেক বেশি জোরদার করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৪আগস্ট/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :