পাকুন্দিয়ায় বন্যায় তলিয়ে গেছে ফসলি জমি

পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৪ আগস্ট ২০১৭, ১৯:৩৪

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ব্র‏হ্মপুত্র নদের পানি বেড়েছে। এতে ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। তীব্র ভাঙনে বসতবাড়ি বিলীন হতে চলেছে। নদের পানি বেড়ে যাওয়ায় হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। এসব ফসলি জমিতে পাট, মরিচ, পটল, ঝিঙা, ধন্দুল, চিচিংগা, বেগুন, কাঁচকলাসহ বিভিন্ন প্রকার শাকসবজির আবাদ ছিল।

এতে করে উপজেলার জাঙালিয়া ইউনিয়নের চরকাওনা গ্রামের শত শত চাষি সর্বশান্ত হয়ে পড়ছেন। কেননা চরাঞ্চল খ্যাত ওই এলাকার সবজি এলাকার চাহিদা পূরণ করে সরবরাহ হতো রাজধানীসহ সারাদেশে।

এদিকে ব্র‏হ্মপুত্র নদের পানি বাড়ার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। এতে চরকাওনা ও চরফরাদি ইউনিয়নের চরটেকী মধ্যপাড়া গ্রাম বিলীন হতে চলেছে। প্রতিদিনই ভাঙনে বসতবাড়ি বিলীন হচ্ছে।

সরেজমিনে চরকাওনা ও চরটেকি গ্রামে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন তাদের বসতবাড়ি, তলিয়ে যাওয়া ফসল দেখিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বিলাপ করতে থাকেন।

চরকাওনা গ্রামের সবজি চাষি মো. আসাদ মিয়া বলেন, তিনি ৫০শতক জমিতে মরিচ ও বেগুন চাষ করেছিলেন। এতে তার প্রায় ৩৫থেকে ৪০হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যার মধ্যে ১৫হাজার টাকা সুদে ঋণ নেয়া। কিন্তু মরিচ তোলার আগেই নদের পানিতে তা তলিয়ে গেছে। পানির মধ্যে একবার মরিচ তোলে পাঁচ হাজার টাকা বিক্রয় করতে পারছিলেন। কিন্তু এখন পানিতে তলিয়ে গাছ পচে গেছে। এতে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়ছেন। কিভাবে ঋণ শোধ করবেন, কিভাবেই সংসার চালাবেন আর ছেলেমেয়েদের খাতা-কলমই বা কিনে দেবেন কিসে বলেই কেঁদে ফেলেন তিনি।

একই গ্রামের তোফাজ্জল জানান, ২০ কাঠা জমিতে তিনি বেগুন ও মরিচ চাষ করেছেন। কিন্তু নদের পানিতে তা তলিয়ে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

ইছাম উদ্দিন নামে অপর এক কৃষক জানান, ১০ কাঠা জমিতে তিনি পাটের চাষ করেছিলেন। যার সবটুকুই পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।

আবদুল কদ্দুছ নামে এক কৃষক বলেন, দেড় একর জমিতে বেগুন, মরিচ ও ধন্দুল করেছেন। কিন্তু সবই পানিতে শেষ। তাদের মতোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সর্বশান্ত হয়ে গেছেন একই এলাকার সবজি চাষি নজরুল ইসলাম, আবদুল কদ্দুছ, আজিজুল, জলিল, আবদুল হাই, মতলব, সালাম, বোরহান, তোফাজ্জল, বিল্লাল হোসেন, চাঁন মিয়া, সোহেল ও হুমায়ুনসহ পাঁচ শতাধিক কৃষক।

এছাড়াও চরকাওনা গ্রামের নূরেন্নবী, ইসলাম ও মফিজুল ইসলাম দুলাল দীর্ঘদিন ধরে বাণিজ্যিকভাবে তুলা চাষ করে আসছেন। কিন্তু সম্প্রতি নদের পানিতে তাদের তুলা জমির পঞ্চাশ একরের মধ্যে অধিকাংশই পানিতে তলিয়ে গেছে। বাকি জমিও তলিয়ে যাওয়ার পথে।

তারা জানান, ব্যাংক থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নেয়া। কিন্তু জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তারা সর্বশান্ত হয়ে পড়ছেন। ব্যাংক ঋণ কিভাবে শোধ করবেন না নিয়েও চিন্তিত তারা। তারা তুলা উন্নয়ন বোর্ড এর ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে ঋণ মওকুফের জন্য অনুরোধ করেন।

এদিকে ব্র‏হ্মপুত্র নদের ভাঙনে চরকাওনা গ্রামের খুরশিদ উদ্দিনের ফসলি জমি, মুরগির ফার্ম, নলকূপ, ল্যাট্রিন ও বাঁশের ঝাঁড় তলিয়ে গেছে। দু-একদিনে মধ্যে বসতবাড়ি নদে বিলীন হয়ে যাবে বলে আর্তনাদ করতে থাকেন তিনি। তার মতই বিলীন হওয়ার পথে আলগীরচর গ্রামের আরো বেশ কয়েকজনের বসতবাড়ি।

অপর দিকে পাশাপাশি চরফরাদি ইউনিয়নের চরটেকী মধ্যপাড়া গ্রামে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। নদের ভাঙনে এ গ্রামের ১৫টি বসতবাড়ি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

চরফরাদি ইউপি চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ইউএনও মহোদয়কে নিয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের তালিকা করা হয়েছে। সরকারি বরাদ্দ পেলে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রেনু জানান, ইতোমধ্যে স্ব-স্ব ইউপি চেয়ারম্যানকে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে সহযোগিতা করার জন্য বলা হয়েছে। মাসিক সভায় বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২৪আগস্ট/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :