হলের মেয়েদের পোশাক বিতর্ক, একটি সাংস্কৃতিক তালাশ

শেখ আদনান ফাহাদ
 | প্রকাশিত : ২৫ আগস্ট ২০১৭, ১৮:৪৩

নীলক্ষেত গাউসুল আযম মার্কেটে মেয়েদের পোশাকের একটি দোকান দেয়া হলো। তখন মার্কেট কেবল শুরু। সে অনেক বছর আগের কথা। স্যার এ এফ রহমান হল থেকে অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি, দাড়ি কামানো, চা-বিস্কুট কিংবা রাত-দুপুরের খাওয়াসহ নানা কাজে আসতে হয় এখানে। যে দোকানে টাইপের কাজ করাই, এর বিপরীতেই মেয়েদের পোশাক তৈরির দোকান। অন্য ব্যবসায়ীরা যেখানে কাজের কমতি দেখে শুরুর দিকে খানিকটা হতাশ, সেখানে মেয়েদের দর্জির দোকানে দিন দিন ভিড় বাড়তে থাকল। চোখের সামনে ছোট দোকান বড় হয়ে গেল। এখন মনে হয় মেয়েদের জামা বানানোর তিন/চারটা দোকান আছে সেখানে।

একদিন এক মেয়েকে জিজ্ঞেসই করে ফেললাম। জিজ্ঞেস করার আগে বললাম, ‘আপনি রাগ না করলে আমি একটা প্রশ্ন করতে চাই’। আমার চেহারা দেখে মেয়েটি খারাপ কিছু মনে করল না।

নির্ভয় পেয়ে বললাম, ‘আচ্ছা আপনি বছরে কয়টা কাপড় বানান! প্রশ্নটা কেমন জানি বোকার মতো হয়ে গেল! কিন্তু কী আশ্চর্য! মেয়েটি উত্তর দিল, ‘আমি ৩/৪ মাস পরপরই নতুন জামার অর্ডার দিই’। আমি শুধু বললাম, ‘ও আচ্ছা, খুব ভালো!’ আমি কাঙ্ক্ষিত উত্তর পেয়ে ধন্যবাদ দিয়ে মেয়েটির সাথে বাতচিতের সেখানেই সমাপ্তি টানলাম।

তিন/চার মাস পরপর নতুন জামা! নিজেকে খুব দুর্ভাগা মনে হলো। আমার মতো অনেকে তো বছরে একবারের বেশি জামা পরিবর্তনের সুযোগ পাইনা, ইশ মেয়েদের কী মজা! আবার এমনও মনে হতো তখন যে, মেয়েদের পোশাকের ব্যবসা করলে মন্দ হয় না, কাজ শেষ হবে না কোনোদিন, জমিয়ে ব্যবসা করা যাবে! ছাত্রজীবনের কথা বলছিলাম এতক্ষণ। ছেলে হয়ে মেয়েদের পোশাক নিয়ে এতগুলো কথা বললাম, ঠিক যেন লিঙ্গ-ভারসাম্য থাকল না। ছেলেদের পোশাক নিয়েও বলব। পোশাক নিয়েই আজ কথা হবে।

বাঙালির পোশাক, পোশাকি প্রগতি, প্রগতির পোশাক, সাহসী পোশাক, রক্ষণশীল পোশাক, শালীন কিংবা অশালীন, সব পোশাক নিয়েই কথা বলতে হবে। পোশাকি না হলেও, পোশাক নিয়ে এ আলোচনায় যদিও নারীর পোশাক নিয়েই বেশি কথা হবে। ছেলে-মেয়েদের পোশাক দেখে বাংলাদেশে সংস্কৃতির একটি দিকের পরিবর্তন সম্পর্কে দ্রুত ধারণা পাওয়া যায়।

বদন-কিতাবে (ফেসবুকে) আমার ছাত্রের এক পোস্টে দেখলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলে মেয়েদের পোশাক নিয়ে একটি নোটিশ; যদিও সেই নোটিশে কর্তৃপক্ষের কোনো স্বাক্ষর নেই, সিল নেই। কিন্তু বদন-কিতাবের পৃথিবী এমনই অস্থির যে, এখানে কেউ কারো স্বাক্ষরের অপেক্ষা করে না। সাথে সাথে প্রতিক্রিয়া দেখানো শুরু। সেই দস্তখতবিহীন এতিম ‘নোটিশে’ বলা হয়েছে, সালোয়ার এর উপর টি-শার্ট এর মতো ‘অশালীন’ পোশাক পরে কোনো ছাত্রী হল অফিসে আসা বা ঘোরাফেরা করতে পারবে না, নিচে লেখা ‘আদেশক্রমে কর্তৃপক্ষ’ শব্দযুগল ছাড়া আর কোনো কিছু লেখা নেই। বদন-কিতাবে গরম হয়ে গেল, বড় বড় সাংবাদিক পোস্ট দেয়া শুরু করলেন। দেশের শীর্ষ সংবাদপত্রগুলো নিউজ করল।

এই নোটিশ আদৌ হল কর্তৃপক্ষ দিয়েছে কি না, সে যাচাইটুকু অনেককেই করতে দেখা গেল না। তবে কেউ কেউ দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা করেছে। হল কর্তৃপক্ষ নোটিশ দেয়নি বলে দাবি করে স্বাক্ষরসহ আরেকটি নোটিশ দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণহীন শক্তির সুযোগ নিয়ে কেউ নাশকতাও করতে পারে, এ সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এক ঢিলে অনেক পাখি মারা হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। এই সুযোগে কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘মাদ্রাসা’ বলে গালি দিয়েছেন, কেউ প্রশাসনকে ‘অন্ধকারের শক্তি’ বলে বর্ণনা করে রাজনৈতিক বিরোধিতার শোধ নিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘উপাচার্য’ পদ নিয়ে একদল শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, সুশীল সমাজের একাংশ আর এক শ্রেণির গণমাধ্যম যেভাবে নোংরামি শুরু করেছে তাতে যেকোনো ধরনের ষড়যন্ত্র আর নাশকতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। মেয়েরা ক্ষেপে গিয়ে প্রশাসনবিরোধী মিছিল বের করলে অনেকেই মজা নেবেন, পরিস্থিতি ঘোলাটে করে বড় মাছ শিকার করতে পারবেন, এমন কুবুদ্ধিও থাকতে পারে, এই বেওয়ারিশ নোটিশের পেছনে। যে কেউ ষড়যন্ত্র করতে পারে। এর আগে আনন্দবাজার পত্রিকার রিপোর্ট হয়েছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাকি সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর!

যাইহোক, তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে শুনলাম। যারা যারা সত্যতা যাচাই না করে, স্বাক্ষরবিহীন এই নোটিশ ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে তাদেরকে ডেকে শুনলেই তদন্ত কমিটির সামনে বিষয়টা পরিষ্কার হতে পারে। যাইহোক, হলে মেয়েদের পোশাক সংক্রান্ত বিতর্কে আমিও একটা লেখার উপকরণ পেয়ে গেলাম। প্রগতিশীলতার সংজ্ঞা কত প্রকার ও কী কী, সেটি ভাবলে অবাক হতে হয়। আমি কেতাবি ভাষায় কথা বলি খুব কম। আমি জীবন থেকে নেয়া নানা অভিজ্ঞতা মানুষের সাথে শেয়ার করি।

বিশ্ববিদ্যালয় বাসে করে একবার ময়লা-আবর্জনার শহর ঢাকা থেকে সুন্দর-সবুজ জাহাঙ্গীরনগর যাচ্ছি। ভর্তি পরীক্ষার মৌসুম। পরীক্ষার হলে, শ্রেণিকক্ষে মেয়েদের মুখ ঢেকে রাখা নিয়ে কথা উঠল। পরীক্ষার হলে কান, মুখ ঢেকে রাখলে নানাবিধ সংকট দেখা দেয়। কেউ কানে ডিভাইস লাগিয়ে দুনম্বরি করলে ধরা যাবে না। আবার বিষয়টি ধর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট। আবার ধর্মই আমাদের স্বচ্ছতা, সততা আর জবাবদিহিতার শিক্ষা দেয়। সেই শক্তিতে আমি পরীক্ষার হলে কাউকে কান-মুখ ঢেকে পরীক্ষা দিতে দিই না।

প্রগতিশীল বলে পরিচিত একজন নন-মুসলিম অধ্যাপক বাসে ছিলেন সেদিন। উনি যা বললেন, তাতে আমার বিস্ময় আসমান স্পর্শ করল। উনি বললেন, কান-মুখ’ পর্যন্ত ঢেকে চলাফেরা করা মুসলিম মেয়েদের ‘গণতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মীয়’ অধিকার এবং তিনি সেই অধিকার সমর্থন করেন! এখানে খেয়াল করুন, এই অধ্যাপক শুধু মুসলিম মেয়েদের ‘চোখ-মুখ ঢেকে রাখার’ অধিকারের কথা বললেন। আমি বললাম, স্যার ভালোই ‘প্রগতিশীলতা’ শেখালেন আজ। মুসলিম মেয়েরা দিন দিন অবরোধবাসিনী হয়ে নিজের জীবনে ও সমাজে স্থায়ী অন্ধকার ডেকে আনবে আর অন্যরা মুক্ত বিহঙ্গের মতো স্বাধীন চলাফেরা করবে, এমনটাই কি আপনি চাচ্ছেন না? বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ পবিত্র ইসলাম ধর্মের অনুসারী। ইসলাম কখনোই অকর্মা, অনুৎপাদনশীল মানুষকে প্রশ্রয় দেয়নি। ভোরের প্রার্থনা শেষ করে, যার যার কাজে বেরিয়ে পড়তে আদেশ করেছে ইসলাম।

এক ভয়ংকর, চাপা সাম্প্রদায়িতকতা থেকে অধ্যাপক মহোদয় এমন কথা বলেছেন, সেটি বুঝতে আমার অসুবিধা হলো না। সমাজে একশ্রেণির বুদ্ধিজীবীর উদয় হয়েছে যারা ধর্মান্ধদের সাথে গলা মিলিয়ে কথা বলে মুসলমানদেরকে শিক্ষা-বিজ্ঞান থেকে দূরে রেখে সামরিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করার ষড়যন্ত্র করছে। এই শ্রেণির ‘বুদ্ধিজীবী’গণ খুব খতরনাক। কাঠমোল্লারা আবার এই বুদ্ধিজীবীদের ‘পরিবর্তন’ দেখে বিপ্লবের বেশি দূরে নয় ভেবে শোকরিয়া আদায় করেন। ধর্ম সহজ হলেও ধর্মের রাজনীতি বেশ কঠিন।

বাঙালি জাতীয়তাবাদের শক্তিতে বাংলাদেশ রাষ্ট্র স্বাধীন হলেও বাঙালির সাংস্কৃতিক বৈশিষ্টসমূহ আজ পর্যন্ত চিহ্নিত করা বা নির্ধারিত করা সম্ভব হয়েছে কি? আমরা কী চাই, কীভাবে চাই, কেন চাই, এর একইরকম উত্তর সবার ভেতরে আছে কি? শুধু বাঙালি বলে কথা শেষ করারও জো নেই। কারণ বাংলাদেশের বাঙালি আর ভারতের বাঙালি এক নয়, আচরণে, চিন্তায়, সম্প্রদায়গত ও সাম্প্রদায়িক চিন্তা-দর্শনে পরিষ্কার সব ব্যবধান রয়েছে। আবার বাংলাদেশের হিন্দুদের বড় একটা অংশ যেমন বাংলাদেশি বাঙালি হওয়ার চেয়ে হিন্দু হয়ে থাকতে বেশি পছন্দ করেন, মুসলমানদেরও বড় একটা অংশ নিজেদেরকে বাঙালি ভাবার চেয়ে আরবের মুসলমান হয়ে দিন গোজরান করেন। তাইতো কোন লেখক যেন লিখেছিলেন, বাংলাদেশে আপনি হিন্দু পাবেন, মুসলমান পাবেন, কিন্তু বাঙালি পাবেন না। বাংলাদেশের হিন্দুরা দিন দিন হিন্দু হচ্ছে আর মুসলমানরা দিন দিন মুসলমান হচ্ছে, এ কথা বললে বাড়িয়ে বলা হয়না। ভারতে যেমন শিবসেনা শক্তিশালী হচ্ছে, বাংলাদেশেও ধর্ম-ভিত্তিক সংগঠনগুলোর প্রভাব বাড়ছে। বাংলাদেশে হেফাজতে ইসলামের কর্মকাণ্ড বাড়ছে, আবার কট্টরপন্থী হিন্দুদের সংগঠন হিন্দু মহাজোট অনেক তৎপরতা দেখাচ্ছে।

বহু বড় বড় পণ্ডিতকে জিজ্ঞেস করেছি, বাঙালি সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যগুলো এক নিঃশ্বাসে বলতে পারেন না। শেষ পর্যন্ত না পেরে এমনও বলেছে যে, ধর্ম আর সংস্কৃতি নাকি এক নয়! পূজাকে বাঙালি সংস্কৃতি বলে চালিয়ে দেয়া গেলেও, ঈদ-রমজানকে বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হিসেবে মানতে এখনো আমরা নিজেদের প্রস্তুত করে তুলতে পারিনি। অথচ এদেশের ৯০ ভাগ মানুষের ধর্ম ইসলাম। এই বাঙালি মুসলমানরা ভাষা আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ভাষা-ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের শক্তিতে একটি রাষ্ট্র স্বাধীন করে ফেলেছে। এত কিছুর পরেও একজন মুসলমান কীভাবে বাঙালি হতে পারেন, এ নিয়ে কিছু মানুষ এখনো তর্ক করেন। খুব কঠিন এই সমীকরণ। পহেলা বৈশাখকে বলা যায়, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালির একমাত্র উৎসব। পহেলা বৈশাখের উদযাপন ধরণ নিয়েও এদেশে একশ্রেণির মানুষের যথেষ্ট গাত্রদাহ রয়েছে। এমন একটা বিচিত্র দেশে মেয়েদের-ছেলেদের পোশাক নিয়ে, প্রগতিশীলতা নিয়ে , আধুনিকতা-উত্তরাধুনিকতা নিয়ে ধোঁয়াশা কিংবা বিতর্ক থাকবে, স্বাভাবিক।

একসময় আমরা শার্টের দুইটা বোতাম খোলা রাখাকেও বেয়াদবি বলে মনে করা হতো, এখন হলিউড আর বলিউড গণমাধ্যমের বদৌলতে দেখি, ছেলেরা ভেতরে টি-শার্ট পরে উপরে শার্টের সবগুলো বোতাম খোলে ক্লাস করে, পরীক্ষা দেয়। একসময় চুল বড় রাখা কিংবা চুল নিয়ে বাড়তি কোনো কাটিং দেয়া ছিল বেয়াদবি আর বখাটেপনার লক্ষণ। আর এখন, আমরা বাবা-মায়েরা নিজেরাই উদ্যোগী হয় ছেলে-মেয়ের চুলের বাড়তি যত্ন নিই। আগের মতো বাটি ছাঁট আর দেয়া হয় না এখন, সন্তানের চুল স্পাইক হবে না নেইমার কাট হবে এ নিয়ে এখন বাবা-মায়েরা ঝগড়া করেন। আগে হিন্দি সিনেমা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা হতো, এখন বাবা-মা, ছেলে-মেয়েরা একসাথে বিয়েতে, গায়ে হলুদে হিন্দি আইটেম সং ছেড়ে নাচেন। অনেক মেয়ে মাথায় হিজাব পরে, আবার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সবার সেরা। অনেক মেয়ে বোরকা পরে ঠিকই কিন্তু খেলাধুলায় সবার আগে। আবার অনেক মেয়ে আছে নিয়মিত প্যান্ট-শার্ট পরে, এমনকি সিগারেটও খায় কিন্তু না পড়াশোনায় ভালো, না খেলাধুলা বা অন্য কোনো কো-কারিকুলাম কর্মকাণ্ডে ভালো। তাহলে প্রগতির অর্থ কী? কে তাহলে প্রকৃত অগ্রসর? পোশাক কি তাহলে প্রগতির একমাত্র স্মারক হতে পারে?

বিশ্ববিদ্যালয় মানবসমাজের বাইরের কিছু না। বিশ্ববিদ্যালয় সমাজ পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখলেও, ভুলে গেলে চলবে না সমাজ থেকেই উদ্যোগ নিয়েই কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমাজের নানা শ্রেণির মানুষ পড়তে আসে। সাধারণ স্কুল, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এবং মাদ্রাসা, অর্থাৎ সব টাইপের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা থেকে এখানে ছেলে-মেয়েরা পড়তে আসে। সাধারণ স্কুলের ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বিরাট হুজুর বনে যেতে দেখেছি, আবার মাদ্রাসার ছেলেকে দাড়ি-টুপি ফেলে জিন্স প্যান্ট আর গোল্ডলিফ ফুঁকে অনেক স্মার্ট হয়ে যেতে দেখেছি। গ্রামের মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে প্যান্ট-শার্ট ধরতে দেখেছি। আবার শহরের মেয়েকে সবসময় একইরকম থেকে দারুণ সুন্দর সময় কাটাতে দেখেছি। মাদ্রাসায় পড়ে তারেক মাসুদ চলচ্চিত্র বানিয়েছেন, আবার নর্থ সাউথে পড়ে কিছু ছেলে-মেয়েকে আমরা জঙ্গি হতে দেখেছি।

দেশে খুব পরহেজগার, বিদেশে গিয়ে প্রথম চান্সেই নাইটক্লাব কিংবা পাব এ গমন করেন, এমন অনেক বাংলাদেশি বাঙালি দেখেছি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যেমন পড়েন, আবার ঘুষ খাওয়ার সময়ও একনম্বর, এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। শাড়ি পড়েন, কপালে নিয়মিত টিপ দিতে ভুলেন না, কিন্তু ভয়াবহ ধান্দাবাজ, এমন নারীর সংখ্যাও অনেক। বোরকা পড়ে যে নারী চুরি করে ধরা পড়েন, তাকে আপনি পরহেজগার বলবেন? কান-মুখ ঢেকে যে মেয়ে পরীক্ষার হলে এসে অসুদপায় অবলম্বন করে তাকে আপনি পবিত্র বলবেন?

আমাদের ছেলে-মেয়েদের পোশাক কী হবে, এরা কী খাবে, কী ভাববে, কী করবে, তার কোনো পথনির্দেশ আমরা করতে পারিনি। আমাদের নিজস্ব কোনো গণমাধ্যম সমাজকে স্থানীয় সংস্কৃতি আর মূল্যবোধের স্পর্শে গড়তে পারছেনা। ইংরেজি-হিন্দি সিনেমা, নাটক-বিজ্ঞাপন ছাড়া আমাদের যেটুকু আছে তার বেশিরভাগই গতানুগতিক নেতিবাচক সাংবাদিকতা। রাজনীতিবিদ কিংবা সরকারি চাকুরে, সবাই আছে বাড়তি উপার্জনের তালে। এমন বেপরোয়া, গন্তব্যহীন ও ভোগবাদী সমাজে টি-শার্ট, সালোয়ার ও ধর্ম-অধর্ম নিয়ে বিতর্ক হবে স্বাভাবিক।

শেখ আদনান ফাহাদ: লেখক ও শিক্ষক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :