ঈদের ছুটি কমপক্ষে পাঁচ দিন করা হোক

শেখ আদনান ফাহাদ
 | প্রকাশিত : ২৬ আগস্ট ২০১৭, ১৩:৪২

ঈদ হবে সেপ্টেম্বর মাসের দুই তারিখ, শনিবার, সাপ্তাহিক বন্ধের দিন। আগের দিন শুক্রবার, এদিনও সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে। অর্থাৎ এভাবে ভাবলে, ঈদের ছুটি থাকছে শুধু একদিন। রবিবার। তার উপর এবার বন্যা, জলাবদ্ধতা, পাহাড় ধস সব মিলিয়ে রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করবে, মানুষের কষ্ট কমানোর জন্য; কিন্তু কষ্ট কমবে না। তাই অনুরোধ, এবার ঈদের ছুটি কমপক্ষে পাঁচ দিন করা হোক। সরকারি-বেসরকারি সবার জন্য। এতে জনগণ এবং সরকার, সবারই লাভ হবে। সরকারের লাভই বেশি হবে বলে মনে করি।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর ঠিকাদার-প্রকৌশলীদের দুর্নীতি, একযোগে এবার রাজধানীসহ সারাদেশে রাস্তাঘাটের অনেক ক্ষতিসাধন করেছে। বন্যার প্রকোপ বাড়ার আগে বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে অনেক মানুষ মারা গেছে। চট্টগ্রাম শহর ও পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার সাথে রাজধানীর যোগাযোগব্যবস্থা অনেক কষ্ট করে সেনাবাহিনী মেরামত করেছে। ঢাকা-দিনাজপুর রেললাইনে বন্যায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। দিনাজপুরে তিন ধরে বন্যার পানিতে ডুবে থাকায় প্রায় ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত রেললাইন দেবে গেছে। রেল কর্তৃপক্ষ দিনরাত পরিশ্রম করছে রেল যোগাযোগ পুনরায় শুরু করতে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, ঈদ-উল-আযহার আগেই রেল যোগাযোগ পুনঃস্থাপিত হবে।

রেল কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা নিয়ে আমাদের কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু মানুষ অপেক্ষা করবে না, সড়ক পথ বেছে নিতে শুরু করেছে। বাসের আসন সংকট হতে পারে। বন্যার ফলে সড়ক পথও দেশের অনেক স্থানে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নৌপথও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বিপদজনক হয়ে উঠেছে। নদ-নদীর পানি বেড়ে গেছে, লঞ্চ, স্টিমারগুলো কিছুটা হলেও ধীরগতিতে চলবে। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই কত দুর্ঘটনা ঘটে। আর এবারতো একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি।

এমন তো নয় যে, রাজধানী ঢাকা এবং অন্যান্য শহর থেকে যারা গ্রামে কিংবা অন্য শহরে ঈদ করতে যাবেন, তাদের সবার বাড়ি একেবারে মহাসড়কের পাশে। বিশেষ করে যারা গ্রামে ঈদ করতে যাবেন, তাদের অনেকের বাড়ি মূল সড়ক থেকে ২০/৩০ কিলোমিটার দূরে। অনেকের বাড়ি যেতে স্টেশনে নেমে আবার নতুন করে বাস ধরতে হয়। লোকাল বাসে গিয়ে নদীর কিংবা বিলের ঘাটে নৌকার জন্য অপেক্ষা। সন্ধ্যার আগে ঘাটে পৌঁছাতে না পারলে নৌকা না নিয়েই চলে যাবে। বউ-বাচ্চা নিয়ে সে যাত্রা কতখানি অনিশ্চিত আর বিপদসংকুল হতে পারে তা নিশ্চয় রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের অজানা থাকার কথা নয়। সকলেই আমরা গ্রামের সন্তান। তাই এবার ঈদে একটু অন্য ভাবনার যথেষ্ট সুযোগ আছে।

ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহে যেতেও ইদানীং ৫/৬ ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। কয়দিন আগেই দেখলাম, কুমিল্লা সড়কে ২৭ কিলোমিটার লম্বা যানজট! এক সহকর্মী পোস্ট দিয়ে জানালেন, ভোর সকালে রওয়ানা দিয়ে তিনি কুমিল্লায় পৌঁছেছেন বিকাল বেলায়! ঈদের এক/দুদিন আগে যখন হাজার হাজার গাড়ি পাল্লা দিয়ে ঢাকা ছাড়তে চাইবে, তখন কী অবস্থা হবে ভাবলে ভয় লাগে। ঢাকা থেকে বের হতেই লাগে ২/৩ ঘণ্টা। আর যারা উত্তরবঙ্গ, খুলনা, সাতক্ষীরা, টেকনাফের মত দূরবর্তী অঞ্চলে যাবেন তাদের কী দশা হয় তাতো আমরা প্রতিবছরই দেখি। ১০/১২ ঘণ্টা ভ্রমণ করা যায়, কিন্তু অনেক স্থানে পৌঁছাতে ২৪ ঘণ্টাও লাগে। আরিচা ঘাটেই অনেকের সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়।

মরতে মরতে কোনোমতে বেঁচে গিয়ে যখন বাড়ি পৌঁছানো হয়, তখন ঈদ উদযাপন করবে, না কি পুনরায় অফিস করতে ঢাকায় ফেরত আসার প্রস্তুতি নেবে সেটিই ভেবে পায় না লোকজন। সামান্য সংখ্যক মানুষ বাংলাদেশে বিমানে ভ্রমণ করে। প্রাইভেট গাড়ি কিংবা ভাড়া করা গাড়িতে যাতায়াতকারী মানুষও সংখ্যায় কম। এসি বাসেও সবাই সিট পায় না বা আর্থিক সামর্থ্য থাকে না। এই প্রচণ্ড গরমে নন-এসি বাসে ভ্রমণ করতে করতে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঈদ তাই অনেকের কাছে একটা বাধ্যবাধকতা, উৎসবের পর্যায়ে পড়ে না।

এবার ঈদ ছুটি শুরু হবে শুক্রবার থেকে। অর্থাৎ বৃহস্পতিবার লাখ লাখ মানুষের অফিস করতে হবে। এমনিতে সাধারণ বৃহস্পতিবার ঢাকার অবস্থা কী হয়, সেটি আমরা সকলেই জানি। তাই সরকার বাহাদুরের কাছে আমাদের আকুল আবেদন, এবার ঈদের ছুটি পাঁচ দিন করা হোক। তাহলে মানুষ কিছুটা হলেও শান্তিতে ঈদ করতে পারবে। পুলিশের কাজও সহজ হবে। মানুষ হাতে কিছুটা সময় নিয়ে বাড়িঘরে থেকে স্বস্তি নিয়ে আবার ঢাকায় আসার তোরজোড় করতে পারবে। দেশের অর্থনীতির তেমন কোনো ক্ষতি হবে বলে আমার মনে হয় না। যদি ক্ষতি হয়েও যায়, পরে কাজ করে পুষিয়ে নেয়া যাবে। মনে শান্তি থাকলে কাজের গতি বেড়ে যায়।

রাজনীতিতে ভালো করতে উন্নয়ন আর কাজই একমাত্র পন্থা নয়। মানুষের ফিলিংস বুঝতে পারাও বড় ব্যাপার। আওয়ামী লীগ সরকার গত আট বছরে ক্ষমতায় থেকে দারুণ সব অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছে। উন্নয়নের প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে অগ্রগতি অর্জন করেছে। এরপরেও যখন বন্যা, জলাবদ্ধতা বা যানজট হয়, মানুষ সব ভুলে যায়। চোখের সামনের কষ্টই তখন প্রধান হয়ে উঠে। সাধারণ মানুষ এমনই।

বর্তমানের কঠিন সংগ্রামে এমনই নাকাল হতে হয় যে, সামষ্টিক বিকাশ বা উন্নয়নের গতি বুঝে উঠা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়না। দীর্ঘ যানজট হলে, বাস-ট্রাক, লঞ্চ দুর্ঘটনায় মানুষ মারা গেলে মানুষ প্রথমেই সরকারের উচ্চমহল নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলে।

সামনে ২০১৯ সাল, আরেকটা জাতীয় নির্বাচন। গত আট বছরের নানা সাফল্যের সুখানুভূতিকে দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী করতে তাই বর্তমানকেও শান্তিময় করার প্রয়োজনীয়তা আছে। ঈদ নিয়ে ঝামেলা হলে, মিডিয়া শোরগোল তুলবে। কিছু মিডিয়া শুধু মানুষের কষ্টই দেখাবে বারবার। সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চাইবে। এদের জন্য বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ মাধ্যমকেও সরকার সহ্য করতে পারবে না। তাই সব দিক বিবেচনায় নিয়ে এবারের ঈদের ছুটি পাঁচ দিন করার দাবি জানাচ্ছি।

লেখক: শিক্ষক ও সাংবাদিক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :