নৌকা ছাড়া গতি নেই: শেখ হাসিনা

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে
| আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০১৭, ২০:৩২ | প্রকাশিত : ২৬ আগস্ট ২০১৭, ১৭:৩৬
গাইবান্ধায় বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী

আবারো দেশবাসীকে নৌকা প্রতীকের ওপর আস্থা রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দুর্যোগ-দুর্ভোগে নৌকা ছাড়া কোনো গতি নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখন সরকারে থাকে তখন দেশের মানুষ ভালো থাকে। আপনারা ভালো থাকতে আবারো নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন।’

শনিবার বিকালে বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রি বিতরণকালে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। সারিয়াকান্দি ডিগ্রি কলেজ মাঠে এ উপলক্ষে জনসভার আয়োজন করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও মানুষের পাশে দাঁড়ায়, ক্ষমতার বাইরে থাকলেও বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে দেশে বন্যা শুরু হয়েছে। তখন থেকেই আওয়ামী লীগ বিভিন্ন টিম তৈরি করে বন্যা দুর্গতদের পাশে পাঠিয়েছে। তাদের খোঁজখবর সার্বক্ষণিক রেখেছে। ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে। এছাড়াও প্রশাসনকে আমরা বন্যা দুর্গতদের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বন্যা চলাকালে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তাদের ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বন্যার্তদের মধ্যে যারা কৃষি ঋণ নিয়েছে তাদের কিস্তি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। তারা যাতে বিনা জামানতে আবারো কৃষি ঋণ নিতে পারেন এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

বন্যার্তদের জন্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বন্যায় অনেকের মাটির বাড়ি ধসে গেছে। তাদের বাড়ি নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যেই অর্থ বরাদ্দ দিয়েছি। যখনই আমরা বন্যার খবর পেয়েছি তখনই সেখানে ত্রাণ পাঠিয়েছি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণমানুষের সেবা করে, সাধারণ মানুষের সেবা করে। আর জনগণের সেবা করাই আমাদের দায়িত্ব। আমরা যখনই মানুষকে কষ্টে থাকতে দেখেছি তখনই তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকেও আমরা আপনাদের কাছে ছুটে এসেছি। আপনারা আজ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। আমার আমাদের সাধ্য অনুযায়ী আপনাদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ করছি। পানি পরোপুরি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত এই ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বন্যার পূর্বাভাস পাওয়ার কারণে পর্যাপ্ত চাল মজুদ করেছি। চাল আমদানির ওপর ২৮ শতাংশ কর কমিয়ে ২ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। ১৫ লাখ মেট্রিকটন চাল বিদেশ থেকে আমদানি করে মজুদ করেছি। যাতে আমরা বন্যা দুর্গত মানুষদের পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা দিতে পারি। সাধারণ মানুষ ১০ টাকা করে ৩০ কেজি চাল কিনতে পারবে। এই ১০ টাকার চাল যাতে ৫০ লাখ মানুষ পায় তার ব্যবস্থাও আমরা করেছি। সেই সাথে যারা হতদরিদ্র তাদের মাঝে ভিজিএফ ভিজিএ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। তারা এই কার্ডের মাধ্যমে খাদ্য সাহায্য পায় সেটা আমরা অব্যাহত রেখেছি। বিধবা এবং স্বামী পরিত্যক্তাদেরও ভাতার ব্যবস্থা করেছি।’

সরকারের উদ্যোগের বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই বন্যা কবলিত ৩২ জেলায় ২২ হাজার ৬১৬ মেট্রিকটন চাল দুর্গতদের মাঝে বিতরণ করেছি। এছাড়াও পাঁচ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। বগুড়া জেলার জন্য এক হাজার ১০০ মেট্রিকটন চাল ইতোমধ্যেই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন. ‘বন্যার পরে যাতে রোগ বালাইন দেখা না দেয় সেজন্য মেডিকেল টিমসহ ওষুধের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করেছি। যাতে কেউ রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে মানুষ ভালো থাকে।’

যে দেশে কৃষক ফসল ফলায়, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাজ করে এসব মেহনতি মানুষের পাশে সব সময় আওয়ামী লীগ থাকে বলে জানান শেখ হাসিনা। মানুষকে শান্তিতে রাখতেই সরকার কাজ করছে বলে জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শিক্ষক-অভিভাবক ও ইমামদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমাদের যুবসমাজ যাতে মাদক, সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত না হয় সে দিকে আপনারা নজর রাখবেন। তারা যাতে বিপথে না যায় সে দিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হাবে। আমরা দেশে আর কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রম দেখতে চাই না।’

এসময় তিনি বিএনপি-জামায়াতের সময় আগুন সন্ত্রাসের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘তারাই দেশে জঙ্গি সৃষ্টি করেছিল। বাংলা ভাই সৃষ্টি করেছিল। ২০১৩ সালে তারা দেশে যে তাণ্ডব চালিয়েছিল তার হাত থেকে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও রেহাই পাননি। তার বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছিল। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীর বাড়িতে আক্রমণ করেছে। তারা পুলিশের উপরেও আক্রমণ চালায়। তাদেরকেও হত্যা করে।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এসব সন্ত্রাসী কার্যকলাপ থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে আপনারা ২০০৮ সালে এবং ২০১৪ সালে নৌকা মার্কার প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়ী করেছিলেন। আগামী নির্বাচনেও আপনার নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সহযোগিতা করবেন।’

জনসভায় বক্তৃতা শেষে তিনি সারিয়াকান্দি উপজেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রি এবং ২৫০ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের মাঝে ধানের চারা বিতরণ করেন।

জনসভায় অন্যানের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী মোফাজ্জাল হোসেন চৌধুরী মায়া, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান। এছাড়া জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরের ঈদগাহ মাঠে বানভাসিদের ত্রাণ বিতরণ করেন। গাইবান্ধার ত্রাণ কার্যক্রম শেষে বেলা ২টা ৩০ মিনিটে বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে হেলিকপ্টার যোগে অবতরণ করেন। এসময় স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাকে স্বাগত জানিয়ে জনসভার মঞ্চে আনেন।

ভাষণ এবং ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শেষে তিনি আবারো হেলিকপ্টারে ঢাকায় ফিরেন।

প্রসঙ্গত, পরপর দুই দফা বন্যায় বগুড়াসহ উত্তর জনপদের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। বন্যায় এই অঞ্চলে ব্যাপক ফলসহানির পাশাপাশি মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে। এসব বানভাসি মানুষের দুঃখ-দুর্দশা নিজ চোখে দেখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরের দুই জেলা বগুড়া এবং গাইবান্ধায় সফর করলেন আজ। এর আগে তিনি দিনাজপুর ও কুড়িগ্রাম সফর করেন।

(ঢাকাটাইমস/২৬আগস্ট/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :