বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা পাচ্ছেন না সহযোগিতা

শেরপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৬ আগস্ট ২০১৭, ১৮:২০

শেরপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ফলে প্রান্তিক চাষিরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের অভিযোগ, বন্যায় সব ধরণের ফসল পচে গলে নষ্ট হয়ে গেলেও দেখা পাওয়া যাচ্ছে না কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। যেসব এলাকার বন্যার পানি কিছুটা নেমে গেছে সেসব স্থানের ফসলি জমিতে ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতাপোড়া রোগের প্রাদুর্ভাবসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই ছড়িয়ে পড়লেও দেয়া হচ্ছে না বন্যা পরবর্তী সময়ে কৃষি উৎপাদন সংক্রান্ত পরামর্শ।

অন্যদিকে জেলার কৃষি বিভাগ দাবি করছে, নির্দেশনা অনুযায়ী মাঠ কর্মকর্তারা চাষিদের সার্বক্ষণিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানায়, সদরসহ নকলা, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদীর চার উপজেলার চরপক্ষীমারী, চরমোচারিয়া, কামারেরচর, চরশেরপুর, বলাইয়েরচর, মরিচপুরান, নয়াবিল, গণপদ্দী, নকলা, উরফাসহ ২২টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রামে ভয়াবহ বন্যায় গ্রীষ্মকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে ওইসব অঞ্চলের চাষিরা। জেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের লাখো চাষি আগাম জাতের লাউ, বেগুন, শশা, কুমড়া, করলা, ঝিঙা, ঢেঁড়স ও পেঁপেসহ আন্তত ২০ প্রজাতির গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ করেন। এসব অঞ্চলের উৎপাদিত সবজি জেলাবাসীর চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য জেলার চাহিদার যোগান দেয়া হয়। কিন্তু এবারের বন্যায় তাদের সব সবজির বাগান পানিতে তলিয়ে গেছে।

গত ১২ দিন ধরে পানিতে তালিয়ে থাকায় চলতি আমন আবাদসহ সবজি গাছ পচে গলে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। সবজির বাগান ক্ষতি হওয়ায় আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। এত কিছুর পরও দেখা পাচ্ছেন না কৃষি কর্মকর্তাদের।

সদর উপজেলার বলাইয়ের চর গ্রামের শামসুদ্দিন, রাব্বানী, টিটু মিয়া, তারেকসহ অনেকেই বলেন, এবারের বন্যায় গত ১২ দিন ধরে পানিতে তালিয়ে থাকা আগাম জাতের লাউ, বেগুন, শশা, কুমড়া গাছ পঁচে গলে নষ্ট হয়ে গেছে। এ অঞ্চলের প্রায় ২ হাজার একর জমির ফসলের ক্ষতি হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোন কৃষি কর্মকর্তা তাদের কোন খোঁজ খবর নেয়নি বলে তারা অভিযোগ করেন।

নকলার গণপদ্দী গ্রামের চাষি আব্বাস মিয়া বলেন, ১২ কাঠা জমিতে আমন ধান লাগাই ছিলাম। বন্যায় সব শেষ হইয়া গেছেগা। এহন নতুন কইরা চারা পাওয়ারও আশা নাই। কৃষি অফিসের লোকজনও খবর নিতাছে না। কি করমু নিজেও বুঝতাছি না।

চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের সরদার আলী বলেন, চার কাডা জমিত বেগুন টাল করছিলাম। গাছ ভইরা বেগুন আইছিলো। বন্যায় সব খাইয়া গেছে। পরামর্শ করবার লাইগা ৪-৫ দিন আগে কৃষি অফিসের একজনের কাছে ফোন করছিলাম। কইলো পানি নাইমা যাইক পরে আইয়া দেখমুনে কি করা যায়।

কুলুরচর বেপারীপাড়া গ্রামের শামীম আহমেদ নামে এক শিক্ষক বলেন, বন্যায় আমাদের জেলায় অন্তত ৪০ থেকে ৫০ হাজার একর জমির চলতি আমন ধানের বীজতলাসহ সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বহু কৃষক। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তার থেকে দেয়া হচ্ছে না পরামর্শ।

শহরের শেরী ব্রিজ এলাকার কৃষক হাসমত, খালেক, দেওয়ান ফকির বলেন, বর্তমানে যেসব এলাকায় বন্যার পানি কিছুটা কইমা গেছে সেসব জাগার ফসলের ক্ষেতে ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতাপোড়া রোগের প্রাদুর্ভাবসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই দেখা দিছে।

ওই গ্রামের আরেক চাষি তোফাজ্জল মিয়া বলেন, আমার নিজের আটকাডা জমিন আর এগ্রিমেন্টে আরো প্রায় ২২ কাডা জমিত শশার ক্ষেত করছিলাম। বিভিন্ন জনের কাছ থনে ঋণ ধার করছি এই আবাদের কারণে। এহন সবইতো শেষ। দেনার চিন্তায় রাইতে আর চোহে ঘুম আহেনা।

এ সম্পর্কে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তারের উপ-পরিচালক আশরাফ উদ্দিন জানান, এবারের বন্যায় ৭ হাজার একর জমির ফসলহানি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে চাষিদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বন্যা পরবর্তী সময়ে করণীয় ঠিক করতে কৃষকদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/২৬আগস্ট/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :