‘বেসিকের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া আমাদের ব্যর্থতা’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০১৭, ২১:৪৫ | প্রকাশিত : ২৬ আগস্ট ২০১৭, ২১:৪২

বেসিক ব্যাংক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে এখনো ব্যবস্থা না নিতে পারাকে সরকারে ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘এখনো ব্যাংকটির দুই হাজার ৯০০ কোটি টাকা ৭০ থেকে ৭১ জন মানুষের কাছে রয়েছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সেটা দুদকও পারেনি, সরকারও পারেনি।’

শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের অবস্থা পর্যালোচনা: চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপায়’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এই কর্মশালার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘বেসিক ব্যাংকের টাকা এমনভাবে ব্যাংটির একজন চেয়ারম্যান দিয়েছেন যে, দুই দিন আগে যে অ্যাকাউন্ট খুলেছে তাকেও টাকা দিয়েছেন। দুর্নীতির কারণে যার চাকরি গেছে তাকে ম্যানেজার বানিয়ে নিয়মের বাইরে এ কাজগুলো করিয়েছেন। আমাদের পার্লামেন্টের স্ট্যান্ডিং কমিটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগসহ এগুলো দিয়েছে। আমরা সুপারিশ দিয়েছি। যেভাবেই হোক আজ পর্যন্ত দুদক বা আমরা সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারিনি। এটি আমাদের ব্যর্থতা।’

আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘দুদককে আমরা অনেক অনুরোধ করেও ফাইন্যান্স কমিটির মিটিংয়ে আনতে পারিনি। তারা এড়িয়ে গিয়েছে। আমাদের কমিটির মিটিংয়ে তারা আসেনি। আমরা বলেছি দিবালোকে ডাকাতি ছাড়া এটি আর কিছুই নয়। তার চেয়েও বেশি। বারবার চিঠি দিয়েও দুদককে সংসদীয় কমিটির সামনে নেয়া যায়নি। জানি না এর কারণ কী! হয়তো এ ব্যাপারে দুদকের কোনো সীমাবদ্ধতা আছে।’

এসময় আবদুর রাজ্জাক রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক চালানোর জন্য আলাদা একটি কমিটি করার সুপারিশ করেন।

সরকারি ব্যাংকে এখন যারা চাকরি নিচ্ছে তারা অনেক মেধাবী উল্লেখ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হলে পাবলিক ব্যাংক আরও ভালোভাবে চালানো যাবে।’

আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘একটি প্রাইভেট ব্যাংক যদি ১৫-২০টি শাখা নিয়ে ১৫০ কোটি, ৪০-৫০টি শাখা নিয়ে ৫০০ কোটি টাকা বছরে মুনাফা করতে পারে, তবে সরকারি ব্যাংক কেন নয়! তারা কি হাতে আলাদিনের চেরাগ পেয়েছে!’

কর্মশালায় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘সরকারি ব্যাংকে অবশ্যই দুর্নীতি আছে। তবে তার চেয়েও বেশি হলো অপচয়। এটা ব্যক্তি অপচয়, প্রাতিষ্ঠানিক অপচয়, ঐতিহাসিক অপচয় ইত্যাদি। এসব অপচয় এক‍ত্র করলে সব দুর্নীতিকে ছাড়িয়ে যাবে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বলা হয় বিদেশেও বিপদে পড়লে ব্যাংকগুলো রাষ্ট্রের কাছ থেকে মূলধন নিয়ে ঘাটতি পূরণ করে। হ্যাঁ নেয়, কিন্তু তারা নিয়ম মেনে শর্তসাপেক্ষে সে টাকা বেল আউট হিসেবে নেয়। আবার শর্তানুযায়ী তা ফেরতও দেয়। কিন্তু আপনারা তা ফেরত দেন না। আপনারা এটাকে গিফট আউট হিসেবে ব্যবহার করেন। বেল আউট ও গিফট আউটের মধ্যে পার্থক্য আছে। এটা ব্যাংকারদের বুঝতে হবে।’

রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক দেশের উন্নয়নে অনেক অবদান রাখছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ‘রাষ্ট্রের অগ্রাধিকার প্রকল্প, পিপিপি, বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের অবদান রয়েছে। দেশের মোট ব্যাংকিংয়ের ৩৮ ভাগ পরিচালিত হয় রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকসহ যা ৫৩ ভাগ।’

সেমিনারে কি-নোট পেপার উপস্থাপন করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান। তিনি তাতে ব্যাংকব্যবস্থার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক সম্পর্কে কী মনে করে তা তুলে ধরতে গিয়ে ইউনুসুর রহমান বলেন, ‘সাধারণ মানুষ মনে করে আইসিটি জ্ঞানসহ প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবলেন অভাব আছে; ব্যাংকারদের মধ্যে সেবকের মনোবৃত্তির অভাব আছে; গ্রাহক সেবার মানোন্নয়নের কোনো প্রচেষ্টা নেই; যোগ্য কর্মকর্তাকে উপযুক্ত স্থানে পদায়নের ব্যর্থতা; গ্রাহকের অভিযোগ যথাসময়ে নিষ্পত্তি না করা; আমানতের ওপর অনবরত সুদ কমানো; খেলাপি ঋণ আদায়ে যথাযথ মনোযোগ না দেয়া ইত্যাদি।’

অনুষ্ঠানে সব ব্যাংকের চেয়ারম্যান, সিইও, এমডি, ইন্সুরেন্স বিভাগের পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, দুদক সচিব, ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের পরিচালক, এফবিসিসিআইর পরিচালকসহ আর্থিক বিষযের সঙ্গে জড়িত ঊর্ধ্বতন প্রায় দেড়শ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আজকের বিভিন্ন সুপারিশের ভিত্তিতে একটি সুপারিশমালা তৈরি করবে অর্থ মন্ত্রণালয়।

(ঢাকাটাইমস/২৬আগস্ট/জেআর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :