দিনাজপুরে ধ্বংসের চিহ্ন

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর
| আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০১৭, ২২:৫৫ | প্রকাশিত : ২৬ আগস্ট ২০১৭, ২২:৫০

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পানি অনেক জায়গা থেকে নেমে গেলেও দিনাজপুরে রয়ে গেছে ধ্বংসের চিহ্ন। প্রাণীকূল, অবকাঠামো ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।

বন্যায় জেলায় এক লাখ ৫৫ হাজার ৪৭১টি পরিবারের ছয় লাখ ২১ হাজার ৮৮৪ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মারা গেছে ৩১ জন মানুষ। প্রায় ছয় লাখ গবাদিপশু হুমকির মুখে পড়েছে। বিনষ্ট হয়েছে এক লাখ ২৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি।

পানি নেমে যাওয়ার পর বানভাসি মানুষের ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। তবে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি সংস্কারে নতুন সংগ্রাম করতে হচ্ছে তাদের। ঘরে খাদ্য সংকট, হাতে পয়সা নেই, কী করে ভেসে যাওয়া ঘর পুনঃনির্মাণ ও ভেঙে যাওয়া ঘর মেরামত করবেন এ চিন্তায় দিশেহারা তারা।

ঘুরে দাঁড়াতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে কেউ পাশে দাঁড়াচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। কেউ কেউ কোনো মতো ঝুপড়ি বেঁধে থাকলেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ি মেরামত করতে না পারায় অনেকে বসবাস করছে খোলা আকাশের নিচে।

বিরল উপজেলা পলাশবাড়ী এলাকার কৃষক আজাহার আলী বলেন, ‘আমরা এখন কী খাইয়া বাঁচিমো? আমার তামাম শেষ! রোপা আমন যা লাগাইছোনা তা, বানের পানিত ডুবি পচি গ্যাইছে।’

ওই এলাকার শাহাজান, মকছেদ, মেহেদি, রমজান, ফরিদসহ সবারই একই দশা। এলাকায় পানি সরে যাওয়ার পর পচা-দুর্গন্ধে পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে পেটের পীড়া, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভার।

সরকারি হিসাব মতে, বন্যায় দিনাজপুরের ১৩ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। ১০৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯০টিরও বেশি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় এক লাখ ৫৫ হাজার ৪৭১টি পরিবার। বিধ্বস্ত হয় ৫৯ হাজার ২৯৯টি ঘরবাড়ি। এসবের বেশিরভাগই মাটির ঘর। ফসলহানি ছাড়াও প্রায় ১২ হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

বানভাসিদের যথাসাধ্য সহায়তা করার চেষ্টা করছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা। কিন্তু এ বিষয়ে তারা সরকারসহ বিত্তবানদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বিরল রানীপুকুর ইউপি চেযারম্যান ফারুক আজম জানান, সমস্ত এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ার পর মানুষের অবস্থা করুণ হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, ‘সরকারি রিলিফের আশায় না থেকে আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে খিচুরি আর ভাত রান্না করে সবার খাওযার ব্যবস্থা করেছিলাম। এখন পানি সরে যাওয়ায় অনেকে বাড়ি গেছে। কিন্তু সব ভেঙে যাওয়ায় খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে তারা।’

বন্যায় জেলার ১৬৪ কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়কের মধ্যে ১১৪ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া এলজিইডির ২২ কিলোমিটার স্থানীয় সড়কের মধ্যে ৫০ ভাগ কিলোমিটার ভেঙে গেছে হয়েছে। শতাধিক কালভার্ট নষ্ট হয়েছে। এছাড়া প্রায় ১৫ কিলোমিটার রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বন্যায় ছয় লাখ গবাদিপশু হুমকির মুখে পড়েছে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে সেগুলো। গো খাদ্যের চরম সংকট চলছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ ঢাকাটাইমসকে জানান, জেলায় ১৫ লাখ গরু, দুই হাজার ৮২৭টি মহিষ, নয় লাখ ৩৩ হাজার ছাগল ও এক লাখ ৩৩ হাজার ভেড়া রয়েছে। এর মধ্যে আসন্ন কোরবানির জন্য ৫৯ হাজার ২৬০ জন খামারি এক লাখ ২৭ হাজার ৩৬৯টি গরু ও ৭০ হাজার ৭৯৬টি খাসি মোটাতাজা করেছিল। কিন্তু তিন লাখ ৭২ হাজার ৫০৫টি গরু, ১০৭টি মহিষ, দুই লাখ এক হাজার ৯৩১টি ছাগল ও ১১ হাজার ৪৭০টি ভেড়ার ক্ষতি হয়েছে বন্যায়। গো-খাদ্যের জন্য ৩৪৭ একর জমির কাঁচাঘাস ও এক হাজার ৬৬৬ মেট্রিক টন খড় নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে জেলায় গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেয়া দিয়েছে।

বন্যায় এই জেলায় মৃত্যু হয়েছে ৩১ জনের। পানিতে ডুবে, সাপে কেটে ও দেয়াল চাপায় মৃত্যু হয়েছে তাদের। এমন তথ্য দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

ভানভাসি মানুষের কষ্ট লাঘবে এ পর্যন্ত দুর্গতদের মধ্যে দুই হাজার মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। গৃহহীনদের বাড়ি নির্মাণ, কৃষি পুনর্বাসন, রাস্তা-ঘাট মেরামতমহ আরও ত্রাণের ব্যবস্থা করা হবে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।

জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম জানান, ত্রাণের পাশাপাশি খাওয়া সেলাইনসহ আমরা বিভিন্ন ওষুধ সরবরাহ করছি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের।

বানভাসি মানুষের সহায়তা করতে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, বন্যার্তদের পর্যাপ্ত ত্রাণ দেয়া হয়েছে। আরও দেয়া হবে। গৃহহীনদের বাড়ি ঘর করে দেয়া হবে। কৃষি পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। কেউ না খেয়ে মরবে না। সবাই ত্রাণ পাবে।

(ঢাকাটাইমস/২৬আগস্ট/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :