যমুনার পানি বিপদসীমার নিচে, স্বাভাবিক হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি
জামালপুরে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নেমেছে। এতে স্বাভাবিক হয়ে আসছে জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি। তবে স্বাভাবিক হয়নি বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা।
নিচু এলাকা থেকে পানি না নামায় ঘরে ফিরতে পারেনি অনেক পারিবার। তারা এখনো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তা ও স্বজনদের বাড়িতে রয়েছে।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নব যুগ চৌধুরী ঢাকাটাইমনকে জানিয়েছেন, শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনার পানি স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে।
ইসলামপুর উপজেলার যমুনার কূলঘেঁষা কুলকান্দি ইউনিয়নের সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় কুলকান্দি আলিয়া মাদ্রাসায় আশ্রয় নেয়া মিতু আক্তার ও সুফিয়া বেগমের সাথে। এই মাদ্রাসায় এখনো সাতটি পরিবার রয়েছে। তাদের ঘর-বাড়ি থেকে পানি নেমে না যাওয়ায় বাড়ি ফিরতে পারছে না। এদের মধ্যে সুফিয়ার পরিবারের ঘর বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে। নিম্নমধ্যবিত্ত এই পরিবারটির এখন ঘরে ফেরার সুযোগ নেই। ঈদে এখানেই থাকার কথা জানালেন তারা।
শুধু মিতু ও সুফিযার পারিবারই নয় এমন অনেক পরিবার রয়েছে এখনো ঘরে ফিরতে পারছে না। এসব পরিবার সরকারি ও সামাজিক সংগঠনের ত্রাণ সহায়তায় কোনো রকমে জীবন-যাপন করছে।
আশ্রয়কেন্দ্র থেকে যেসব পরিবার ঘরে ফিরছে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামত করে ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
অন্য জেলার বন্যা পরিস্থিতি
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শনিবার বলা হয়, দেশের উত্তরাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি হ্রাস অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি অব্যাহত থাকবে।
পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করায় দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলের মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুরের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে।
এদিকে মধ্যাঞ্চলের ঢাকার চতুর্দিকের নদীগুলো বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ, টুংগিখাল বিপদসীমার যথাক্রমে ৮৫ সে.মি., ১৫ সে.মি., ১৩ সে.মি. এবং ৯ সে.মি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে শীতলক্ষা নদী নারায়ণগঞ্জে বিপদসীমার ১৪ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঢাকার চতুর্দিকের নদীগুলোর পানি সমতল হ্রাস আগামী ৪৮ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকবে।
ব্রহ্মপুত্র-যমুনার ভারতীয় অংশে আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টায় গড়ে ১৫ সে. মি. পানি হ্রাস পেতে পারে। বাংলাদেশ অংশের ব্রহ্মপুত্র-যমুনার বিভিন্ন্ পয়েন্টে আগামী ৭২ ঘণ্টায় পানি হ্রাস অব্যাহত থাকবে। গঙ্গা- পদ্মা নদীর পানি সমতলও আগামী ৭২ ঘণ্টায় হ্রাস অব্যাহত থাকবে।
মেঘনা অববাহিকার নদীসমূহের মধ্যে কুশিয়ারা, মনু ও খোয়াই পয়েন্টের পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় কিছুটা বাড়তে পারে।
গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা এই তিন অববাহিকার মধ্যে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের ভারতীয় ও বাংলাদেশ অংশে পানি হ্রাস অব্যাহত আছে, অপরদিকে মেঘনা অববাহিকার ভারতীয় অংশে পানি স্থিতিশীল আছে।
শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর ভারতীয় অংশের গোহাটিতে (বাংলাদেশ সীমান্ত হতে ১৮০ কি.মি. উজানে) ১১ সে.মি, পান্ডুতে (বাংলাদেশ সীমান্ত হতে ১৬০ কি.মি. উজানে) ১২ সে.মি, গোয়ালপাড়া (বাংলাদেশ সীমান্ত হতে ৯০ কি.মি. উজানে) ১৬ সে.মি, এবং ধুবরী (বাংলাদেশ সীমান্ত হতে ২৫ কি.মি. উজানে) ১৮ সে.মি পানি সমতল হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি সমতল নুনখাওয়া, চিলমারী, বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি এবং সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে হ্রাস অব্যাহত রয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/২৬আগস্ট/প্রতিনিধি/জেবি)