আমদানির কারণে দেশীয় পানের বাজার মন্দা

তন্ময় তপু, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৮ আগস্ট ২০১৭, ০৮:২৮

ভারত থেকে আমদানি হওয়ায় পানের বাজারে মন্দাভাব বলে জানিয়েছেন বরিশালের পান ব্যবসায়ীরা। বাজারে দরপতনের ফলে অনেক সময় বিড়া (৭২ পিস পাতা) প্রতি খরচ উঠাতেও হিমশিম খেতে হয় চাষিদের। তবে আমদানির খবর নেই কৃষি বিভাগের কাছে, তারা বলছে উৎপাদন বাড়ায় এ সময়টায় পানের দাম কিছুটা কমে যায়, মৌসুম শেষ হলে যা আবার বেড়ে যাবে। তারপরও সবকিছু মিলে যেন পানের কদর কমছেই না। চাহিদা বাড়তে থাকায় এই খাতে দিনে দিনে বাড়ছে বিনিয়োগ ও শ্রম।

সূত্র মতে, বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, উজিরপুর উপজেলার মধ্যদিয়ে বয়ে চলা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের দুই পাশে ইচলাদি, বাটাজোর, চাদশি, শোলক, রাজিহার, টরকীসহ ৬/৭ টি স্থানে হাট বসে। যার ফলে সপ্তাজুড়ে প্রতিদিন কোনো না কোনো জায়গায় হাট মিলছে। আর হাটগুলো স্থানীয় বাবুগঞ্জ, গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, উজিরপুর উপজেলার চাষিদের পানের দখলে থাকছে। তবে এরমধ্যে আট দশক ধরে চলা বাটাজোরের পানের বাজার সবথেকে বড় বলাই চলে। যার প্রতিটি হাটে নূন্যতম ২০ লাখ টাকার পান আসে।

হাটগুলোতে গ্রামের চাষিরা পান নিয়ে আসার পর আকার ও মান দেখে এর দর ঠিক করেন পাইকাররা। এরপরে ৭২টি পাতার সংযোজনে এক বিড়া করে পানের আঁটি বাঁধা হয়। এরপর কলাপাতার তৈরি অস্থায়ী ঝুড়িতে কখনো একশ আবার কখনো পাঁচশ বিড়া একসাথে বাঁধা হয়। পরে তা পরিবহনে করে রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে সিলেট, নোয়খালী, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী অমলেন্দু বিশ্বাস ঢাকাটাইমসকে বলেন, দখিনের জেলা বরিশালের পান চাষ ও বাজার প্রসারিত হচ্ছে। শুধু গৌরনদী-আগৈলঝাড়া উপজেলার এমন কিছু গ্রাম রয়েছে যে গ্রামের শতকরা ৯০ ভাগ লোক পান চাষ ও ব্যবসার সাথে জড়িত। শ্রমিক ব্যতিত একটি হাটে শুধু পান সম্পৃক্ত ১০ ধরনের ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। যারমধ্যে খের/উলু/বোন, পাট, ছনের খড়ি, বাশের কঞ্চি, নাড়া, কলাপাতা বিক্রি ও পরিবহন ব্যবসা উল্লেখযোগ্য।

এই ব্যবসায়ী বলেন, এত শ্রমের মাঝেও ভারতীয় পানের আমদানি হলে দর পড়ে যায় এবং ক্ষতির সম্মুখীন হয় চাষিরা। এ অঞ্চলের পান একসাথে ঝাল ও মিষ্টি আবার পঁচেও কম, তারপর আমাদানির পানের কারণে দাম কমে যায়। এমনও দিন যায় কোনো চাষির বিড়া উৎপাদনে ৩০ টাকা খরচ হলেও তিনি পান ২০ টাকা।

অপর এক ব্যবসায়ী সমিরণ হালদার ঢাকাটাইমসকে জানান, বর্তমানে আকার ও ভালো-খারাপ দেখে পানের বিড়াপ্রতি দর ২৫ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। তবে কখনো কোনো কোনো পান বিড়াপ্রতি দাম ৫/৭ টাকাও ওঠে। তিনি বলেন, এই অঞ্চলে পান চাষের মজা হচ্ছে বরজ একবার করে যুগ পার করা যায়, কোনো রোগ বালাই নাই, নতুন করে জমি চাষ, আবাদের প্রয়োজন হয় না। অল্প পরিশ্রম ও জনবল দিয়ে পানের বরজ করা সম্ভব, পাশাপাশি এ অঞ্চলে পানিও আটকে থাকছে না।

বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রমেন্দ্র নাথ বাড়ৈ ঢাকাটাইমসকে বলেন, উৎপাদন যখন বেশি হয় তখন দর একটু কমে যায়, এটা স্বাভাবিক। তারপরও আমি বলবো আমাদের এ অঞ্চলের চাষিরা লাভবান, কারণ দিনে দিনে পানের বরজের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিবছর পাঁচ থেকে সাত হেক্টর জমি পানের বরজের আওতায় আসছে। আর বরিশালের পানের কদর আলাদা, এটি সুস্বাদু, সব অঞ্চলের ক্রেতারা এ পানে আকৃষ্ট হচ্ছে। আর চাষিদের অভিযোগ থাকতে পারে, আবার অবাধ বাণিজ্যে যেকোনো দেশের পান আসতে পারে। তবে আমরা চাচ্ছি কোয়ালিটিসম্পন্ন পান উৎপাদন করতে যাতে চলমান বাজারে এ অঞ্চলের পান সবসময় জয়লাভ করতে পারে।

প্রসঙ্গত, বরিশাল জেলায় গত বছর দুই হাজার ২৫৩ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে। যারমধ্যে গৌরনদী উপজেলায় সর্বোচ্চ ৮৫০ হেক্টর জমিতে পানের বরজ রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৮আগস্ট/টিটি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :