অবশেষে আশ্রয় হলো শতবর্ষী সেই মায়ের

রেজাউল করিম, টাঙ্গাইল
| আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০১৭, ২০:২৮ | প্রকাশিত : ২৮ আগস্ট ২০১৭, ২০:১৮

জীবন সায়াহ্নে এসে অমানবিকতা দেখা শতবর্ষী বৃদ্ধার পাশে দাঁড়িয়েছে টাঙ্গাইল জেলা ও বাসাইল উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তর।

শতবর্ষী ময়মন বেগমকে দেখে না ছেলে আর মেয়ে। মানুষের সহায়তায় জীবন চালানো ময়মন এবারের বন্যায় পড়ে যান অথৈ সাগরে। এক স্বজন হাসপাতালের পরিত্যক্ত ভবনে ফেলে রেখে যায় তাকে। ঢাকাটাইমস তার দুর্দশা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তার পাশে দাঁড়ায়।

এরপর সরকারি প্রতিষ্ঠান টাঙ্গাইল জেলা ও বাসাইল উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর ময়মন বেগমের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে। সোমবার বিকালে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনস্থ ‘টাঙ্গাইল সরকারি শিশু পরিবার বালিকাতে’ নেয়া হয়। বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিত্যক্ত মেঝে থেকে ওই বৃদ্ধাকে সরকারি গাড়িতে করে সেখানে নেয়া হয়।

বাসাইল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হারুন-অর রশীদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ময়মন বেগমের বিষয়টি ঢাকাটাইমসে প্রকাশ হওয়ার পর আমি বৃদ্ধার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অবগত হই। টাঙ্গাইল জেলা সমাজসেবা উপপরিচালক আব্দুল হামিদ আমাকে এ বিষয়ে একটি ম্যাসেজ দেন। পরে সোমবার বিকালে সরকারি গাড়িতে করে বৃদ্ধা ময়মন বেগমকে টাঙ্গাইল সরকারি শিশু পরিবার বালিকাতে নেয়া হয়।’

আরো পড়ুন- সন্তান খোঁজ না নিলেও শতবর্ষী মায়ের পাশে ‘ঠিকানা’

হারুন-অর-রশীদ বলেন, ময়মন বেগমকে সমাজসেবা অধিদপ্তর ১৯৯৮ সাল থেকে বয়স্ক ভাতার কার্ড দিয়ে তার পাশে রয়েছে। এবার তাকে স্থায়ী একটি ব্যবস্থা করা হলো। বিকালে ওই বৃদ্ধাকে খাওয়া-দাওয়া করিয়ে চিকিৎসককে দেখান কর্মকর্তারা।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সরকারি শিশু পরিবার বালিকা’ শিশুদের জন্য হলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এখানে দশজন বৃদ্ধার আশ্রয়ের অনুমতি রয়েছে। এখানে প্রায় একশ শিশু রয়েছে। এই প্রথম কোনো বৃদ্ধাকে নেয়া হলো। শিশুদের কাছে তাকে ‘দাদু’ বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। এত শিশুদের মাঝে তিনি এখন অনেকটাই আনন্দে আছেন।

আরো পড়ুন- ‘আমার বেটা-বেটিগো জানি আল্লাহ এতো বুড়া না বানায়’

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পরিচালক মো. আব্দুল হামিদ ঢাকাটাইমসকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘সমাজসেবা অধিদপ্তর সবসময় অসহায় অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ায়। এই ধারাবাহিকতায় ওই বৃদ্ধার খবর পেয়ে তাকে স্থায়ী একটি ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি এখন অনেক আনন্দে আছেন।’

বৃদ্ধা ময়মন বেগম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি ওগোরে নিয়া ভালোই আছি। যারা আমারে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করলো আল্লাহ তাদের সুখি করবেন।’

এর আগে ওই বৃদ্ধার পাশে দাঁড়িয়েছিল অসহায় মানুষের ঠিকানা হতে চাওয়া স্থানীয় একটি সেবা মূলক সংগঠন ‘ঠিকানা’। সংগঠনটি এতদিন বৃদ্ধার খাওয়া-দাওয়ার খরচ চালিয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর তার ঘরটি মেরামতের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল ‘ঠিকানা’।

সংগঠনটির সভাপতি মাসুদুজ্জামন রুমেল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের সংগঠনটি সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আমরা বৃদ্ধার দায়িত্ব নিয়েছিলাম। সাধ্যমত খাবারের ব্যবস্থা করেছিলাম। বর্তমানে সরকারিভাবে তাকে সহযোগিতা করায় সমাজসেবা অধিদপ্তরকে সাধুবাদ জানাই।’

এদিকে ২৫ আগস্ট শুক্রবার বিকালে প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়ার পর জেলার সব মহলেই বিষয়টি আলোচনায় আসে। বৃদ্ধা ময়মন বেগমকে দেখতে অনেকেই হাসপাতালের ওই পরিত্যক্ত কক্ষে ছুটে যান। স্থানীয় মেয়র মজিবর রহমান, সেবামূলক সংগঠন ‘ঠিকানা’সহ বিভিন্ন পেশার মানুষ ওই বৃদ্ধাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।

প্রসঙ্গত, টাঙ্গাইলের বাসাইলে বৃদ্ধা মা ময়মন বেগমকে ছেড়ে চলে গেছেন তার ছেলে এবং মেয়ে। দুর্দশায় পতিত মাকে বন্যার সময়ও দেখতে আসেননি তারা। বন্যার পানি ঘরে উঠায় শতবর্ষের ওই বৃদ্ধা আশ্রয় নেন স্থানীয় গোবিন্দ সরকারি বিদ্যালয়ের অস্থায়ী একটি আশ্রয়কেন্দ্রে। পরদিন বৃদ্ধার চেনা এক ব্যক্তি তাকে তার আত্মীয়ের বাড়িতে দিয়ে এলেও তারা তাকে ফেলে রেখে যান বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি পরিত্যক্ত মেঝেতে। অসহায় এই বৃদ্ধার পাশে নেই তার কোনো স্বজন।

ঢাকাটাইমস/২৮আগস্ট/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :