বন্যার ক্ষতি-৩

রংপুরের ছয় জেলায় শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির

রফিকুল ইসলাম রফিক, রংপুর
 | প্রকাশিত : ২৯ আগস্ট ২০১৭, ০৮:০৭

রংপুর বিভাগে দ্বিতীয় দফা বন্যায় নদী তীরবর্তী এলাকা, চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় বানের পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে শিক্ষার্থীদের বই। নদীগর্ভে চলে গেছে স্কুল। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে বানভাসিরা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করায় সেখানে স্থগিত করা হয়েছে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা। ফলে এসব শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন রয়েছেন অভিভাবক এবং শিক্ষাবিদরা। যদিও বানভাসিরা ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। কিন্তু বই খাতাপত্র না থাকায় ক্লাস পরীক্ষা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।

তবে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দ্রুত শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই এবং ছুটির দিনে ক্লাস পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানায়, এবারের বন্যায় রংপুর বিভাগের নয় হাজার ৫০১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার কবলে পড়েছে।

এরমধ্যে রংপুরে ১৬৮টি, দিনাজপুরে ৩৪৮টি, নীলফামারীতে ৫১টি, গাইবান্ধায় ২০৭টি, কুড়িগ্রামে ৯০৩টি এবং লালমনিরহাটে ২৬২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কম বেশি ছয় লাখ ৮৪ হাজার ৭০০ শিশু শিক্ষার্থী রয়েছে। যারা স্কুলে যেতে পারছে না। বন্ধ আছে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা।

তবে বন্যার কবলে পড়েনি বিভাগের ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ওই দুই জেলা বাদে বাকি ছয় জেলায় বন্যায় শিক্ষাকার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকার পরিবর্তে উড়ছে লাল নিশানা। দুর্ঘটনা এড়াতে স্কুলের আশপাশে যেতে এসব চিহ্ন ব্যবহার করছে কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষা অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, এই ছয় জেলার চরাঞ্চল, নিম্নাঞ্চল ও বন্যাদুর্গত এলাকায় পানি উঠার কারণে এক হাজার ৩৫৯টি এবং আশ্রয়ন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে ৫৮৭টিসহ মোট এক হাজার ৯৪৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ আছে।

অন্যদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাদ্রাসা বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, বন্যা দুর্গত এলাকায় শতাধিক নিম্ন মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, কলেজ ও এবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ আছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম বেশি অর্ধ লাখের বেশি।

রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ঢাকাটাইমসকে জানায়, এবার বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দিনাজপুরে। সেখানকার মানুষ এর আগে কখনো এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেনি। তাই এই বন্যা মোকাবেলার তাৎক্ষণিক প্রস্তুতি ছিল না। তাই বানের পানিতে নষ্ট হয়েছে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার বই। ভেসে গেছে বাসা বাড়িতে থাকা বইও। সে কারণে শিক্ষার্থীরা না পারছে পড়তে না পারছে স্কুলে যেতে।

সংশ্লিষ্ট দপ্তরটির তথ্য মতে, দিনাজপুর জেলায় তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভারী বর্ষণ এবং নতুন করে বন্যা হলে ৩০টির বেশি স্কুল ক্ষতির মুখে পড়বে।

রংপুরের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে গঙ্গাচড়ার তিনটি ইউনিয়নে। এসব এলাকায় কোনোকিছুই তারা রক্ষা করতে পারেনি। ওই এলাকার স্থানীয় আব্দুল্লাহ আল মানুম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা চরাঞ্চলের মানুষ। আমাদের বাপ-দাদার আমল থেকে বন্যা দেখে আসছি। বন্যা আমরা নিয়মিত দেখি। বন্যাকে বন্যা মনে করি না আমরা। কিন্তু এবারের মতো বন্যা কখনো দেখেনি নোহালির মানুষ। এতে বই খাতাসহ বাড়ির আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। স্কুল নষ্ট হয়েছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। এভাবে কতদিন চলবে বুঝতে পারছি না। দ্রুত তাদের লেখাপড়া শুরু করা প্রয়োজন।’

নোহালী দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্র সাইফুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে জানালেন, মাদ্রাসায় যাওয়ার কোনো বুদ্ধি নেই। বন্যায় সব বই খাতা নষ্ট হয়েছে। এখন মাদ্রাসায় যেতে পারছি না। মাদ্রাসা খোলা থাকলেও ছাত্র হয় না।

গঙ্গাচড়ার নোহালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের আবুল কালাম আজাদ টিটুল ঢাকাটাইমসকে জানান, বন্যায় স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। অধিকাংশ বাড়ির শিক্ষার্থীদের বই খাতা কলম ভেসে গেছে। তাদের মধ্যে আর শিক্ষার কোনো উপকরণ নেই। এসব বানভাসি শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে তিনি সরকারের কাছে আহ্বান জানান।

দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এসএম তৌফিকুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে জানান, বন্যায় ৩০৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। কিছু স্কলে এরই মধ্যে শিক্ষা ও পরীক্ষা কার্যক্রম চলছে। বন্যায় ক্ষতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

দিনাজপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে জানান, বন্যায় শিক্ষার্থীদের বইখাতাসহ বিভিন্ন সামগ্রী ভেসে গেছে, নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, জেলায় মোট ২৪৯টি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওই ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে নেয়া যায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলা হয়েছে। আশা করছি আমরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব।

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাসান আতিক ঢাকাটাইমসকে জানান, নদী ভাঙনের কারণে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যালয়ের ঘর আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। অনেক স্কুলে এখনো শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে পারিনি। অনেক স্কুলে বিকল্পভাবে ক্লাস ও পরীক্ষা চালু করেছি। যেসব কাঁচা-পাকা ভবনের স্কুল তিস্তার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। সেখানকার ছাত্রছাত্রীদের অন্যত্র পাঠদান করাচ্ছি।

গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে জানান, নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের ২০৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পানি উঠেছে। পানি নেমে যাওয়ার পর বিকল্পভাবে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা ও ক্লাস চালু করেছি। সবগুলো করতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে। এজন্য তিনি অভিভাবকদের মনোবল না হারানোর পরামর্শ দিয়ে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেয়ার পরামর্শ দেন।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকাটাইমসকে জানান, কুড়িগ্রামে ৯০৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম স্থগিত ছিল। বেশ কিছু স্থানে বিকল্প পদ্ধতিতে পাঠদান ও পরীক্ষা কার্যক্রম চলছে।

রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাহবুবে এলাহী ঢাকাটাইমসকে জানান, বন্যায় বিভাগের ছয়টি জেলায় কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। বন্যার কারণে এক হাজার ৯৪৯টি স্কুলে পাঠদান স্থগিত ছিল। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরু করা হয়েছ। তিনি বলেন, যেসব জেলায় বই নষ্ট হয়েছে তালিকা করে দ্রুত বই দেয়া হবে। ঈদের পরই বন্ধ থাকা সব স্কুলে শিক্ষা ও পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করার লক্ষে আমরা কাজ করছি।

(ঢাকাটাইমস/২৯আগস্ট/আরআই/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :