বিদ্যুতের ‘যন্ত্রণায়’ অতিষ্ঠ টাঙ্গাইলবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল
| আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০১৭, ১০:০৯ | প্রকাশিত : ২৯ আগস্ট ২০১৭, ১০:০৮
ফাইল ছবি

বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে টাঙ্গাইলবাসী। দিনের আকাশে মেঘ জমে সামান্য বাতাস বইলেই বিদ্যুৎ যেন উধাও হয়ে যায়। আবার ভ্যাপসা গরমেও একই অবস্থায় পড়তে হয়। রাতে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার খেলা করে। এভাবেই যেকোনো মৌসুমে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে স্থানীয়দের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

স্বাভাবিক অবস্থাতেও প্রতিদিন দিন-রাতে শুধু শহর এলাকাতেই আট থেকে ১০ বার বিদ্যুৎ চলে যায়। রাতে বিদ্যুৎ চলে যায় সংকেত না দিয়ে। আর সন্ধ্যায় মাইকিং করা হয় ‘বিদ্যুতের লাইনের মান উন্নয়ন কাজের জন্য আগামীকাল সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকবে না।’ এই মাইকিং একদিনের বিষয় না। প্রায়ই এই মাইকিংয়ের কারণে নীরবে দুর্ভোগ মেনে নিতে হচ্ছে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের। সোমবার রাতে জেলার অনেক এলাকায় চার ঘণ্টার উপরে বিদ্যুৎ ছিল না।

লাইনের এতো কাজের পরও বিদ্যুতের উন্নয়নে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। বরং বিদ্যুতের পড়ে থাকা তারটুকু উঠানোর উন্নয়নও হয়নি এখানে। প্রায়ই পড়ে থাকা তারে জড়িয়ে প্রাণ যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। গত ১৫ দিনে জেলার দেলদুয়ার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পড়ে থাকা তারে জড়িয়ে স্বামী-স্ত্রীসহ সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এর দায়ভারও নেয়নি বিদ্যুৎ বিভাগ।

অন্যদিকে মাইকিংয়ের পর প্রস্তুতি নিলেও ওইদিন বিদ্যুৎ চলমান রেখে পরদিন বিদ্যুতের লোডশেডিং রাখা হয়। মাইকিংটাও যেন শুধু দায়সারা।

একদিকে ভাদ্রের ভ্যাপসা গরম অপরদিকে লোডশেডিং নামক বিদ্যুতের নির্যাতন সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে সরকার অগ্রাধিকার দিলেও টাঙ্গাইলে এর কোনো সুফল পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। তাদের অভিযোগ, শুধু উদাসীনতার কারণে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না টাঙ্গাইল বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ। পাশাপাশি ভুয়া বিলের মাশুল গুণতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ ভোক্তাদের।

টাঙ্গাইলের ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম মওলা শোভা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি থানাপাড়ায় একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকি। দুটি ফ্যান তিনটি লাইট একটি ফ্রিজ চালাই। তাতে এই মাসে আমার বিদ্যুৎ বিল এসেছে ১৮০০ টাকা। যেখানে আমার বিল আসার কথা ৫/৬শ টাকার মতো।’

সংযোগবিহীন মিটারেও বিল আসার তথ্য রয়েছে। এর আগে জেলার দেলদুয়ার উপজেলার চন্ডী গ্রামে কালা চান দাসের সংযোগবিহীন মিটারে বিল করা হয়েছিল তিন হাজার টাকা। সেটা পরিশোধও করতে হয়েছিল কালা দাসকে। সখীপুরে মোস্তফা কামাল নামের এক ব্যক্তির সংযোগবিহীন মিটারে বিল এসেছিল ৩৮ হাজার ৭১ টাকা। অধিকাংশ জায়গায় এক পরিবারেই দুই লাইনের সংযোগ রয়েছে। একটা গেলে আরেকটা জ্বলে। এ বিষয়টিও এড়িয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

টাঙ্গাইল বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের আওতাধীন বেলটিয়াবাড়ী, বেতকা পাওয়ার হাউজ এবং কচুয়াডাঙ্গা এই তিনটি ফিডার থেকে শহরের বিদ্যুৎ বিতরণ হয়ে থাকে। এর মধ্যে পাওয়ার হাউজ ফিডারকে বলা হয় শহর ফিডার, আর কচুয়াডাঙ্গা ফিডারকে বলা হয় মফস্বল ফিডার। তাতে কিন্তু বিল কমবেশি নেয়া হয় না। শুধু বিদ্যুৎ নিয়ে একটু অসম বণ্টন করা হয়। মফস্বল এলাকাগুলোতেই ফিডারভেদে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কম বেশি হয়ে থাকে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ সংকট আরও মারাত্মক। দিনে এবং রাতে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরও বেশি। বিতরণ বিভাগের কর্মকর্তাদের ঢালাওভাবে অভিযোগ, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে তা চালিয়ে নেয়া হচ্ছে।

এর আগে অধিকাংশ উপজেলাতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবিতে গ্রাহকদের বিক্ষোভ বা সড়ক অবরোধ করতে দেখা গেছে। স্থানীয়দের দাবি যেকোনো উপায়ে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে।

জেলার শিল্প এলাকা পাথরাইল শাখার ইনচার্জ মামুন শেখ বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে ঢাকাটাইমসকে বলেন, গত রাতে লাইন ফল্ট করেছিল। মাইকিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, লাইনের উন্নয়ন কাজের জন্যই মাইকিং করা হয়। আজও মহাসড়কের খুঁটি সরানোর জন্য মাইকিং করা হয়েছে। তবে এটা জেলা থেকে করেন।

টাঙ্গাইল পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া ঢাকাটাইমসকে জানান, বিদ্যুতের ঘাটতির কারণেই মাঝেমধ্যে লোডশেডিং রাখতে হয়। আর বিদ্যুৎলাইনের উন্নয়ন কাজের জন্য লাইন বন্ধ সম্পর্কে অবগত করার জন্য মাইকিং করা হয়।

টাঙ্গাইল বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকেীশলী ম. আনোয়ারুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে জানান, জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ৪০ মেগাওয়াট। কিন্তু সেখানে ২০/৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে সংগত কারণেই গ্রাম ও শহর এলাকায় লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুতের ঘাটতির সমন্বয় রাখা হচ্ছে। জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি কবে নাগাদ হবে এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, শহরে বাসাবাড়ি এবং দোকানপাট তৈরি হলেই এসি ব্যবহার করে। ১টা এসিতে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয় তাতে চারটি বাড়ির বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

(ঢাকাটাইমস/২৯আগস্ট/আরকে/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :