চাঁদপুরে এখনো রয়েছে তালের নৌকার কদর

শওকত আলী, চাঁদপুর
 | প্রকাশিত : ২৯ আগস্ট ২০১৭, ১৪:১৬

চাঁদপুরে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী তালের নৌকার কদর এখনো কমেনি। বর্ষা আসার সঙ্গে সঙ্গে তালের নৌকার কদর অনেক বেড়ে যায়। চাঁদপুরে তালের নৌকা তৈরির কারিগররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

এক সময় বর্ষা এলেই গ্রামাঞ্চলের খাল-বিল ও জলাশয়ে শাপলা তোলা, গরুর ঘাস কাটা, এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি যাওয়ার কাজে প্রধান বাহন হিসেবে ব্যবহার হতো তালের নৌকা। গ্রামীণ সড়কব্যবস্থা উন্নত হওয়ার কারণে এখন এ তালের নৌকার ঐতিহ্য অনেক স্থানে হারিয়ে যাচ্ছে। আর এর কারিগররাও এই পেশা ছেড়ে অন্য কাজে যোগ দিচ্ছেন।

সারাদেশেই এই তালের নৌকার কম-বেশি প্রচলন ছিল। এর মধ্যে চাঁদপুরের সদর ও হাজীগঞ্জ উপজেলায় তালের নৌকার কদর ছিল বেশি। পাশপাশি হাজীগঞ্জ বাজারে ছোট সাইজের নৌকাও বিক্রি হতো।

সরেজমিন হাজীগঞ্জ ও চাঁদপুর সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার দেবপুর নামক স্থানে তালের নৌকা তৈরির কারিগরদের সাথে কথা হয়। ওই এলাকায় পূর্বে ২০ থেকে ২৫ জন কারিগর কাজ করলেও তালের নৌকার চাহিদা কমে যাওয়ায় এখন মাত্র ১০-১২ জন কাজ করছেন।

কারিগর লোকমান কবিরাজ ঢাকাটাইমসকে বলেন, আগে বর্ষা এলে প্রতিবছর দুই থেকে তিন হাজার তালের নৌকা বিক্রি হয়েছে। এখন ২০০ নৌকাও বিক্রি হচ্ছে না। এর বড় কারণ হচ্ছে গ্রামগঞ্জে অনেক রাস্তা তৈরি হয়েছে। আমাদের পূর্বপুরুষরাও বহু বছর এ পেশায় ছিলেন, আমরা সেই হিসেব করছি। তবে এখন তালের নৌকার কদর অনেকাংশে কমে যাচ্ছে। আমরাও পাশাপাশি কৃষিসহ অন্যান্য কাজে দৈনিক হাজিরায় কাজ করে বেশি অর্থ পাচিছ। যার ফলে তালের নৌকা তৈরিতে তেমন আগ্রহ দেখা যায় না।

হাজীগঞ্জ উপজেলার চতন্তর হাওলাদার বাড়ির হাশু হাওলাদার ঢাকাটাইমসকে জানান, তারা প্রতিটি তাল গাছ তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকায় কিনেন। এর মধ্যে নিচের অংশ দিয়ে দুটি তালের নৌকা তৈরি হয়। আর এসব তালের নৌকা বিক্রি করেন চার থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত। পুরোনো তালগাছ দিয়ে তৈরি নৌকা টেকসই বেশি। কমপক্ষে ২০ বছর ব্যবহার করা যায়।

দেবপুর চরবাকিলা গ্রামের কিশোর জাবেদ ঢাকাটাইমসকে জানান, আগে তাদের বাড়ির অনেকেই তালের নৌকা ব্যবহার করতো। এখন আর করেন না। সে প্রতিদিন গরুর ঘাস কাটার কাজে তালের নৌকা ব্যবহার করেন। তালের নৌকায় দুই থেকে তিনজন বসতে পারে। তবে বেশি নড়াছড়া করলে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

তালের নৌকা বিক্রেতা সুরুজ বেপারী ঢাকাটাইমসকে জানান, পর্যায়ক্রমে এক সময় তালের নৌকা বিক্রি বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ এখন ক্রেতাদের আগমন কম। তবে বন্যা হলে আবার বিক্রি বেড়ে যায়। তিনি বলেন, ‘আমাদের তালের নৌকা বেশির ভাগ নোয়াখালী জেলার লোকজন কিনেন। এছাড়া স্থানীয়ভাবে হাজীগঞ্জ ও চাঁদপুর সদর উপজেলায় বিক্রি হয়। তালের নৌকার এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে কেউ এগিয়ে আসে না। আমরা নিজেদের উদ্যোগেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছি।’

(ঢাকাটাইমস/২৯আগস্ট/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :