বেওয়ারিশ লাশটিই ছিল একটি সম্ভাবনা!

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল
 | প্রকাশিত : ৩০ আগস্ট ২০১৭, ১৯:৩৩

টাঙ্গাইলে গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের পঁচিশ মাইল এলাকার সুমী নার্সারির কাছে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অজ্ঞাত পরিচয়ের একটি নারীর লাশ উদ্ধার করে মধুপুর থানা পুলিশ। পরে মধুপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আলমগীর কবিরের নেতৃত্বে ওসি মো. সফিকুল ইসলাম, ওসি (তদন্ত) মো. নজরুল ইসলাম, অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আমিনুল ইসলামসহ পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। পরে থানায় নেওয়া হয় লাশ। বিভিন্ন গণমাধ্যমে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার হিসেবে সংবাদ প্রকাশ হয়। এদিকে লাশের পরিচয় না মেলায় শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করে পুলিশ। শেষপর্যন্ত তার পরিচয় মিলেছে। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার ওই তরুণীর নাম মোছা. জাকিয়া সুলতানা রূপা (২৭)।

নিহত রুপা ছিলেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আমানবাড়ি গ্রামের মৃত মো. জেলহক প্রামাণিকের মেয়ে। পরিচয় পাওয়ার পর জানা গেল এই বেওয়ারিশ লাশটিই ছিল একটি সম্ভাবনা। রুপা ছিলেন একজন মেধাবি ছাত্রী। বগুড়া আজিজুল হক কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে ঢাকার আইডিয়াল ‘ল’ কলেজে এলএলবি শেষ বর্ষে পড়াশোনা করতেন রুপা। ওই দিন তিনি ‘শিক্ষক নিবন্ধন’ পরীক্ষায় অংশও নিয়েছিলেন। এছাড়া ময়মনসিংহ জেলা সদরে একটি কোম্পানির প্রোমোশনাল ডিভিশনে কাজ করছিলেন তিনি।

ঘটনার তিন দিন পর জানা গেল ওই দিন টাঙ্গাইলের মধুপুর এলাকার পঁচিশ মাইল নামক স্থান থেকে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের পর ঘাড় মটকে হত্যা করা হয় তাকে। সোমবার গণমাধ্যমে লাশ উদ্ধারের খবরের ছবি দেখে তা শনাক্ত করেন নিহতের বড় ভাই মো. হাফিজুর রহমান এবং থানায় মামলা করেন।

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে গত শুক্রবার বগুড়ায় যান তার বোন। পরীক্ষা শেষে এক সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ময়মনসিংহগামী ছোঁয়া পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৩৯৬৩) বাসে ওঠেন তিনি। ওই সহকর্মীর কর্মস্থল ঢাকায় হওয়ায় তিনি টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় নেমে যান। আর ওই বাসেই ময়মনসিংহে পৌঁছানোর কথা ছিল রুপার।

সহপাঠীর দেয়া ক্লু অনুসারে অভিযুক্ত বাসের চালকসহ পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। আটকৃতদের আদালতে হাজির করা হলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল ইসলাম, গোলাম কিবরিয়া ও মো. শামছুল হক পৃথক পৃথকভাবে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

বাসের হেলপার ময়মনসিংহের মির্জাপুর গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে আকরাম, এমদাদুল হকের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম ও মুক্তাগাছা উপজেলার নন্দীবাড়ি গ্রামের খোরশেদের ছেলে শামীম হোসেন। এছাড়া মধুপুর থানায় আটক অপর দুইজন হচ্ছে বাসের চালক হাবিব ও সুপারভাইজার সফর।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ওই দিন তরুণী ছাড়াও বাসে পাঁচ-ছয়জন যাত্রী ছিল। অন্য সব যাত্রী সিরাজগঞ্জ মোড়, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্ত ও এলেঙ্গায় নেমে যায়। এরপর বাসটি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কাছাকাছি এলে বাসের চালকের সহকারী শামীম তরুণীকে জোর করে পেছনের আসনে নিয়ে যান। এ সময় তরুণী তার কাছে থাকা পাঁচ হাজার টাকা ও মুঠোফোন শামীমকে দিয়ে তাকে নির্যাতন না করতে হাতজোড় করে অনুরোধ করেন। কিন্তু শামীম কোনো কথাই শোনেননি। পরে শামীম, আকরাম ও জাহাঙ্গীর তাকে ধর্ষণ করেন। তিনি কান্নাকাটি ও চিৎকার করা শুরু করলে তারা তিনজন মুখ চেপে ধরেন। একপর্যায়ে ঘাড় মটকে তাকে হত্যা করে। পরে মধুপুর উপজেলা সদর অতিক্রম করে বন এলাকায় রাস্তার পাশে লাশ ফেলে রেখে চলে যায় তারা। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মধুপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

নিহতের বড় ভাই হাফিজুর জানান, রুপা শিক্ষিতা ও আমাদের অহংকার ছিল। লেখাপড়া শেষের দিকে। লেখাপড়াটা শেষ হলেই নিজেকে গুছিয়ে নেয়ার কথা রুপার। অথচ এই সম্ভাবনাময় বোনের মৃত্যু আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। তিনি ওই নরপশুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেন।

মধুপুর থানা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার তিনজন পুলিশ ও আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে। আজ বুধবার বাকি দুজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের কাছে বাসের চালক হাবিব ও সুপারভাইজার সফরও ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এছাড়া নিহতে ব্যাগটি উদ্ধার হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৩০আগস্ট/আরকে/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :