চলন্ত বাসে তরুণী ধর্ষণ: চালক ও সুপারভাইজারের জবানবন্দি

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল
 | প্রকাশিত : ৩০ আগস্ট ২০১৭, ১৯:৪৮

টাঙ্গাইলের মধুপুরে বগুড়ার একটি যাত্রীবাহী বাসে তরুণী ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন চালক হাবিবুর রহমান হাবিব ও সুপারভাইজার সফর আলী ওরফে গেন্দা। এসময় লিটন মিয়া নামে একজন সাক্ষীরও জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

বুধবার দুপুর আড়াইটা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টাঙ্গাইলের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রোকন কুমার দাস, গোলাম কিবরিয়া ও মো. শামছুল আলম আলাদা আলাদাভাবে তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মধুপুর থানার উপ-পরিদর্শক কাইয়ুম খান চৌধুরী।

এ নিয়ে গণধর্ষণের পর হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার পাঁচ আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিসহ একজন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হলো। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে বিচারক বাসচালক ও সুপারভাইজারকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এরা আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ধর্ষণে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে জানান, এক সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে তাদের পরিচালিত ময়মনসিংহগামী ছোঁয়া পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৩৯৬৩) বাসে ওঠেন ওই তরুণী। ওই তরুণী ছাড়াও বাসে আরো পাঁচ-ছয়জন যাত্রী ছিল। বাসে থাকা অন্য সব যাত্রী সিরাজগঞ্জ মোড়, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্ত ও এলেঙ্গায় নেমে যায়। তরুণীর সহকর্মীর কর্মস্থল ঢাকায় হওয়ায় তিনিও টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় নেমে যান। তবে ওই বাসেই ময়মনসিংহে পৌঁছানোর কথা ছিল ধর্ষিত ও হত্যার শিকার যুবতী। এরপর বাসটি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কাছাকাছি এলে বাস চালকের সহকারী শামীম তরুণীকে জোর করে পেছনের আসনে নিয়ে যান। এ সময় তরুণীটি তার কাছে থাকা পাঁচ হাজার টাকা ও মুঠোফোন শামীমকে দিয়ে তাকে নির্যাতন না করতে হাতজোড় করে অনুরোধ করেন। কিন্তু শামীম কোনো কথাই শোনেননি। পরে শামীম, আকরাম ও জাহাঙ্গীর তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় ধর্ষিতা তরুণী কান্নাকাটি ও চিৎকার শুরু করায় তারা তিনজন তার মুখ চেপে ধরে। একপর্যায়ে ঘাড় মটকে তাকে হত্যাও করে তারা। পরে মধুপুর উপজেলা সদর অতিক্রম করে বন এলাকায় রাস্তার পাশে ওই তরুণীর মরদেহটি ফেলে রেখে চলে যায় তারা।

এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোর্ট ইন্সপেক্টর আনোয়ারুল ইসলাম।

এছাড়াও গত মঙ্গলবার বিকালে ময়মনসিংহের মির্জাপুর গ্রামের আকরাম, জাহাঙ্গীর আলম ও মুক্তাগাছা উপজেলার নন্দীবাড়ি গ্রামের শামীম হোসেন একই বক্তব্যে গণধর্ষণের কথা স্বীকার করে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. গোলাম কিবরিয়া, মো. আমিনুল ও মো. সামছুল হক এর আদালতে পৃথক পৃথক জবানবন্দি দেয় বলেও জানান তিনি।

জবানবন্দি শেষে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আটক বাসচালক ময়মনসিংহের মির্জাপুরের হাবিব, সুপারভাইজার একই এলাকার সফর আলী ওরফে গেদু, হেলপার আকরাম হোসেন, জাহাঙ্গীর হোসেন ও মুক্তাগাছা উপজেলার নন্দীবাড়ির শামীম হোসেন।

প্রসঙ্গত, ২৫ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টার দিকে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কের মধুপুর উপজেলাস্থ পঁচিশ মাইল এলাকার সুমী নার্সারির নিকট রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অজ্ঞাত পরিচয়ের একটি তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে মধুপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আলমগীর কবিরের নেতৃত্বে ওসি মো. সফিকুল ইসলাম, পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নজরুল ইসলাম, অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আমিনুল ইসলামসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন। পরে মরদেহটি থানায় আনা হয়।

এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধার হিসেবে সংবাদ প্রকাশ পায়।

এদিকে মরদেহের পরিচয় না মেলায় শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ মরদেহ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করে পুলিশ। এরপর সোমবার গণমাধ্যমে উদ্ধার মরদেহের ছবি ও সংবাদ পরে শনাক্ত করেন নিহতের বড় ভাই মো. হাফিজুর রহমান। পরে থানায় এসেও মামলা করেন তিনি।

বড় ভাইয়ের দেয়া তথ্য মতে, পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়। তিনি সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার আমানবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।

এ-ও জানা যায় মেয়েটি ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্রী। রূপা বগুড়া আজিজুল হক কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে ঢাকার আইডিয়াল ল’ কলেজে এলএলবি শেষ বর্ষে অধ্যায়ন ছিলেন।

ঘটনার দিন তিনি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশও নিয়েছিলেন।

এদিকে ময়মনসিংহ জেলা সদরে ইউনিলিভার কোম্পানির প্রোমোশনাল ডিভিশনে কাজ করছিলেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/৩০আগস্ট/আরকে/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :