ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ

প্রকাশ | ৩১ আগস্ট ২০১৭, ১৮:১৮

বাগেরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

বাগেরহাটে আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান ফকির ফহম উদ্দিন এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এক তরুণীকে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার রাত একটার দিকে পুলিশ ধর্ষিতা ওই তরুণীকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছে।

বুধবার রাতে সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের রনজিতপুর গ্রামের একটি বাগানে নিয়ে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়।

বৃহস্পতিবার সকালে বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহদাৎ হোসেন ও বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহাতাবউদ্দিন হাসপাতালে ধর্ষিতা ওই তরুণীকে দেখতে যান এবং তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

দুপুরে ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষা বাগেরহাট সদর হাসপাতালে সম্পন্ন হয়েছে।

তবে আওয়ামী লীগ নেতা দলীয় চেয়ারম্যান ফকির ফহম উদ্দিন তার বিরুদ্ধে করা ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তিনি বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।

বৃহস্পতিবার বিকালে বাগেরহাট মডেল থানায় ধর্ষিতার বড় বোন বাদী হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা চেয়ারম্যান ফকির ফহম উদ্দিনসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেছেন। তবে পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত কাউকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন তরুণী বৃহস্পতিবার সকালে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, গত শুক্রবার আমি বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের উত্তর খানপুর গ্রামের ভগ্নিপতি তায়েব আলীর বাড়িতে বেড়াতে আসি। বুধবার সন্ধ্যায় আমার বড় বোনের ঈদের কেনাকাটা করতে পাশের ফয়লাহাট বাজারে যাই। সেখানে কেনাকাটা করে ভ্যানযোগে বাড়ি ফেরার পথে রনজিতপুর গ্রামের কাছে পৌঁছলে তিনটি মোটরসাইকেলে চেয়ারম্যানসহ আটজন আমাদের ভ্যানটি গতিরোধ করে। তারা আমার বড় বোন ও আমাকে মারধর করে আমাকে ভ্যান থেকে নামিয়ে পাশের একটি বাগানে তুলে নিয়ে যায়। সেখানে চেয়ারম্যান দাঁড়িয়ে থেকে তার সহযোগীদের আমাকে ধর্ষণ করতে বললে তারা তিনজনে পালাক্রমে ধর্ষণ করে চলে যায়। আমি চেয়ারম্যান ছাড়া অন্য কাউকে চিনতে পারিনি। পরে আমার বোন স্থানীয় লোকজন নিয়ে আমাকে উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ সেখানে এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

ধর্ষিতার বড় বোন অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান শেখ ফহম উদ্দিনের বাড়ি পাশেই আমাদের বাড়ি। তার সাথে আমাদের কোন বিরোধ নেই। ২-৩ দিন আগে চেয়ারম্যান ফহম বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমার বোনকে রাস্তায় দাঁড়ানো দেখে ওর ওড়না ধরে টান দিলে আমার বোন তাকে গালমন্দ করে। আমার বোন বাড়িতে এসে বিষয়টি জানালে আমি তাকে বলি চেয়ারম্যান সাহেব হয়ত তোর সাথে ফাজলামো করেছে। চেয়ারম্যান আমার বোনের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে এই নির্যাতন চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জহিরুল ইসলাম বলেন, বুধবার রাতে মারধর ও ধর্ষণের শিকার হওয়া এক তরুণীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাকে গাইনি ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাদাৎ হোসেন বলেন, পুলিশ রাতেই খবর পেয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। বৃহস্পতিবার সকালে আমরা হাসপাতালে গিয়ে মেয়েটির চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছি এবং তার জবানবন্দি গ্রহণ করেছি। বাগেরহাট সদর হাসপাতালে তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। মেয়েটির বড় বোন বাদী হয়ে থানায় ইউপি চেয়ারম্যান ফকির ফহম উদ্দিনসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেছেন। জড়িতদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চেয়ারম্যান ফকির ফহম উদ্দিন বলেন, আমি বুধবার রাতে আমার লোকজন নিয়ে ওই পথ দিয়ে আসছিলাম। এসময়ে আমার গ্রামের তায়েব আলীর স্ত্রী ও তার বেড়াতে আসা শ্যালিকা মাহমুদাকে ভ্যানযোগে আসতে দেখি। তায়েব আলীর পরিবারের কারণে আমার গ্রামের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তাই ভ্যানচালককে ওদের ভ্যানে না নিতে গালমন্দ করলে ওরা চলে যায়। এরপর আমি বনজিতপুর গ্রামের চায়ের দোকানে আমার লোকদের নিয়ে চা খেয়ে বাড়ি চলে আসি। পরে আমি জানতে পারলাম আমার রাজনৈতিক দলের প্রতিপক্ষরা আমাকে ও আমার সমর্থকদের ফাঁসাতে মিথ্যা ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করেছে।

(ঢাকাটাইমস/৩১আগস্ট/প্রতিনিধি/এলএ)