ব্যস্ততার তুঙ্গে কামারশালা
ঈদকে সামনে রেখে সবারই প্রত্যাশা একটু বেশি। প্রত্যাশায় এগিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। একদিনের কসাই হতে ঢাকার বুকে পাড়ি জমিয়েছেন অনেকেই। ঢাকাস্থ রিকশাচালক, দিনমজুরাও এই একদিনের জন্য কসাই বনে যান। এই একদিনের চাহিদা মেটাতে প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণ কসাই সরঞ্জাম। তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন, রাজধানীর কামারশালাগুলোও।
মুসলিম উম্মাহর অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। এই ঈদকে কেন্দ্র করে সবারই রয়েছে একটু বাড়তি প্রস্তুতি। কারো কোরবানির পশু কেনার ধুম, কারোবা সে ধুমে অংশ নেয়া। ঈদের পশুটি কোরবানি করে তা কেটেকুটে দেয়ার কাজটি করে থাকেন এ সমাজেরই নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। কাটাকুটির জন্য প্রয়োজন চাপাতি, ছুরি ও বটি। যার যোগান দিয়ে থাকেন কামারশালাগুলো।
রাজধানীজুড়ে রয়েছে অসংখ্য কামারশালা। ঈদকে কেন্দ্র করে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছে এই কামারশালাগুলো। আগুনের সাথে খেলে, লোহা গলিয়ে বিভিন্ন আকার দেন কামার। তৈরি হচ্ছে ছুরি, বটি, চাপাতিসহ অনেক ধারালো অস্ত্র। আছে ঘাস কাটার কাচি। গত রমজানের ঈদের পর থেকে কাজে লেগে পড়েছেন কামাররা।
মোহাম্মদপুর ঢাকা উদ্যানের কামারশালায় গিয়ে দেখা যায় ছুরি-চাপাতি তৈরির দারুণ ব্যস্ততা। কামারশালাটির মালিক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘রোজার পর থাইকা কাজে লাগছি। বিক্রি হইতাছে, বানাতাছি। এখনো ঐ রকম বেচাকেনা শুরু অয় নাই। কাল থাইকা বেচা বাড়বো। অনেকে তো এহনো গরুই কিনে নাই।’
পুরাতন ছুরি-চাপাতি ধার দিতে ব্যস্ত অনেক কামারশালা। নতুন গুলো বিক্রির চেয়ে অনেক জায়গায় পুরোনোগুলো ধার দেয়া ও মেরামতের কাজ বেশি। নবোদয় হাউজিং এর এক কামারশালায় চলছে তেমন ব্যস্ততা। লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন এখানে। চলছে মেরামত করার কাজ। মৌসুমি কসাইরাই এখানকার প্রধান খদ্দের।
জসিম একজন প্রতিবন্ধী। পায়ের উপর ভর করে দাঁড়াতে না পারলেও, হাত দুটো ঠিক আছে। চার বছর আগে পাবনা থেকে ঢাকায় আসেন তিনি। সেই থেকে প্রতি কোরবানিতে কসাইয়ের কাজ করেন। উদ্দেশ্য মাংস পাবেন সাথে কিছু টাকা। নিজের ছুরি-চাপাতি থাকলে এবাজারে দাম পাওয়া যায়। তাই নিজেই কিনেছেন দুটি চাপাতি ও ছয়টি ছুরি। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘গরু কাটতে পারি। প্রতি বছরই কাটি। ছুরি-চাপাতি না থাকলে আর একজনের লগে কাম করা লাগে। টাকাও কম। এরলাইগা নিজেই লোক লইয়া কাম করাই। টাকাও ভাল থাহে। এরলাইগা (ছুরি-চাপাতি) কিন্না নিলাম।’
যারা নিজেরাই কোরবানি দিয়ে থাকেন, তারাও প্রতি বছর নতুন বটি, ছুরি কিনে থাকেন বলে জানান কামাররা। সবার চাহিদা মেটাতে এখনি হিমশিম খাচ্ছেন তারা। চাপ সামলাতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বাড়তি কারিগর।
(ঢাকাটাইমস/০১সেপ্টেম্বর/কারই/কেএস/জেবি)