আমরা যাই এবং ভাবি যাবো না

ধ্রুব এষ
 | প্রকাশিত : ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১০:১৭

আমার বাপ দেখতে কিছুটা সনাতন ঘটকের মতো আর মদও গেলে দিনরাত।

আর ব্যবসাপাতিও করে। সিনেমা বানায় না। সিনেমা দেখে না। রেডিওর নব ঘুরিয়ে বাংলাদেশ বেতার ঢাকা, আকাশবাণী কলকাতা শোনে। বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, রেডিও বেইজিং শোনে। দুনিয়ার কে কী করল?... তোর এত খবর রাখার কী দরকার?

আমি খুবই বিরক্ত হই।

আর জানালায় একটা কাক ডাকে, কা! কা!

এই কাকটা আমার মা হয়। আমি তার কা-কা-র অর্থ করতে পারি। ও আমার ছেলে! আমি বলি, মা।

আমার মা কিছু না বলে উড়ে যায়। কোথায়ও আর একটা কাকও ডাকে না।

আমি আমার মায়ের মুখাগ্নি করিনি

বাপের করব

ব্লগ লিখব গণ MY FATHER WAS A COW

আমাদের স্কুল গাঙপাড়ে ছিল

গাঙপাড়ের স্কুল

মন্তাজ আলী স্যার ইংরেজি পড়াতেন

আমার বাবার একটা গরু ছিল, ট্রান্সলেশন কর।

মাই ফাদার... ওয়াজ এ কাউ।

হা! হা! হা!

হো! হো! হো!

ম্রিয়মাণ আরও ম্রিয়মাণ দুপুর।

মুশকিল হয়ে গেছে।

সোশ্যাল ফোবিয়ায় আক্রান্ত এরকম কিছু দৃশ্য আমি

কোড ল্যাঙ্গুয়েজে লিখে রেখেছিলাম

এখন আর ডি-কোড করতে পারি না

আরও মুশকিল!

যারা সব দৃশ্য প্রেত হয়ে দেখবে

তারা লোকাল বাসে উঠে পড়েছে

বায়ান্নটা সিটে বায়ান্নটা ধড়হীন মু-

বাসের ড্রাইভার এবং কন্ডাক্টর ধড়হীন

সব শালা ভাবচক্করের গোঁসাই

বাস্তুশাস্ত্র বোঝে

বাস্তুসাপ বোঝে না

এছাড়া সাদা কাগজ ঘুমিয়ে পড়েছে

রঙিন কাগজ নির্ঘুম নিরুদ্দেশে গেছে

সময়ের কারিগর ঝিমোচ্ছেন আয়নার ভেতরে

প্রত্নযুগের পার্পল জোছনা উড়ে যাচ্ছে দেখি

আর

আমি এবং আমার বাপ ধেনো খাই

সকাল দুপুর বিকেল সন্ধ্যা এবং রাতে ধেনো খাই

গিলি না খাই

ধেনো

খাই

ঘরে বসে খাই বারে বসে খাই

আমরা থাকি একটা কানাগলিতে

ধেনো খাই

আর গান গাই

ইয়েলো সাবমেরিন ইয়েলো সাবমেরিন

উই অল লিভ ইন আ ইয়েলো সাবমেরিন...

২.

সবুজ রঙের কিছু জানালা পুড়িয়ে

আইটেম সং দেখছিল বেজন্মার বাচ্চারা

বাঁকাচাঁদ ছিল আকাশে

করপোরেট আবছা জোছনা

চশমার কাচে রিফ্লেক্ট করছিল ধেই ধেই

মহল্লা ছেড়ে কোথায় চলে গেছে কারা

শহর ছেড়ে কোথায় চলে গেছে কারা

কেউ একটা স্ট্যাটাস দিয়ে যায়নি

অথচ যারা গেছে তারা কিনা ক্রাচ ছাড়া হাঁটতে পারে না।

আমরা তাদের সঙ্গে যাইনি

আমি এবং দ্য ম্যান

সনাতন ঘটকের কিছুটা লুক এলাইক

আমার বাপ

আশা করি কেউ একদিন একটা সিনেমা বানাবে হাড়কাঁটা নিয়ে...

মন্তাজ ঠুকরাবে সেই কাকটা

জলচক্ষু সেই কাক, আমার মা হয়

অন্ধকারে আমি একদিন আমার বাবা এবং মাকে দেখেছিলাম

পর্নোগ্রাফি আমি তখনও পড়িনি

শরীর মনে করে শরীর দেখিনি

গাঙপাড়ের স্কুল! গাঙপাড়ের স্কুল!

ছুটি হয়ে গেছে! ছুটি হয়ে গেছে!

ঢং! ঢং! ঢং!

আমার বাপের শরীর

আমার মায়ের শরীর

শঙ্খলাগা... এবং পরবর্তী বোধে ম্যাক্স আর্নস্টের পেইন্টিংয়ের মতো

পরাবাস্তব ফিগারের পরাবাস্তব জেশ্চার

আমি আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম

এই আমার জন্মের লীলাভূমি তবে?

পরাবাস্তব কিছু জেশ্চার

: তুমি বাপ কী করে থাকো?

: কী করে থাকি কী?

আমি কী থাকি?

: তুমি থাকো। আর একটা বিয়ে করে থাকো।

আর একটা শিশু জন্মাও।

: তুই জন্মা

: আমি ভয় পাই

: আমিও ভয় পাই

আমরা ভয় পাই সেই শিশু আমাদের মতো মদ্যপ হতে পারে

আমাদের মতো ভয় পেতে পারে

আমাদের মতো বেঁচে থাকতে পারে

সাংঘাতিক একটা ব্যাপার হয়ে যাবে সেটা

এর চেয়ে তুই না জন্মা শিশু!

এটা কী কোনো রাজনৈতিক ডিসিশন?

অথচ আমাদের কানাগলিতে আমরা একটা নীল গাড়ি দেখি

বাপ বলে, অফ হোয়াইট গাড়ি

আমি বলি, পার্পল রঙের গাড়ি

আমার অত্যন্ত প্রিয় রং পার্পল

ভায়োলেট হলো বেগুনি। পার্পল অন্য রং।

ছাপার কালির রেশিও ধরলে সিক্সটি ফোর পার্সেন্ট মেজেন্টার সঙ্গে টোয়েন্টি সিক্স পার্সেন্ট সায়ান।

আমার এইম ইন লাইফ কী ছিল?

অতি শৈশবে মনে হয় বাপ হবো।

শৈশবে, লেইসফিতা! লেইস!

অতি কৈশোরে বাসের হেলপার।

কৈশোরে পাখি।

কিচ্ছু হইনি।

ডাইনোসরের ডিম হয়ে বসে আছি।

এ এল এ এস!

আমরা বাপ বেটা নিরীহ পাবলিক।

এর সাতে ওর পাঁচে থাকি না।

দল করি না। রাজনীতি করি না।

পুলিশের গাড়ির রং নীল হয় কেন?

সমুদ্র নীল।

সমুদ্রের রং কেন পার্পল হলো না?

পুলিশের গাড়ির রং পার্পল হতো তাহলে?

আমি এবং বাপ তাহলে একটা পার্পল রঙের গাড়িতে উঠতে পারতাম

বাপের কাছে অবশ্য সমুদ্র নীল কি পার্পল, কি কমলা, কি বার্নট অ্যাম্বার,

যে কোনো রংই মিনিংলেস। পতœীহীনতার মতো মিনিংলেস।

কিন্তু তারা কেন আমাদের ধরবে?

মদ্যপানজনিত অপরাধে নাকি?

আইনত পারবে না।

লাইসেন্স আছে আমাদের। এই জুলাইয়ে আবার নবায়ন করেছি।

দেখাতে পারব।

তারা দেখল না। ডেথসিটি গেমসের রোবট পুলিশ।

কথাবার্তার ধরন-ধারণও সে রকম।

এহ! বাপ ব্যাটা দুইটাই মাতাল!

এই যে তোমরা কি হাঁটতে পারবা?

আমরা পারব। কিন্তু আমাদের কথা শুনবে কেন

তারা আমাদের ঢ্যাং দোলা করল

পুলিশের ভ্যান ভর্তি অন্ধকার

সেই অন্ধকারে আরেকজন আছে। পিরিং পিরিং করছে। একতারা বাজাচ্ছে।

গানও ধরল,

অমাবস্যার কাল না গুনে

কাটাও নক্ষত্র বুনে...

গান শেষ করে বলল, সাঁইজি! সাঁইজি! আপনারা কারা গো?

: আমি এবং আমার ছেলে।

: আমি এবং আমার বাপ।

: অ। ভাই সাধুসঙ্গ পছন্দ করেন।

আমাদের সঙ্গে কি একজন সাধু বসে আছে?

সাধু না সাধুর ফসিল?

ভাই কে?

ফসিলের ভাই কে?

আরেকটা ফসিল।

সাধু বলল, ক্যামোফ্লেজ। পুলিশের গাড়ি না এটা

ফসিলের গাড়ি। ফসিল বহনকারী চারচক্রযান।

আমরা কি ফসিল?

হ্যাঁ।

মাটি থেকে কোনো হাত উঠল না যদিও।

পা-ও উঠল না।

কিন্তু আমরা কি রাজনীতি করি?

আমরা কী রাজনীতি করি?

আমরা ডানে বা বাঁয়ে থাকি না।

ভাই বললেন, না থাকলে হবে?

ভাই অথবা আরেকটা ফসিল

আচ্ছা, থাকবো

ডান দিকে না বাঁ দিকে থাকবো?

ভাই অথবা ফসিল জনদরদি। হাঁডি পাতিলের খবর রাখেন

এর-ওর। আড়াই পাখি ভুঁইতে আমাদের ঘরদোর। হলুদ

রঙের পুরোনো বিল্ডিং। শত্রুসম্পতি মার্কা ভাব আছে। কিন্তু তা না।

কুয়ো ছিল আমাদের উঠোনে। বুজিয়ে ফেলছে। একদিন সকালে উঠে

দেখি। অশৈলী কা-। একরাতে কি একটা কুয়ো এরকম মাটি

ফেলে বুজিয়ে দেওয়া যায়? রাত? এক রাত লাগে না, নিমেষে যায়।

বাপ বিকারহীন থাকলেও আমি অনেক

রহস্য-রোমাঞ্চ কাহিনি পড়েছি। আমার মনে হয় সীতারাম পাটনীর মেয়ে অহল্যাকে কেউ এই

কুয়োয় মাটি চাপা দিয়ে রেখেছে। অহল্যাকে ধরে নিয়ে

গিয়েছিল কারা। পাটক্ষেতে ভিডিও করেছে। অহল্যাকে কেউ আর বাস্তবে দেখেনি।

ইউটিউবে, গুগলে দেখেছে।

নিযুতবার।

ভুঁইহীন সীতারাম পাটনীর কন্যা অহল্যা।

আমাদের ভুঁই আছে

এই ভুঁইতে কারখানা হবে। ফসিল অ্যান্ড ব্রাদার্স কনডম কারখানা।

আশপাশের আর সব ঘরদোর তারা ন্যায্য মূল্যে

কিনে নিয়েছে। আমাদের দুই পাখি ভুঁইও কিনবে।

যদিও এর ন্যায্য মূল্য কত এটা তারাই নির্ধারণ করবে

কিন্তু

আমি কখনও কনডম ব্যবহার করিনি।

বাপ বলল।

আমিও করিনি।

আমি বললাম।

বাপ বলল তুই আমাকে কখনো বলিসনি।

তাতে কিছু যায় আসে আর?

তবে আমাদের ভুঁই আমরা দেব না কনডম কারখানার জন্য। শুনে ‘ওক্কে!’ বলে তারা একটা ভিডিও

দেখতে বাধ্য করল আমাদের। পাটক্ষেতে অহল্যার ভিডিও।

তারা আমাদের মু-ু তাক করে দুটো বেরেটা অটোমেটিক ধরে রাখল

পলক ফেললে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে শ্যুট করবে

আমরা পলক না ফেলে দেখলাম।

কালো পাথরের মতো অহল্যা। সবুজ পাটক্ষেত। দেখলে যদি তারা আমাদের ছেড়ে দেয়।

আড়াই পাখি ভুঁইয়ের কথা ভুলে যায়।

মাথা খারাপ চিন্তা।

যাত্রাপালা-কোয়ালিটির মালও আজকাল তড়পায়,

বিনা যুদ্ধে নাকি দেব সুচাগ্র মেদিনী!

কার্টুন! কার্টুন!

কারা এত কার্টুন আঁকে দেয়ালে?

কার কার্টুন?

অযুত নিযুত কার্টুনের একটা কি দেখতে সনাতন ঘটকের মতো

অতএব আমার বাপের মতো

আর একটা কার্টুন আমার মতো

আমাদের ভুঁই এখন ফসিলদের

আমরা কার্টুনের বাপ হয়ে গেছি

আমার বাপ একটা কার্টুনের বাপ

আমি একটা কার্টুনের বাপ

আমরা ধেনো খাই এবং গান গাই

ইয়েলো সাবমেরিন ইয়েলো সাবমেরিন

উই অল লিভ ইন আ ইয়েলো সাবমেরিন...

৩.

লালবাউলের লাশ পড়ে আছে রাস্তায়

পত্রিকায় নিউজ ছাপা হয়েছে

কিছু একটা গড়বড় হয়েছে কোথাও

লালবাউলের রক্ত সোনালি দেখাচ্ছে

অন্তর্জালে বউমাছ ধরা পড়েছে

বউমাছের টরসো

বিবাগীরা এই দৃশ্য দেখেনি

সম্পূর্ণ একটা আর্টওয়ার্ক হলে দেখত

স্ট্যাটাস না দিয়ে

টুইট না করে

ফিরে আসে কাটা মু-ুরা

ফিরে আসে ফসিল

ফিরে আসে বাস

ফিরে আসে মাতাল নগরীর ট্রাফিক

আমরা কী করি?

কী করবো?

এখানে থাকব না, চলে যাব?

যেতে হবেই।

যেতেই হবে।

না গেলে আমাদের কাটামু-ুর জন্য

বাসের টিকিট কাটবে ফসিলরা

আমরা যাই এবং ভাবি যাবো না

আরে ইয়ে, ডট ডট ডট

ফসিলরা কি আমাদের বাপ হয় নাকি

আমার বাপ আমার বাপ

আমার বাপের বাপ পরলোকগত

তাহলে কেন?

আমরা ফসিলদের কথা কেন শুনবো?

ভয়ে।

হ্যাঁ, ভয়ে।

ভয়ে আমরা যাই

এবং ভয়ে ভয়ে ভাবি যাবো না

আর ধেনো খাই আর গান গাই

ইয়েলো সাবমেরিন ইয়েলো সাবমেরিন

উই অল লিভ ইন আ ইয়েলো সাবমেরিন...!

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :