‘হামার ফির ঈদ কোটে পাইলেন বাহে’

রাহেবুল ইসলাম টিটুল, কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট)
 | প্রকাশিত : ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১২:২২

‘এই চরোত কাউয়ো কোরবানি দিতে পারে না বাহে। ঈদের গোশত কেমন করি খামো। ছওয়া পোওয়াই বা গোশত কোটে থাকি খাইবে। হামার ফির ঈদ কোটে পাইলেন?’

বৈরাতী কাশীরাম আমিনগঞ্জ চর হাজিরহাটের দরিদ্র গৃহবধূ আহেদা বেগম (৫০) ও আব্দুল হক ঈদের কথা জিজ্ঞেস করতেই কষ্ট আর হতাশা ঝরানো কণ্ঠে এমন কথাই বললেন।

এই চরের শতাধিক পরিবারের মধ্যে কেউই কোরবানি দেয় না। কত বছর আগে এই চরে গরু-ছাগল কোরবানি হয়েছে স্মৃতির ঝুলি হাতড়ে বলতে পারলেন না কেউই। বৃদ্ধ হোসেন আলী (৬০) এ ব্যাপারে ঢাকাটাইমসকে বলেন, 'একবেলায় ভাত জোটে না কিসের কোরবানি, কিসের ঈদ।'

তুষভান্ডার ইউনিয়নের বৈরাতী চর। সরেজমিন গিয়ে জানা গেল, এই চরের প্রায় শতভাগ পরিবারই দরিদ্র-দিনমজুর। এলাকায় সারা বছর কাজের অভাব থাকায় যেতে হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। চরের বাসিন্দা হাফিজার (৫০) ঢাকাটাইমসকে বলেন, 'এই চরোত বালা ছাড়া কিছুই নাই। কোনো ফসল ফলে না। তাই কামের জন্য হামরা বিদ্যাশ খাটি।’

আছিয়া বেগমের কোলের শিশুটি ছাড়াও আরও চার ছেলেমেয়ে। সবাই পিঠাপিঠি। বছর বছর সন্তান হওয়ায় শরীর কাহিল। পরিবার পরিকল্পনার কথা কোনো দিন শোনেননি বলে জানান। ঈদের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, গত ঈদে তাঁর পাঁচ সন্তানের কাউকেই নতুন জামা দিতে পারেননি। কার্তিকের মঙ্গায় এবার এমনিতেই নাকাল। এখনো কোথাও পুরোদমে কাজকাম শুরু না হওয়ায় তাঁর স্বামীও বেকার। তাই এবারও সন্তানদের খুশি করা সম্ভব হবে না তাঁর।

চরের শিশু হাসান (১৩), রুজিনা (১২),ইলাসহ (১০) অনেক শিশুর কাছে ঈদ মানে বড়জোর সেমাই খাওয়া। মাংস খাওয়ার কথা কস্মিনকালে কখনো ভাবে না তারা। ঈদে কী খাবে? জিজ্ঞেস করলে তারা সবাই সেমাই খাওয়ার কথাই বলল।

চরের বাসিন্দা নজীর হোসেন (৫০), কাশেম আলী (৬০) জানান, এই চরের মানুষের মধ্যে কারোরই কোরবানি দেয়ার সামর্থ্য নেই। এত দুর্গম এলাকায় কেউ কোনো দিন মাংস বিলি করতেও আসেন না। তাই ঈদে মাংস খাওয়া হয় না তাদের। অবশ্য দুই-একজনের সামর্থ্যে কুলালে কালীগঞ্জ বাজার থেকে ব্রয়লার মুরগি কিনে এনে ছেলেমেয়েদের খাওয়ান।

তাঁরা জানান, বন্যায় প্রতি বছর ঘরবাড়ি ডুবে যায়। নদীভাঙনে বাস্তুহারা হন প্রতিবছর। যাওয়ার জায়গা নেই বলে কষ্টে দিন কাটান চরের কোনো এক প্রান্তে। আবাদি জমি নেই। এমনকি রাস্তাঘাটও নেই। স্কুল-বাজার তো বহু দূরের পথ। এভাবেই প্রকৃতি সঙ্গে যুদ্ধ করে তাঁরা টিকে আছেন। উৎসব-পার্বণে তাঁদের মনে কোনো খুশি থাকে না। ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে কষ্টের ধূপশিখাটি আরো উসকে ওঠে মাত্র।

এবার তিস্তার হটাৎ বানের শিকার দুই সহস্রাধিক পরিবারের। তাদের মধ্যে কোনো ঈদের আনন্দ নেই। তারা ঘর সরিয়ে নেয়া এবং ঠাঁই গড়ে তোলার চিন্তায় দিশেহারা। সে কারণে তাদের মধ্যে ঈদ নিয়ে কোনো ভাবনা নেই।

এ বিষয়ে কথা হয় তুষভান্ডার ১২৩নং ইউপি সদস্যদের সাথে। তারা জানান, সরকারি কোনো বাজেট থাকলে আমরা তাদের দিতে পারতাম।

তুষভান্ডার উপজেলা চেয়ারম্যান মাহাবুবুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘যদি আমরা কোনোভাবে পাই তাদের সহযোগিতা করতে তাহলে আমি নিজে গিয়ে তাদের হাতে মাংস দেব এবং তাদেরকে খুশি করে আসবো।’

তিনি ঢাকাটাইমসকে জানান, এবারের ঈদের আনন্দ ও কোরবানির মাংস থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বানভাসি অসহায় মানুষেরা।

(ঢাকাটাইমস/০১সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :