দিনাজপুরে জমে উঠেনি কোরবানির হাট

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর
 | প্রকাশিত : ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৬:১৫

পবিত্র ঈদুল আজহা ঘনিয়ে এলেও উত্তরের সীমান্ত জেলা দিনাজপুরে তেমন জমে উঠেনি কোরবানি পশুর হাট। কোরবানি উপলক্ষে গরু মোটাতাজাকরণ খামার করে ব্যাপক সাফল্য পেলেও সাম্প্রতিক বন্যার কারণে অন্যান্যবারের চেয়ে এবার ক্রেতা কম থাকায় গরুর দাম তেমন একটা পাচ্ছে না খামারিরা। এমনিতে বন্যার ধকল, তারপর ভারত থেকে গরু আসায় সৃষ্টি হয়েছে এ পরিস্থিতি। গরু মোটাতাজাকরণ করে এবার অনেক খামারি পড়েছে বিপাকে।

উত্তরের সীমান্ত জেলা দিনাজপুরে শেষ মুহূর্তেও জমে উঠেনি কোরবানি পশুর হাট। গরু অনেক থাকলেও এবার পাল্টে গেছে কোরবানি পশুর হাটের চিত্র। নেই তেমন কোন বেচাকেনা। কোরবানি উপলক্ষে গরু মোটাতাজাকরণ খামার করে ব্যাপক সাফল্য পেলেও এবং অন্যান্যবারের চেয়ে এবার ভারত থেকে গরু কম এলেও সাম্প্রতিক বন্যার কারণে ক্রেতা কম থাকায় গরুর দাম তেমন একটা পাচ্ছে না খামারিরা।

দিনাজপুর বিরল উপজেলার পুরিয়া গ্রামের খামারি মো. মতিউর রহমান মতি জানান, এবার প্রচুর লস খেতে হচ্ছে আমাকে। তাই, গরু বিক্রি করা বাদ দিয়েছি। তারপরেও স্বস্তি নেই। সাম্প্রতিককালের বন্যার কারণে গো-খাবার খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। কোথাও পাওয়া গেলেও দাম অত্যন্ত বেশি। এ অবস্থায় খামার চালানোর মুশকিল হয়ে পড়েছে। খামারের শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছি না। মহাবিপাকে পড়েছি আমরা।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুর জেলায় ৫৯ হাজার দু’শ ৪৪ জন খামারি এক লাখ ২৭ হাজার ৩৬৯টি গরু এবং ৭০ হাজার ৭৯৬টি ছাড়ল ভেড়া কোরবানির জন্য পালন করেছে। এর মধ্যে দুগ্ধ খামারও রয়েছে। যেখানে গাভী পালন করে দুধ উৎপাদনের পাশাপাশি গরু মোটাতাজা করেছে অনেকে। অল্প সময়ে কম পরিশ্রমে গরু মোটাতাজাকরণ করে গতবার লাভ পাওয়ায় এবার অনেক বেকার যুবক নিজ বাসাবাড়িতে এই গরু পালন করে। উন্নত জাতের গরুর পালনের পাশাপাশি দেশীয় প্রজাতির গরুর মোটাতাজাকরণ হয় এসব খামারে। কিন্তু এবার তেমন একটা গরু বিক্রি হয়নি তাদের। তাই লাভ না পাওয়ার আশংকাই করছে তারা কাচা ঘাস, চকর, ভুষি, আকারী, খুদি চালের ভাত, ফিট, ভুট্টার গুড়া, শুকনো খড়সহ ভিটামিন, মিনারেল এবং শর্করা জাতীয় খাবার সরবরাহ করা হয় এসব গরুর জন্যে। নিয়মিত গো-খাবার সরবরাহের পাশাপাশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং নিয়মিত গরুর গোসল করিয়ে চার থেকে ছয় মাস পালন করা হয় এসব গরু। তাই নিজের পাশাপাশি অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করে খামারিরা।

দিনাজপুর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, ররাবরেই জেলার কোরবানির পশুর চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কোরবানির পশুর চাহিদা মিটিয়ে আসছে দিনাজপুরের গো-খামারিরা। কিন্তু সাম্প্রতিক বন্যা কারণে অন্যান্যবারের চেয়ে এবার ক্রেতা কম থাকায় গরুর দাম তেমন একটা পাচ্ছে না তারা। এমনিতে বন্যার ধকল তার পর ভারত থেকে গরু আসায় সৃষ্টি হয়েছে এ পরিস্থিতি।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, খামারিরা পশুর ন্যায্য মূল্য পেলে আগামীতে আরো খামার বাড়ানোর চেষ্টা করবে খামারিরা। বিভিন্ন এলাকায় প্রাণিসম্পদ বিভাত খামারিদের প্রশিক্ষণ ও গো-খামারে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছে।

জেলার ঐতিহ্যবাহী গরুর হাট রেলবাজার। ঈদ মৌসুমে এ হাটে প্রায় ৩০ কোটি টাকার গরু-ছাগল বিক্রি হয়ে থাকে। বন্যার কারণে এ পশুর বাজারে ধস নেমেছে। ঈদের সময় ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে জেলার বড় হাটগুলোতে ব্যবসায়ীদের আগমন ঘটতো। এবার বাহির থেকে তেমন বড় ব্যবসায়ীদের হাটে আসেনি।

এজন্য এলাকার পশুগুলো এলাকাতেই থাকছে। হাটে প্রচুর গরু-ছাগলের আমদানি হয়েছে। পশুর দাম তুলনামূলক অনেক কম। এ কারণে ব্যবসায়ী, গরু খামারি এবং গৃহস্থদেরকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আবার বেকার যুবক যারা কর্মসংস্থানের জন্য পশু লালন-পালন করেছে তাদের অবস্থাও এবার করুণ। তবে দাম না হওয়ায় অনেককে গরু ফেরত নিয়ে যেতে দেখা গেছে।

ফাসিলাডাঙ্গা হাটে গরু বিক্রির জন্য এসেছেন ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, এবার ঈদ উপলক্ষে ১০টি ষাড় গরু কিনেছি। প্রতিটি গরু ৪০-৬০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ মূল্য ১ লাখ টাকা করে। বন্যার কারণে গরুর বাজার এখন অনেক কম। যারা বাড়ির গরু বিক্রি করবে তাদের তো আর লাভ বা লোকসানের কোনো যুক্তি আসে না। তবে আমার প্রতিটি গরুতে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো লোকাসান গুনতে হবে।

কাহারোল উপজেলার গৃহস্থ রমজান আলী বলেন, বন্যার আগে বাড়িতে ব্যবসায়ীরা এসে তার ষাড়টির দাম বলেছিল ৫৫ হাজার টাকা। কিন্তু সেই গরু এখন হাটে এনে ৪৪ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হলো তাকে।

বোচাগঞ্জ উপজেলার মাহেরপুর এলাকার কৃষক জুয়েল ইসলাম বলেন, বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল তাদের এলাকার। এখন গো-খাদ্য বলতে নেই এলাকায়। বাড়িতে লালন-পালন করা একটি গরু হাটে নিয়ে এসেছি। গরুটির দাম ৫৫ হাজার টাকা হওয়ার কথা, ক্রেতারা দাম হাকছেন ৩৬ হাজার টাকা। গবাদিপশুর খাবারের সমস্যার কারণে দাম অনেকটাই কমে গেছে।

হাটে পশুর আমদানি থাকলেও বন্যার কারণে তেমন বেঁচা-বিক্রি নেই হাটে। তবে বন্যার পানি নেমে যাওয়া এবং ঈদ ঘনিয়ে আসায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় বিভিন্ন হাটগুলোতে প্রচুর দেশীয় গরুর আমদানি হয়েছে। গরুর তুলনায় দামও অনেকটা কম। বিক্রেতারা পশু বিক্রি করতে তেমন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না।

কোরবানি উপলক্ষে গরু মোটাতাজাকরণ খামার করে ব্যাপক সাফল্য পেলেও এ অঞ্চলের খামারিরা গরুর ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় চরম লোকসানের মুখে পড়েছে।

এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামীতে গরু মোটাতাজা খামারের পরিধি কমে যাবে বলে আংশকা করছে সংশ্লিষ্টরা।

(ঢাকাটাইমস/১সেপ্টেম্বর/এসএএস/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :