রাজধানীতে চামড়ার দামে তারতম্য

জহির রায়হান ও আব্দুল আউয়াল খান
 | প্রকাশিত : ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৪:২০

রাজধানীতে কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচা শুরু হয়েছে। কাঁচা চামড়ার দাম সরকার নির্ধারণ করে দিলেও বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেছে দামের তারতম্য। রামপুরা ও মধুবাগে যে চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় সেই চামড়াই সাইন্সরল্যাব বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১৩০০ টাকায়।

সারা বছর যে গরু ও মহিষ জবাই হয় এর ৬০ শতাংশই হয়ে থাকে কোরবানি দিন। এজন্য এই দিনে চামড়া কিনেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। আজও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের ব্যাপক তৎপরতা চোখে পড়েছে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ ঢাকাটাইমসকে বলেন, এবার ৯০ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ধরা হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, ঢাকার বাইরের গরুর চামড়ার দাম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এ ছাড়া প্রতি বর্গফুট ছাগলের চামড়ার দাম সারাদেশে ২০ থেকে ২২ টাকা এবং খাসির চামড়ার দাম ১৫ থেকে ১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর পোস্তা, সাইন্সল্যাব, ধানমন্ডি, রামপুরা এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, চামড়া কেনা শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। চামড়ার দর নিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

সাইন্সল্যাব এলাকায় চামড়া কিনছেন ট্যানারি এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি সাখাওয়াত হোসেন। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এবার আমরা ৯০ লাখ চামড়া কেনার লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও বন্যার কারণে এই লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হবে না। এবার ৮০ লাখ চামড়া হতে পারে।’

সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘চামড়া সংগ্রহের ৫-৬ ঘণ্টার মধ্যেই যেন লবণ দেয়া হয়। তা না হলে চামড়ার গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাবে।’ এসময় তিনি অভিযোগ করেন, কোরবানির সময় মিল মালিকরা লবণের দাম বাড়িয়ে দেন। ফলে তাদের চামড়া সংরক্ষণে খরচ বেশি হয়।

সাইন্সল্যাব এলাকায় প্রতি পিস চামড়া ৯০০ থেকে ১৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে এগুলো কোনো লবণ দেয়া নয়।

মধুবাগ এলাকায় চামড়া কিনছেন হাসান চৌধুরী। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা প্রতি পিস চামড়া কিনছি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে। কোনো চামড়াই ৮০০ টাকার বেশি দিয়ে কিনছি না। আমরা আশা করছি এ চামড়া ১৩০০ থেকে ১৬০০ টাকা বিক্রি করতে পারবো। চামড়া সিন্ডিকেট না হলে প্রতি স্কয়ার ফিট ৭০ টাকার বেশি দাম হবে না।’

রামপুরা এলাকায়ও দেখা যায় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা করে প্রতিপিস চামড়া বিক্রি হচ্ছে।

পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকায় দেখা যায় চামড়া ঢুকছে বিভিন্ন আড়তে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চামড়া ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা সারা বছর চামড়া ব্যবসা করি, কিন্তু মৌসুমি ব্যবসায়ীদের জন্য আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’ এসময় তিনি সত্যিকারে চামড়া ব্যবসায়ীদের সরকারের সহায়তার আহ্বান জানান। এসময় তিনি ভারতের বাজারে চামড়ার দাম বেশি হওয়ায় পাচারের আশঙ্কা করেন।

রাজধানীর পোস্তা কাঁচা চামড়ার সবচেয়ে বড় বাজার। বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে ব্যাবসায়ীরা চামড়া নিয়ে আসেন। মৌসুমী ব্যবসায়ীরাও এখানে আসেন কাঁচা চামড়া নিয়ে।

এদিকে সাভারে ইতোমধ্যেই চামড়া নিয়ে ট্রাক ঢোকা শুরু করেছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখানে যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না। প্রধান সড়কটির বেহাল দশা।

বাণিজ্য, শিল্প ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কাঁচা চামড়া লবণজাতের জন্য রাজধানীর পোস্তা এবং আমিনবাজারের আড়তসহ রাজধানীর বাড্ডার বেরাইদ ও টঙ্গীর চামড়ার আড়তেও সংরক্ষণ করা যাবে। নির্দেশনা অনুযায়ী, কাঁচা বা লবণযুক্ত যেকোনো চামড়াবাহী পরিবহন ঢাকা জেলার ভেতরে অবাধে যাতায়াত করতে পারবে। তবে ঢাকার কোনো চামড়া বাইরে যেতে পারবে না।

ঢাকা জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির তথ্যমতে, প্রতি বছর দেশে এক কোটি ২০ লাখ গরু ও মহিষ জবাই হয়। এর মধ্যে এক কোরবানির মৌসুমেই জবাই হয় ৬০ শতাংশ। আর এর থেকে ৭০-৭২ লাখ পিস চামড়া সংগৃহীত হয়ে থাকে।

এবারের কোরবানি মৌসুমে সংগৃহীত কাঁচা চামড়ার শতভাগ প্রক্রিয়াজাত করতে হবে সাভারের বিসিক চামড়া শিল্পনগরীতে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘সাভারে আমাদের ৮০টি কারখানা প্রস্তুত রয়েছে। হাজারিবাগের চেয়ে তিন গুণ বেশি সক্ষমতা রয়েছে এ কারখানার।’ তিনি অভিযোগ করেন ‘বিসিসিকের অব্যবস্থাপনা আমাদের ঘাড়ে পড়ছে। চামড়া হয়তো সংরক্ষণ করা যাবে কিন্তু ফিনিস লেদার যেটা আমরা রপ্তানি করি সেটা করতে আমাদের সমস্যা হবে। এখনো সব কারখানায় গ্যাস দেয়া হয়নি। রাস্তাও ভাঙাচোরা। ডাম্পিংয়ের কোনো কাজই এখনো ধরা হয়নি।’

ধানমন্ডি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এলাকার বেশির ভাগ মানুষ মসজিদ ও মাদ্রাসায় চামড়া দিয়ে দিচ্ছেন। এ চামড়াগুলো মসজিদ ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করবে।

(ঢাকাটাইমস/০২সেপ্টেম্বর/জেআর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :