বর্জ্য অপসারণে দ্রুতগতি, সন্তুষ্ট রাজধানীবাসী

জহির রায়হান, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৩:৫৬ | প্রকাশিত : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১২:৪৪

২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রাজধানীতে কোরবানির বেশির ভাগ বর্জ্য অপসারণ করেছে সিটি করপোরেশন। আজকের মধ্যেই বাকি বর্জ্য অপসারিত হয়ে যাবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বর্জ্য অপসারিত হওয়ায় সন্তুষ্ট রাজধানীবাসী।

দুই সিটি করপোরেশনে ঘুরে বিভিন্নজনের সঙ্গে আলাপকালে তাদের সন্তুষ্টির কথা জানা গেছে। সিটি করপোরেশনের কর্মীদের আন্তরিকতা, অনুকূল আবহাওয়া, পূর্বপ্রস্তুতি এবং নগরবাসীর সহায়তায় এবার বর্জ্য অপসারণ নিয়ে তেমন কোনো অভিযোগ নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঈদের প্রথম দিন বর্জ্য অপসারণ উদ্বোধনের সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেছিলেন, নাগরিকদের সহযোগিতা পেলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বর্জ্য অপসারণকাজ শেষ করা যাবে।

বর্জ্য অপসারণে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি নগরবাসীর মধ্যেও সহযোগিতার মনোভাব দেখা গেছে। নির্দিষ্ট স্থানে যারা পশু কোরবানি দিতে পারেননি তাদের বস্তায় ভরে বর্জ্য রাখতে দেখা গেছে। আর যারা তা রাখেননি তারাও এক জায়গায় স্তুপ করে বর্জ্য রেখেছেন। আর নিজেরাই ছিটিয়েছেন ব্লিচিং পাউডার।

মিরপুর কাঁঠালতলা এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী তারেক সিদ্দিক তার বাসার সামনে গরু কোরবানি দিয়েছেন। তিনি নিজের উদ্যোগেই সব বর্জ্য পরিষ্কার করে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত জায়গায় রেখেছেন। ঢাকাটাইমকে তারেক সিদ্দিক বলেন, ‘আসলে পরিবেশ দূষিত হলে আমাদেরইতো বেশি অসুবিধা হবে, তাই নিজেই এটা পরিষ্কার করলাম।’

তবে একই এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা বস্তা ভরে ময়লা রেখেছি, কিন্তু এখনো সিটি করপোরেশনের কেউ এলো না। আমরা নিজেরাই যদি ময়লা ফেলে আসি তাহলে আমাদের ট্যাক্স দিয়ে লাভ কী। ময়লা থেকে দূর্গন্ধ বের হচ্ছে, জানি না কখন আসবে তারা।’

রাজধানীর ভূতের গলি মসজিদের সামনের বাসিন্দা রাশেদুল হল কোরবানি দিয়েছেন তার গ্যারেজে। গরু কাটা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জায়গাটি ভালোভাবে ধুয়ে দিয়ে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়েছেন। আর বর্জ্য বস্তায় ভরে বাসার সামনে রেখে দিয়েছেন স্তুপ করে।

সানোয়ার হোসেন কোরবানি দিয়েছেন কাঁটাবন এলাকায়। তিনি লোক ভাড়া করে ময়লাগুলো সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ডাস্টবিনে ফেলেছেন। ঢাকাটাইমসকে সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ। আর এত টাকা দিয়ে গরু কিনতে পারলাম, ময়লা পরিষ্কার করতে পারবো এটা হতে পারে না। এটা মানসিকতার বিষয়।’ তিনি সবাইকে যার যার ময়লা নির্ধারিত স্থানে ফেলার মানসিকতা তৈরির আহ্বান জানান।

রাজধানীর গোপীবাগ এলাকার বিভিন্ন অলিগলিতে বর্জ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ এখনো সিটি করপোরেশন থেকে কেউ আসেনি। আর বৃষ্টি হলে এই এলাকায় পানি জমে যায়। তাই তারা চায় দ্রুত যেন এ বর্জ্য অবসারণ করা হয়।

যত্রতত্র কোরবানির পশু জবাইয়ের কারণে পরিবেশ দূষণ এড়াতে এবার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৬২৫টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশনে ৫৪৯টি স্থান পশু কোরবানির জন্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। তবে এসব স্থানে খুব কম পশুই জবাই করতে দেখা গেছে। রাস্তা, অলিগলি ও বাড়ির গ্যারেজেই পশু জবাই করতে বেশি দেখা গেছে বেশি।

সিটি করপোরেশন থেকে জানানো হয়, এবার ঢাকায় প্রায় চার লাখ ৭৫ হাজার পশু কোরবানি হতে পারে। আর এসব পশুর বর্জ্য সরিয়ে নিতে দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় ১৭ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা শফিকুল আলম ঢাকাটাইমসকে জানান, ডিএসসিসির ১৩০টি খোলা ট্রাক, ৩৭০টি কনটেইনার, ৮৫টি কনটেইনার মুভার, ৬৫টি ডাম্প ট্রাক, ১৫টি পেলোডার, ১০টি টায়ারলোডার, ৯টি স্কিড লোডার এবং ১২টি পানির গাড়ি নগরকে সাফ করার কাজে রয়েছে।

শাহবাগ থেকে কারওয়ানবাজার হয়ে মিরপুর রোড পর্যন্ত প্রধান সড়ক ঘুরে দেখা যায়, মাঝে মাঝে বর্জ্য থাকলেও তা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় স্তুপ করে রাখা।

হাতিরপুল এলাকার বিভিন্ন গলিতে দেখা যায়, ময়লা বস্তা ভরে রাখা। ইস্টার্ন প্লাজার পেছনের গলিতে ময়লার বস্তা সারিবদ্ধ করে রাখা। মিরপুর ১০ নম্বার দিয়ে মনিপুর স্কুলের দিকে যেতে বিভিন্ন জায়গায় ময়লা স্তুপ করে রাখা অবস্থায় দেখা যায়।

শেওড়াপাড়া ও কাজিপাড়া বাসস্টেশনের কাছে কোরবানির বর্জে্যর স্তুপ দেখা যায়।

ইস্কাটন সবজিবাগান জামে মসজিদের সামনে রাস্তায় প্রায় ৪০টি গরু জবাই করা হলেও আজ সেখানে কোনো বর্জ্য দেখা যায়নি।

কথা হয় এই এলাকার পরিচ্ছন্ন কর্মী কাদেরের সঙ্গে। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা এই ১৯নং ওয়ার্ডে একশর বেশি পরিচ্ছন্ন কর্মী কাজ করেছি। গতকাল সকালে নেমেছি। পালা করে সারারাত চলেছে পরিষ্কারের কাজ।’

পাশে ভ্যানের ওপর ঘুমিয়ে থাকা কয়েকজনকে দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘এরা সারা রাত কাজ করেছে। আজ আবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে। আজ যারা কোরবানি দিয়েছে সে বর্জ্য দুপুরের মধ্যেই পরিষ্কার হয়েছে যাবে।’ চাকরির ২০ বছরে এত দ্রুত কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কার কখনো হয়নি বলে জানান পরিচ্ছন্ন কর্মী কাদের।

পরিবাগ এলাকায় কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করছিলেন পরিচ্ছন্ন কর্মী রাজ্জাক হোসেন। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের এই ২১ নম্বর এলাকায় কোথাও গতকালের বর্জ্য নেই। গতকাল ভোর ছয়টা থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি। শেষ করেছি রাত আটটায়। আজ আবার সকাল ছয়টা থেকে কাজ শুরু করেছি।’ তিনি বলেন, ‘সবাইনির্ধারিত স্থানে কোরবানি দিলে আমাদের ময়লা ফেলতে সুবিধা হতো না।’

সার্বিকভাবে এ পর্যন্ত কোরবানির বর্জ্য অপসারণে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নগরবাসী। অবসপ্রাপ্ত বেসরকারি চাকরিজীবী আবুবকর সিদ্দিক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন তাদের সাধ্যমত কাজ করছে। তাদেরওতো লিমিটেশন আছে। আমি সন্তুষ্ট তাদের কাজে। আশা করছি আজকের মধ্যেই বাকি বর্জ্য অপসারণ হবে।’

মধুবাগ, রামপুরা বাজার, ওয়াপদা রোড এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সে রাস্তাগুলো পরিষ্কার। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মাহবুবুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি রাজধানীর ধানমন্ডি, গুলশান, বারিধারাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরেছি। আসলে এত তাড়াতাড়ি কোনো সময়ই দেখিনি বর্জ্য অপসারণ করতে।’ এর জন্য সিটি করপোরেশন ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করেন তিনি।

(ঢাকাটামস/০৩সেপ্টেম্বর/জেআর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

কামরাঙ্গীরচর নাগরিক পরিষদ প্রতিনিধিদের সঙ্গে মেয়র তাপসের মতবিনিময়

মতিঝিলের ফুটপাতে পড়েছিল বৃদ্ধার মরদেহ

মিরপুর বিআরটিএ’তে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, ৪ দালালকে সাজা

খিলক্ষেতে ৬০ কোটি টাকার খাসজমি উদ্ধার

রাজারবাগের পুকুরে ডুবে পুলিশ সদস্যের মর্মান্তিক মৃত্যু, ধরা পড়ল সিসি ক্যামেরায়

চার নারী একসঙ্গে ওয়াশরুমে! সেই রাতে গুলশানে কী হয়েছিল, জানালেন ভুক্তভোগী

রাজধানীতে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে নারীর আত্মহত্যা

সংসদ এলাকায় ড্রোন উড়িয়ে আটক সাবেক এমপিপুত্র, ছাড়া পেলেন মুচলেকায়

গুলশানে ‘মাতাল’ হয়ে মারামারিতে জড়ানো তিন তরুণী গ্রেপ্তার, বারের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা

ভাষানটেকে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: মা ও স্ত্রীর পর না ফেরার দেশে লিটনও

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :