পর্যটকে মুখরিত সুনামগঞ্জের নিসর্গগুলো

জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ থেকে
 | প্রকাশিত : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৬:২৮

হাওর বেষ্টিত সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, ছাতক ও দোয়ারা বাজার উপজেলার পর্যটন স্পটগুলো ভ্রমাণপিপাসুদের আগমনে মুখরিত হয়ে ওঠেছে।

উপজেলার সীমান্তবর্তী ভারতের খাসিয়া, মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে প্রকৃতির দৃশ্য যেন ছবির মতো পটে আঁকা। প্রকৃতি যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে! কী বৃষ্টি কী রোদ, বাধা উপেক্ষা করেই ছুটছেন সবাই।

সারা বছরেই এই পর্যটন স্পটগুলো শিক্ষার্থী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি, দেশ-বিদেশের সৌন্দর্য পিপাসু ও প্রকৃতি প্রেমীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে। তবে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় দৃষ্টি নন্দনস্থান গুলো মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়।

এবারও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। এখানে আসা পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় তাহিরপুর উপজেলার টাংগুয়ার হাওর, সীমান্তে শহীদ সিরাজ লেক, যাদুকাটা নদী ও বারেকটিলা। এখানে কেউ মোটরসাইকেলে, কেউ সিএনজি, কেউ স্পিডবোট আবার কেউ ইঞ্জিন চালিত নৌকায় আসছেন।

দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে তাহিরপুর উপজেলায় রয়েছে- মাদার ফিশারিজ খ্যাত টাংগুয়ার হাওর, সীমান্তঘেষা ৩০০ ফুট উঁ”ু বারেক টিলা, উপজাতিদের মন্দির, মেঘালয় পাহাড়ের জলপ্রপাত, শাহ আরফিন (রা) আস্তানা, সনাতন হিন্দু-ধর্মাবলম্বীদের পনর্তীথ স্থান, উঁচু নিচু পাহাড়ের সারি, ঘন সবুজের সমারোহ, ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্প, সীমান্ত লেক, তিনটি শুল্ক স্টেশন (চারাগাঁও, বড়ছড়া, বাগলী), মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতি চিহ্ন, ছোট বড় ২০টি ভারতের মেঘালয়ের বুক চিড়ে নেমে আসা পাহাড়ি ছড়া, রাজা উইক্লিবস এর বাড়ি, আওলি জমিদার বাড়ি, পাহাকড়ি যাদুকাটা নদী, ঝর্ণা, মেঘ, বৃষ্টি, উপজাতি ও বাংলাদেশিদের একত্রে বসবাসের এক মিলন মেলা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মনোরম পরিবেশ বিরাজ করছে সীমান্তবর্তী তাহিরপুর উপজেলায়।

অন্যদিকে দোয়ারাবাজার উপজেলায় রয়েছে-বাঁশতলা, হকনগর শহীদ স্মৃতিসৌধ, জুমগাঁও আদিবাসীসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। ছাতক উপজেলায় রয়েছে-শুল্ক স্টেশন, লাল পাহাড়সহ ছোট ছোট পাহাড়, সিমেন্ট ফ্যাক্টরিসহ অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। নয়নাভিরাম, নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ করে মানুষকে। অনেকেই ঐসব স্থানে গিয়ে তুলছেন সেল্ফি আর অনেকেই একান্তে বসে আছেন, অনেকেই বসিয়েছেন আড্ডা।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, সবার আকর্ষণ টাংগুয়ার হাওর। এ হাওরের একটি প্রবাদ আছে-নয়কুড়ি বিল, ছয় কুড়ি কান্দার সমন্বয়ে গঠিত শত বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই টাংগুয়ার হাওরে নানান প্রজাতির বনজ ও জলজ প্রাণী এ হাওরের সৌন্দর্যকে আরো দর্শনীয় করেছে। বর্ষায় টাংগুয়ার হাওর এক বিশাল সমুদ্রের রুপ ধারণ করে আর শীতের সময় টাংগুয়ার হাওরকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে। দূর দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা উপভোগ করছেন প্রাকৃতিক এসব সৌন্দর্য।

তবে, এবার হাওর পাড়ে একমাত্র বোরো ধান অকাল বন্যায় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ঈদের আনন্দ নেই স্থানীয়দের মনে।

তবে, অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাদের প্রতি অবহেলার জন্য। তারা বলেন, আমরা শুধু কি আশার বাণী শুনতেই বেঁচে আছি। এখানে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন হবে বলে শুনছি। অথচ এখনো কোনো কাজের লক্ষ্য দেখছি না। দর্শনীয় স্থা গুলো দেখতে হাজার হাজার মানুষ যোগাযোগ ব্যবস্থা ও থাকা খাওয়ায় ভালো সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়ছে। পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে এমনটি হতো না। বেড়াতে আসা শিক্ষার্থী সৌরভ দাস, নাজির হোসেন, নাইম, মেহেদী হাসান ভুঁইয়া (জনমেজর) সহ অনেকেই জানান, এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থার ও থাকা-খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকদের কষ্টের হচ্ছে।

তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কারুজ্জামান কামরুল জানান, ঈদে ও ছুটির দিনে এ উপজেলার প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয়ের টানে হাজার হাজার পর্যটক আসেন। টাংগুয়ার হাওর ও বারেকটিলা তাহিরপুর উপজেলায় আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের উপযোগী স্থান। এখানে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন করা এখন সময়ের দাবি। পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন হলে তাহিরপুরের স্থানীয় জনসাধারণের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের সুযোগ ও স্থানীয় বেকার যুবকদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

(ঢাকাটাইমস/০৩সেপ্টেম্বর/জেএভি/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :