ঈদ আনন্দে মেতেছে ময়মনসিংহবাসী
ময়মনসিংহে ঈদুল আজহার দিন শনিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ মানুষজন গৃহবন্দি হয়ে পড়েন। কিন্তু বিকালের পর তারা ঈদ আনন্দ উপভোগ করেন শহরের বিভিন্ন পার্ক, জেলা উপজেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে।
শহরের ওপর বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্র নদের পাশে পার্কগুলোতে শনিবার রাত থেকে রবিবার বিকাল ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে দেখা গেছে। ভিড় দেখা গেছে, পার্কগুলোতে। দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে সেখানকার পরিবেশ।
ময়মনসিংহ শহর জেলার উপজেলাগুলোতে স্থানীয় ও বহিরাগত লাখো বিনোদনপ্রেমীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে।
রাজা-জমিদারদের প্রতিষ্ঠিত শশী লজ, আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্ক ও সংগ্রহশালা, স্বাধীনতা স্তম্ভ, ময়মনসিংহ যাদুঘর, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বিপিন পার্ক, সাহেব কোয়াটার পার্ক, বিজিবি পার্ক, জয়নুল আবেদীন পার্ক, প্যারাডাইস পার্ক, যাদুঘর এলাকাগুলো জনস্রোতে পরিণত হয়। ক্রমেই বাড়ছে মানুষের ভিড়।
ব্রহ্মপুত্র নদ তীরের অবস্থান ময়মনসিংহ শহরের বিরাট একটি অংশ। নদের তীরজুড়ে থাকা শহর-রাকারী বাঁধের বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে ময়মনসিংহ পার্ক যা শহরবাসীর মূল বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি। ঈদের ছুটিতে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষ, শহরবাসীসহ ভ্রমনপিপাসুদের নদের সৌন্দর্য্য দেখতে ভিড়।
রবিবার গোটা ব্রহ্মপুত্র শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। দর্শনার্থীদের বাড়তি বিনোদন হিসেবে নৌকায় নদ ভ্রমনের ব্যবস্থা আছে এখানে। দর্শনার্থীরা নদের একপাশের শহর আর একপাশে গ্রামের পরিবেশে প্রাকৃতিক দৃশ্য যেন স্বপ্নের হাতছানি।
সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, মানুষের ভিড় আর তাদের মুখের হাসি বলে দিচ্ছে- প্রকৃতির সৌন্দয্য কতোটা মন কেড়েছে তাদের। নদের পানির কলকলানি শব্দ ধরে ওপারে তাকালেই সবুজের সমারোহ ও নীলের ছোঁয়ায় ধু-ধু প্রান্তর মাঠ, গাছপালা।
ব্রহ্মপুত্র নদ বিষয়ে ইতিহাস বলছে, সুদূর তিব্বতের ইয়ারলুং সাংপো নদী দক্ষিণ তিব্বত থেকে হিমালয় হয়ে ভারতের অরুণাচল প্রদেশে দিহাং নাম ধারণ করে আসাম হয়ে বাংলাদেশে আসতে আসতে ময়মনসিংহে আগমন।
সুদীর্ঘ এই নদ চোখ জুড়ায় মানুষের প্রথম দর্শনেই, জাগে প্রাণের শিহরণ। নদের তীরে বৃক্ষরাজি আর সবুজ ঘাসে ছাওয়া মাঠ, পাখি। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালার অবস্থান এ নদের তীরেই।
বিখ্যাত এই শিল্পীর তেলচিত্র ও রেখাচিত্রসহ মোট ৭০টি চিত্রকর্ম নিয়ে এই জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালা যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ এপ্রিলে। তদানীন্তন অবিভক্ত ভারত তথা বাংলার বৃহত্তর ময়মনসিংহেই ১৯১৪ সালে শিল্পীর জন্ম। ব্রহ্মপুত্র ছিল তার প্রিয় নদ। যে নদের তীরে বসে তিনি প্রচুর ছবি এঁকেছেন তিনি। ১৯২৬ কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এসেছিলেন ময়মনসিংহের মহারাজা শশী কান্তের আমন্ত্রণে শশীলজে। বিশ্বকবি অবস্থান করেছিলেন, নদের তীরে আলেকজান্দ্রা ক্যাসেলে। জেলার মুক্তাগাছায় ষোলহিস্যার জমিদারবাড়ি, রসুলপুর বন, গৌরীপুরের জমিদারবাড়ি, সখিনা বিবির মাজার, ফুলবাড়ীয়ায় আলাদিন পার্ক, সন্তোষপুর বন, হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়ায় ভারতের সীমান্ত লাগোয়া পাহাড়ের পাদদেশসহ জেলার সর্বত্র পর্যটন এলাকাগুলোতে এখন লোকে লোকারণ্য।
(ঢাকাটাইমস/৩সেপ্টেম্বর/এমডি/এলএ)