পোস্তায় চামড়া আসছে কম, সরাসরি কিনছে ট্যানারি
লালবাগের পোস্তায় এবার চামড়া কম আসছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, গত ১০ বছরে এত কম চামড়া আর কখনো আসেনি এখানে। আর এর জন্য তারা দায়ী করছেন ট্যানারি মালিকদের। তাদের অভিযোগ, ট্যানারি মালিকরা পোস্তার ব্যবসায়ীদের গতবারের বকেয়া পরিশোধ না করে এবার সরাসরি চামড়া কিনছেন মোসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।
এ ছাড়া এবার পশু কোরবানি কম হয়েছে বলেও মনে করছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা।
একই সঙ্গে পোস্তার চামড়া ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ট্যানারি মালিকরা গত বছরের চামড়ার দাম এখনো পুরো পরিশোধ না করায় পুঁজি সংকটে পড়েছেন পোস্তার কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ীরা।
দেশের ট্যানারি শিল্পের প্রধান উপাদান কাঁচা চামড়ার প্রায় ৬০-৭০ শতাংশই আসে কোরবানির ঈদে। এবার গরু ও ছাগল মিলে প্রায় এক কোটি কাঁচা চামড়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এই লক্ষ্যমাত্র অর্জন হবে না বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
এদিকে যে চামড়াগুলো পোস্তায় আসছে তার ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ বিক্রেতাদের।
রবিবার দুপুর ১২টা থেকে দুইটা পর্যন্ত চামড়া নিয়ে ঢোকেনি কোনো ট্রাক কিংবা পিকআপ। ভ্যান দিয়ে যেসব চামড়া আসছে, সেগুলো কাড়াকাড়ি করে কিনছে পোস্তার ব্যবসায়ীরা।
এখানে লবণ ছাড়া গরুর চামড়া প্রতিটি কেনা হচ্ছে ৮০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা। ফুট হিসাবে এবার ছাগলের চামড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা; আর গরুর মাথার চামড়া বিক্রি হচ্ছে ১০-১২ টাকা দরে যা গতবার ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এবার গতবারের মতো ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ধরা হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, ঢাকার বাইরের গরুর চামড়ার দাম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এ ছাড়া রাজধানীর বাইরে প্রতি বর্গফুট ছাগলের চামড়ার দাম ২০ থেকে ২২ টাকা এবং খাসির চামড়ার দাম ১৫ থেকে ১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু পোস্তায় গিয়ে দেখা যায় এ নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে কেনা হচ্ছে চামড়া।
পোস্তায় কথা হয় মৌসুমি ব্যবসায়ী সরওয়ারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যে চামড়া সংগ্রহ করেছি ১৬০০ টাকা দিয়ে, তা ১০০ টাকা লস দিয়ে বিক্রি করছি। গত বছরের চেয়েও কম দামে বিক্রি হচ্ছে চামড়া। সরকার নির্ধারিত দামেও বিক্রি করতে পারছি না।’
পোস্তায় ৩০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন সেলিম। তিনি ঢাকাটাইমসকে অভিযোগের সুরে বলেন, ‘চামড়া নিয়ে কোনো ট্রাক এখানে ঢুকতে পারছে না। সব ট্রাক ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ট্যানারি মালিকরা পথে সরাসরি চামড়া কিনছে।’
কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী দোলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এখানে চামড়া কেনা হচ্ছে ৮০০ থেকে ১৪০০ টাকা করে। আমরা পুঁজি সংকটে আছি। কারণ গতবারের বেশির ভাগ পাওনাই এখনো দেয়নি ট্যানারি মালিকরা।’
চামড়ার আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা হয় পোস্তায় তার অফিসে। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘আমরা এবার সারা দেশে এক কোটি চামড়া কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলাম। কিন্তু বন্যাসহ বিভিন্ন কারণে লক্ষ্যমাত্রার ৩০ শতাংশ কম চামড়া সংগ্রহ করতে পারবে বলে মনে হয়।’
পুঁজির অভাবে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা বিপাকে আছেন বরলে জানান দোলোয়ার হোসেন। ট্যানারিগুলোর কাছে বেশ কিছু টাকা বকেয়া রয়েছে তাদের। তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে পাওনা পরিশোধের কথা ছিল। আমাদের যে চেক দেওয়া হয়েছে তা বাউন্স করেছে ব্যাংক। ফলে আমাদের কেউ কেউ চামড়া কিনতে পারছে না টাকার অভাবে।’
দোলোয়ার হোসেন বলেন, ট্যানারি মালিকরা মূলত আমাদের কাছ থেকে চামড়া কিনে থাকে। কিন্তু এবার তারা সরাসরি মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কিনেছে। তার পরিমাণ মোট চামড়ার অন্তত ২০ শতাংশ।
পোস্তার প্রায় ২০টি আড়ত ঘুরে দেখা গেল লবণ দিয়ে চামড়া স্তূপ করে রাখছেন তারা। ব্যবসায়ী রফিকুর বলেন, যে লবণের বস্তা (৭৪ কেজি) কোরবানির আগে ছিল ৯০০ টাকা তা এখন হয়ে গেছে ১৪০০ টাকা। এর ফলে চামড়া সংরক্ষণে খরচ বেশি হয়ে যায়। প্রতি চামড়ায় প্রায় ৫ কেজি লবণ প্রয়োজন বলে জানান তিনি। তার ওপর লেবার খরচ আছে।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান ভারতে চামড়ার দাম বেশি বলে পাচারের আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ পোস্তার ব্যবসায়ীদের গতবারের সব টাকা পরিশোধ করতে না পারার ব্যাপারে বলেন, হাজারীবাগ থেকে সাভারে কারখানা স্থানান্তরে অনেক খরচ হয়েছে। তার ওপর সাভারে এখনো সব কারখানা প্রস্তুত হয়নি।
তিনি অভিযোগ করেন, ‘বিসিসিকের অব্যবস্থাপনা দায় এখন তাদের নিতে হচ্ছে। এর জন্য চামড়া ব্যবসায়ীদের কিছু টাকা বকেয়া রয়েছে। তিনি জানান, এবার কাঁচা চামড়ায় লবণ দেওয়ার কাজটি হাজারীবাগে করা যাবে।
(ঢাকাটাইমস/৩সেপ্টেম্বর/মোআ)