চলনবিল অঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে নৌকা স্কুল

খাইরুল ইসলাম বাসিদ, পাবনা
 | প্রকাশিত : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৯:২৭

পাবনার চাটমোহরসহ বৃহত্তর চলনবিল অঞ্চলের অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও যুবকদের মাঝে নৌকা স্কুল শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। ইতোমধ্যে নৌকা স্কুল দেশের বিভিন্ন স্থানে সাড়া জাগিয়েছে। এমনকি বিশ্বের পরিবেশবিদদের দৃষ্টি কেড়েছে। নৌকা স্কুলে শুধু পাঠদানই নয়, পাঠাগার ও ইন্টারনেট সুবিধাও রয়েছে। শিশু শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কেও জানতে ও শিখতে পারছে।

বিল বা নদীবেষ্টিত চলনবিল এলাকার শিক্ষার্থীদের এখন সরকারি স্কুলে যেতে হয় না। নৌকা স্কুলই তাদের কাছে চলে আসে। বিশেষ ধরনের নৌকায় বিদ্যালয় ছাড়াও পাঠাগার, ইন্টারনেট ক্যাফে, এমনকি বিদ্যুৎব্যবস্থার জন্য বিশেষ সোলার প্যানেল রয়েছে।

পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলা ও নাটোর জেলার গুরুদাসপুর, সিংড়া উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে নৌকা স্কুল এখন অত্যন্ত সুপরিচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম। আত্রাই, গুমানি, করতোয়া ও বড়াল নদীর ৫০টি ঘাটে লাগানো নৌকা স্কুল এখন চলনবিলের নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের সন্তানদের শিক্ষা কার্যক্রমে আধুনিক পাঠদানে পরিবর্তনের হাওয়া এনে দিয়েছে।

প্রতি বছর বন্যায় বিলের পানি লোকালয়ে উঠে গেলে এই অঞ্চলের শতশত শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব শিক্ষার্থীর কথা বিবেচনা করেই নৌকা-স্কুল। বিনা খরচে শিক্ষার্থীরা এসব ভাসমান স্কুলে সপ্তাহে ছয় দিন গড়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা লেখাপড়া করে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী তাদের বাড়ির ঘাট থেকেই নৌকা স্কুলে ওঠে।

নৌকা স্কুলের শিক্ষিকা রুশনারা পারভীন বলেন, কোমলমতি শিশুরা নৌকা স্কুলে পড়তে খুব ভালোবাসে। নদী বা বিলপাড়ে তাদের বাড়ির কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের নৌকায় তুলে নেয়া হয়। নিয়মিত এসব শিক্ষার্থীরা নৌকা স্কুলে পড়ছে।

সিঁধুলাই স্বনির্ভর সংস্থার ওয়াটার শেট ম্যানেজরর মনোয়ার হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, বিশেষভাবে তৈরি নৌকার প্রায় পুরোটাজুড়েই শ্রেণিকক্ষ। অন্তত ৩০ থেকে ৩২ জন শিক্ষার্থী বেশ ভালোভাবেই বসতে পারে।

সিঁধুলাই স্বনির্ভর সংস্থার লাইব্রেরিয়ান জাহিদুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, পাঠ্যশিক্ষা ছাড়াও নৌকায় মাল্টিমিডিয়া শিক্ষার ব্যবস্থা, কম্পিউটারের সব ধরনের ব্যবহার ও প্রশিক্ষণের সুবিধা এবং লাইব্রেরি রয়েছে। নৌকা স্কুলের ছাদে সৌরবিদ্যুতের সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমেই কম্পিউটার ও আলো জ্বলে। এতে নদী বা বিলপাড়ে যুবক যুবতীরা এসব নৌকা লাইব্রেরিতে এসে কম্পিউটার শিখছে এবং বিভিন্ন বই পড়ছে।

সিঁধুলাই স্বনির্ভর সংস্থার সহকারী প্রোগ্রাম ম্যানেজার নিখিল চন্দ্র রায় ঢাকাটাইমসকে বলেন, সিঁধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা ২০০২ সালে একটি নৌকা স্কুলে চারটি ক্লাস করার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন। এখন ২২টি নৌকা স্কুলে ৬৬টি ক্লাসে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী শিক্ষা লাভের সুযোগ পাচ্ছে। চলনবিল এলাকার এক লাখ ৮০ হাজার শিশু-কিশোরকে নৌকা স্কুলের শিক্ষার আওতায় আনার নিরন্তর চেষ্টা চলাচ্ছেন তারা।

ভাসমান স্কুলকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এখন একটি মডেল হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে শুধু ভাসমান স্কুলেই থেমে থাকেনি সংস্থাটির কার্যক্রম। এখন ভাসমান স্বাস্থ্য ক্লিনিক ও কৃষিবিষয়ক ট্রেনিং সেন্টারের কাজও করছে এই নৌকাগুলো।

(ঢাকাটাইমস/০৪সেপ্টেম্বর/কেআইবি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :