বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আরও দেড় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা

মোসলেহ উদ্দিন, উখিয়া (কক্সবাজার)
| আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৯:৪৫ | প্রকাশিত : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৯:৪৩

মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতার পর শুক্রবার থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, থাইনখালী, পালংখালী ও টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা ঢুকে পড়েছে। এসব রোহিঙ্গা উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার তিনটি রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবির ছাড়াও এলাকার বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছে। কিছু কিছু রোহিঙ্গা আশ্রয় খুঁজে না পেয়ে দিকবিদিক ছোটাছুটি করছে। এছাড়াও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আরও দেড় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা মুসলিমদের পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপরও চালানো হয়েছে নির্যাতন। প্রায় ৭০০ পরিবার তাদের সহায় সম্বল ত্যাগ করে উখিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে।

মিয়ানমারে চলমান সহিংসতায় পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া, হত্যা, ধর্ষণ ও নানা নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসছে হাজার হাজার মুসলিম রোহিঙ্গা। নারী পুরুষের পাশাপাশি ছোট ছোট শিশুরাও সহিংসতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না।

মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর নির্যাতনে প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেলেও এর প্রকৃত সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেশি বলে দাবি করছে কুতুপালং শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা। এমন পরিস্থিতিতে জীবন বাঁচাতে দলে দলে অনুপ্রবেশ করছে বা করার অপক্ষোয় রয়েছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা।

রোহিঙ্গা নেতা মো. নুর ঢাকাটাইমসকে জানান, আরকানের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ পরিস্থিতি চলছে। সেখানে নির্বিচারে মানুষ হত্যাসহ বাড়িঘর পুড়িয়ে সম্পদ লুণ্ঠন করছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর পাশা পাশি মুরং,বড়ুয়া ও মগ সম্প্রদায়। এসব সাম্প্রদায়িক লোকজনকে রোহিঙ্গা মুসলিম নিধনের জন্য সেদেশের সামরিক বাহিনী দা, কিরিচ, চাপাতিসহ নানা অস্ত্রসস্ত্র সরবরাহ করছে।

কুতুপালং বস্তিতে আশ্রয় নেয়া মোহাম্মদ হোছন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। বাংলাদেশে আশ্রয় পেয়ে অন্তত আমরা মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি।’

লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নরনারী ও শিশু বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সীমান্তের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাধীন ঘুমধুম ইউনিয়ন এলাকার রেজু আমতলী, ডেইলপাড়া, দরগাহবিল, হাতিমুড়া, বাইশপারী, তুমব্রু, উখিয়ার আঞ্জুমান পাড়া, কলাবাগান, মাঝের পাড়া, ধামনখালী, ওলুবনিয়া খারাংখালী, উনচিপ্রাংসহ টেকনাফের শাহপরিদ্বীপ পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে এসব রোহিঙ্গা এখানে আশ্রয় নিয়েছে।

মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ও রাখাইন সন্ত্রাসীরা মুসলিমদের ওপর নির্যাতন, জুলুম, নিপীড়ন, ঘর বাড়িতে আগুন, মানুষ হত্যা অব্যাহত রেখেছে। এ জাতিগতবিরোধী ও ধ্বংসলীলার কোনো উত্তর খুঁজে না পেয়ে সহায় সম্বলহীন অবস্থায় পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গারা।

সোমবার উত্তর তুমব্রু সীমান্ত এলাকা গিয়ে দেখা যায়, ৩/৪ জন রোহিঙ্গা যুবককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রেডক্রিসেন্ট কর্মীরা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। এছাড়াও রবিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে তুমব্রু সীমান্তে বসবাসরত করিম ড্রাইভারের ঘরের ছালে উপর নাসাকা বাহিনীর গুলি লেগেছে বলে তিনি জানান।

হাজার হাজার রোহিঙ্গা জিরো পয়েন্ট এলাকায় তাঁবু গেড়ে অবস্থান নিয়েছে। এপার বাংলায় তুমব্রুতে অন্তত তিন হাজার রোহিঙ্গাকে তুমব্রুতে সেখানকার লোকজন ও প্রশাসন আশ্রয় দিয়েছে। এসব রোহিঙ্গাকে রেডক্রিসেন্টসহ অন্যান্য এনজিও সংস্থা প্রাথমিক চিকিৎসা এবং স্থানীয়রা কলা মুড়ি ও রান্না করা খাবার বিতরণ করছে।

বালুখালী ক্যাম্পের লালু মাঝি জানান, এ বস্তিতে প্রায় ৮০ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। নতুন রোহিঙ্গাদের জন্য ঝুপড়ি নির্মাণ করে বসবাস করার ব্যবস্থা নিচ্ছে বিভিন্ন এনজিও। তাদের অভিযোগ, তারা পালিয়ে আসার সময় সাথে করে নিয়ে আসা গরু, ছাগল, লুটপাট করেছে সীমান্তের লোকজন।

সোমবার কুতুপালং ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে, দুজন রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাদের নাম জানা যায়নি। এছাড়াও উখিয়ার সীমান্তবর্তী বার্মাইয়া পাড়া, ঢেকিবনিয়া, ফকিরপাড়া ও উত্তরপাড়ায় গত রবিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রামগুলোতে ব্যাপক তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে সেদেশের চাকমা, মুরং, বড়ুয়া ও বিজিপির সদস্যরা। এসময় শতাধিক বাড়িঘরের মালামাল লুটপাটসহ তিনটি মসজিদ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। ঈদের দিন সীমান্তের জলপাইতলী দিয়ে পালিয়ে আসার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন মো. জাফর উল্লাহ ও তার স্ত্রী আয়েশা খাতুন।

সীমান্তে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও এনজিও সংস্থা আইওএম এর বরাত দিয়ে জানা গেছে, গেল শুক্রবার থেকে এ পর্যন্ত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা উখিয়া ও টেকনাফে তিনটি শরণার্থী শিবিরের আশেপাশে এবং বিভিন্ন বসতবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/০৫সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :