সংঘাত নয়, সংলাপে সমাধান চায় বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২১:৩০ | প্রকাশিত : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২০:১৭

একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো সংঘাত নয়, সংলাপে সমঝোতায় সংকটের সমাধান চায় বিএনপি। মঙ্গলবার বিকালে উত্তরার বাসায় সাংবাদিকদের সাথে আলাপচারিতায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের এই অবস্থানের কথা জানান।

ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখনো সংঘাতে যেতে চাই না, আমরা সংঘাত এড়িয়ে যেতে চাই। আমরা সত্যিকার অর্থেই একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মধ্যে আগামী নির্বাচন হোক- সেটা আমরা চাই, সিরিয়াসলি চাই। আমরা কখনোই চাই না যে সেই অতীতের পুনরাবৃত্তি হোক।’

‘আমরা নির্বাচনকালীন সত্যিকার অর্থে একটা নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার চাই। এটা কিন্তু রিজিড ব্যাপার নয়। আমরা এ নিয়ে আলোচনা করতে চাই, সমঝোতা করতে চাই। আমরা সব সময় আশা করে আছি, সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গণতন্ত্রের যদি আলোচনা না থাকে, সংলাপ না থাকে তাহলে তো পথ পাওয়া যাবে না। আপনি চতুর্দিক বন্ধ করে দেবেন, পথ খোলা রাখবেন না, হাওয়া আসবে না, হাওয়া যাবে না। তাহলে কেমন করে হবে? গণতন্ত্রের বাতাস তো বইবে না।’

সংলাপের ব্যাপারে সরকারের নেতিবাচক অবস্থানের কথা স্মরণ করিয়ে প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘না, এটা পাবেন না আপনার এখন পর্যন্ত। এটা নির্ভর করবে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, ততদিনে আমাদের এই কথাটার প্রভাব কতটুকু পড়ছে, আমাদের বক্তব্যের প্রভাব কতটুকু পড়ছে দেশে-বিদেশে আন্তর্জাতিক বিশ্বে, গণতান্ত্রিক বিশ্বে। তার ওপর নির্ভর করবে যে, উনারা কীভাবে চিন্তা করছেন।’

‘সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমি যেটা বরাবরই বলি, উনারা (ক্ষমতাসীনরা) যদি সত্যিকার অর্থে দেশপ্রেমিক হয়ে থাকেন, দেশের ভালো চান, কল্যাণ চান, গণতান্ত্রিক হয়ে থাকেন, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন তাহলে তাদের কথা বলা-সংলাপ করা খুব জরুরি।’-বলেন ফখরুল।

একাদশ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে অবশ্যই শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘জনগণ এই সরকারের প্রতি আস্থা নেই। আমিই সব এই দাম্ভিকতা পরিহার করতে হবে। আমি সবকিছু চাপিয়ে দেবো- সেই ধারণা বদলাতে হবে।’

‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যত ক্ষমতাশালী তার পক্ষে ওই সময়ে (নির্বাচনকালীন)চুপ করে থাকা বা কোনো কিছু নিয়ন্ত্রণ না করা- এটা অসম্ভব ব্যাপার। যে কারণে আমরা মনে করি, যদি নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হয়, তাকে (শেখ হাসিনা) সরে যেতে হবে এবং একটা নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে।’

এ ব্যাপারে বিএনপি ‘সহায়ক সরকারের’একটি রূপরেখা যথাসময়ে জাতির কাছে উপস্থাপন করবে বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।

দলের অসংখ্য নেতা-কর্মী ও সম্প্রতি কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমানের ‘গুম’ও ‘নিখোঁজ’ হওয়ার ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এই যদি হয় দেশের অবস্থা, আমরা কোন দেশে বাস করছি? এটা তো আমরা আওয়ামী লীগের থেকে আশা করি নাই। নিখোঁজদেরকে খুঁজে বের করে দেয়া কী সরকারের দায়িত্ব নয়, রাষ্ট্রের দায়িত্ব নয়।’

‘এজন্য আমরা বলেছি, এনাফ ইজ এনাফ। বহু হয়ে গেছে, বহু রক্ত ঝরেছে, অনেক কষ্ট হয়েছে, অনেক পরিবার ধবংস হয়ে গেছে। আজকে এই অবস্থা থেকে মানুষ পরিত্রাণ চায়। কেউ আজ নিরাপদ নয়। কানাডা থেকে যে মেধাবী ছেলেটি এসছেন তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’

নির্বাচনের আগে সংসদ ভাঙে দেয়ার প্রয়োজন আছে কি না প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বরাবরই বলে এসেছি, নির্বাচনের আগে সংসদ ভাঙতেই হবে। এর তো বিকল্প নেই। এটা তো একটা হাস্যকর ঘটনা যে তিনশ জনের সংসদ নির্বাচনের সময়ে ছয়শ জনের সংসদ থাকবে, তিনশ তিনশর সংসদ। ভেঙে দিতেই হবে।’

বিকাল ৪টায় উত্তরার ৮ নং রোডের ৪ নং সেক্টরের বাসায় সাংবাদিকদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর সমসাময়িক রাজনীতিসহ নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও দেন তিনি।

‘জঙ্গি রাষ্ট্র বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে কি না’

জঙ্গি নির্মূলে সরকারের বিভিন্ন সময়ে ঘোষণার পরও কিছুদিন পর পর জঙ্গি আস্তানার সন্ধানে ‘জঙ্গি রাষ্ট্র বানানোর কোনো চক্রান্ত হচ্ছে কি না’ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘এটা (জঙ্গি) খুবই সেনসেটিভ একটা ইস্যু। আমরা বার বার বলেছি যে, ট্রান্সপারেন্ট হোন, স্বচ্ছ হোন। যাকে ধরছেন তাকে মেরে না ফেলে, তাকে তদন্ত করুন এবং এর পেছনে কারা আছে, কারা অর্থ যোগান দিচ্ছে, সংগঠক কারা, কারা কী করছে- তা বের করে নিয়ে এসে জনগণের সামনে তুলে ধরুন। এটা সবচেয়ে বড় দরকার।’

‘তা না করে যেটা করছেন মেরে ফেলছেন। মেরে ফেলে যেটা হচ্ছে যে, সন্দেহ তৈরি হচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই স্বচ্ছতা থাকছে না, লোকে মনে করছে যে সত্যি সত্যি কী তারা জঙ্গি নাকি, কী করা হচ্ছে- অনেক গল্প আছে এগুলো নিয়ে। কেনো জানি না, আই ডোন্ট নো এক্সজেক্টলি। আমার কাছে যেটা মনে হয় আমি বলতেও পারবো না। বাংলাদেশকে কি একটা জঙ্গি রাষ্ট্র তৈরি করবার জন্যই একটা ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত চলছে। এটা কিন্তু খুব ইম্পোর্টেন্ট।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই যে ঘন ঘন এটা আপনারা দেখান। আপনারা একদিকে বলছেন, আমরা নির্মূল করে ফেলেছি, সব নষ্ট করে দিয়েছি, ভেঙে দিয়েছি। তারপরও এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে, হচ্ছে এবং মানুষ বলে। আমরা বলি না।’

‘মানুষই বলে যাদেরকে ধরছে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ডটা কী, তাদের চেহারা কী রকম, কোত্থেকে এসেছে। সেই তৎস্ব গ্রামে একটা গ্রামের মধ্যে কী রাম সাহেব- সে জঙ্গি হয়ে যাচ্ছে- এই বিষয় গুলোর স্পষ্ট জবাব দরকার, এ বিষয়গুলোর তদন্ত দরকার যাতে মানুষ পরিষ্কার ধারণা নিতে পারে, বিশ্বাসযোগ্যতা আসতে পারে।’

আগামী সাপ্তাহে দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া’

লন্ডনে খালেদা জিয়া তার পায়ের চিকিৎসা শেষ করে আগামী সপ্তাহে ফিরছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘উনার (খালেদা জিয়া) আর্থারাইটিসে যে ব্যাথাটা আছে, উনি মাঝে মাঝে অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েন। এটা চিকিৎসা চলছে এখন। আমরা আশা করি যে, আগামী সাপ্তাহের মধ্যে এটা শেষ হবে। এরপরই উনি চলে আসবেন।’

‘আমার সাথে গতকালও (সোমবার) উনার কথা হয়েছে। উনি বলেছেন, আমি দ্রুত আসার চেষ্টা করছি।’

এ সময়ে চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/৫সেপ্টেম্বর/বিইউ/জেডএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :