খাঁচার দরজায় ইটের ঠেকা, ভেতরে অজগর!

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
| আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৩:১০ | প্রকাশিত : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১২:৩৩

রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার একটি খাঁচায় রাখা হয়েছে ১৯ ফুট লম্বা এক অজগর সাপ। গত সোমবার রাতে জেলা ও দায়রা জজের সরকারি বাংলোর ভেতর থেকে সাপটি উদ্ধারের পর পাখি রাখা এই খাঁচাটিতেই তাকে রাখা হয়। কিন্তু আড়াই বছর আগে পাশের এমন একটি খাঁচা থেকেই পালিয়েছিল একটি অজগরের বাচ্চা। লম্বায় ওই সাপটি ছিল ৮ থেকে ৯ ফুট। পালিয়ে যাওয়ার কিছু দিন আগে সাপটি চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভারতীয় সীমান্তে ধরা পড়েছিল। ছোট ওই সাপটিকে খাঁচায় রাখার দুই দিনের মাথায় সে নেটের ফুটো দিয়ে বেরিয়ে যায়।

পরে চিড়িয়াখানার ভেতরেই একটি ইঁদুরের গর্তে অজগরটি পাওয়া যায়। এরপর তাকে আবারও সেই খাঁচায় রাখা হয়। দু’মাস পর সে আবার পালিয়ে যায়। পরে অনেক খুঁজেও তার আর সন্ধান মেলেনি। সাপটি পালিয়ে যাওয়ার পর রাজশাহী চিড়িয়াখানায় আর কোনো অজগর সাপ ছিল না। হঠাৎ করে বিচারকের বাংলোয় পাওয়া গেল মস্ত এক অজগর।

শক্তিশালী এই অজগরটিও আগের মতো একটি জীর্ণশীর্ণ খাঁচাতে রাখা হয়েছে।

বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, খাঁচার দরজাতে একটি তালা দেয়া থাকলেও বাইরে থেকে ইটের সাহায্যে সেটি ঠেকা দিয়ে রাখা হয়েছে। তার ভেতর দলা পাকিয়ে শুয়ে ছিল অজগরটি। অজগরের সামনে খাবার হিসেবে আস্ত একটি দেশি মুরগি।

সাপের ওই খাঁচাটির দুই পাশের খাঁচাগুলোর সবই পাখির। সেসব খাঁচার সামনে দর্শনার্থীদের ভিড়।

আবদুল গাফফার নামে এক দর্শনার্থী বললেন, যে মাপের খাঁচায় অজগরটি রাখা হয়েছে তাতে পুরো শরীর ছড়িয়ে থাকতে পারবে না সাপটি।

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্য প্রাণী প্রজনন ও সংরক্ষণকেন্দ্রের অধ্যাপক ও পরিচালক বহিরাঙ্গণ বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ আ.ন.ম আমিনুর রহমান বলেন, চিড়িয়াখানায় যে পরিবেশে সাপটিকে রাখা হয়েছে- তা মোটেও উপযোগী নয়। এই গরমে অজগর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৫ ঘণ্টাই পানিতে শরীর ডুবিয়ে মুখ তুলে শুয়ে থাকে। আর শুকনো জায়গায় অজগরের শরীরের নিচে থাকতে হবে মাটি। তা না হলে সাপটি অসুস্থ হয়ে পড়বে।

এ ব্যাপারে চিড়িয়াখানার মনিটরিং অফিসার শেখ আবু জাফর বলেন, আকস্মিকভাবে সাপটি পাওয়ায় আগের মতো খাঁচাতেই তাকে রাখা হয়েছে। কোনো দর্শনার্থী যেন লাঠি দিয়ে সাপটিকে বিরক্ত করতে না পারে সেজন্য নেটের নিচে ইটগুলো দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, খাঁচার ভেতরে একটি গাছের ডাল দেয়া হয়েছে, এতে সাপটি সেখানে উঠে বসতে পারবে। শিগগির নতুন খাঁচা তৈরি করে সাপটির উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে সাপটিকে উদ্ধারের পর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ দাবি করে আসছে, এটিই তাদের হারিয়ে যাওয়া অজগর। তবে ভিন্ন কথা বলছেন, সাপ বিশেষজ্ঞরা।

রাজশাহীর পবা উপজেলার ক্লে রেসকিউ অ্যান্ড স্টাডি ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা বোরহান বিশ্বাস রোমেন বলেন, ৮ থেকে ৯ ফুট লম্বা একটি বাচ্চা অজগর আড়াই বছর পর কখনোই ১৯ ফুট লম্বা হবে না। অজগরের দৈহিক বৃদ্ধি এতো বেশি নয়। আড়াই বছরে সাপটি সর্বোচ্চ তিন থেকে চার ফুট লম্বা হতে পারে।

তিনি বলেন, চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন- অজগরটি ভারতীয় ‘রকি’ প্রজাতির। কিন্তু এটি ‘বার্মিজ’ প্রজাতির সাপ। বাংলাদেশে শুধু রকি, বার্মিজ এবং রেটিকুলেটেড প্রজাতির অজগর পাওয়া যায়।

বোরহান বিশ্বাস দাবি করেন, তিনি খবর পেয়েছেন বন্যার পানিতে ভারত থেকে অজগর সাপ আসছে। গত এক মাসে গোদাগাড়ীর পদ্মাপাড়ের কয়েকটি গ্রাম ও চরে অন্তত ১৫টি অজগর সাপ মেরে ফেলা হয়েছে। এই সাপটিও বানের পানিতে ভেসে এসেছে বলে ধারণা করছেন তিনি।

একই কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াইল্ড লাইফ বায়োলজিস্ট ফয়সাল আহমেদ পিয়াস। তিনি বলেন, অজগর এক স্থানে বসে থাকার প্রাণী নয়। সে প্রতিনিয়ত আবাসস্থল পরিবর্তন করে। আড়াই বছর ধরে সাপটি বিচারকের বাংলোর মতো সংরক্ষিত এলাকায় থাকলেও সে কারও না কারও চোখে পড়তো। তাই তিনিও ধারণা করছেন, বাংলোর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদী থেকেই উঠে এসেছে সাপটি।

তবে চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. ফরহাদ উদ্দিন বলেছেন, আড়াই বছর আগে অজগরের খাঁচায় চিড়িয়াখানার যেসব কর্মীরা খাবার দিতে যেতেন, তারাই নিশ্চিত করছেন এটি সেই হারিয়ে যাওয়া অজগর। আর চিড়িয়াখানা এবং জজের বাংলোর মাঝে শুধু একটি রাস্তা। তাই তারা মনে করছেন, এটিই তাদের হারিয়ে যাওয়া অজগর।

ফরহাদ উদ্দিন বলেন, খুব সম্ভবত ড্রেনের ভেতর দিয়ে অজগরটি জজের বাংলোয় ঢুকেছিল। ৬৫ বিঘা জমির ওপর জজের বাংলো। ভেতরে ঝোপঝাড় ও জঙ্গল রয়েছে। সেখানে রয়েছে শেয়াল, ইঁদুর এবং প্রচুর বেজি। এসব খেয়েই বেঁচে ছিল অজগরটি। আর এলাকাটি সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। তাই নিরাপদেই ছিল সাপটি।

(ঢাকাটাইমস/৬সেপ্টেম্বর/আরআর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :