মন খারাপের ঈদেও উৎসবের আমেজ

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে
 | প্রকাশিত : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:০৬

মন খারাপের ঈদ। কষ্টের ঈদ। এর আগে এই অঞ্চলে এভাবে আসেনি। উত্তরজনপদে অনেক গ্রাম আছে যেখানে এবার একটি গরুও কোরবানিও হয়নি। অন্য যে কোনো বছরের তুলনায় এই অঞ্চলের মানুষ ঈদকে এবার ভালোভাবে উপভোগ করতে পারেনি। পরপর দুই দফা বন্যায় যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, বাঙালি পাড়ের মানুষ চরম ভাবে নাজেহাল হয়েছে। কয়েক লাখ একর ফসলের মাঠ বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে। এখনো এই অঞ্চলের অনেক মানুষ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়ে আছে। মানবেতর জীবন পর করছে সেখানে। এই অবস্থায় তাদের ঘরে ঈদের আমেজ অনেকটাই পানসে হয়ে আসে। তার পরেও জীবন যুদ্ধের যোদ্ধারা তাদের সাধ্য অনুযায়ী ঈদকে উপভোগ করার চেষ্টা করেছে।

বন্যায় শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির কারণে অনেকের বাড়িতে এবার কোরবানি হয়নি। তার পরেও মন খারাপের এই ঈদেও এক চিলতে উৎসবের আমেজ দেখা গেছে শহর নগর গ্রামে। ধর্মীয় আনুষ্ঠাকিতা একদিনেই শেষ হলেও ঈদের আমেজ পুরো সপ্তাহজুড়েই চলতে থাকে। উত্তরজনপদের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সেই আমেজ এখনো বহমান। ঈদ মানেই উৎসব। ঈদ মানেই আনন্দ। উৎসবে মেতে ওঠে শহর নগর। মেতে ওঠে পাড়া গ্রাম। ঈদকে কেন্দ্র করে উৎসব চলে সপ্তাহ খানেক সময় জুড়ে। ঈদের আগে চলে কেনা কাটার উৎসব এবং পড়ে শুরু হয় আনন্দের ঢেউ।

নৌভ্রমণ

উত্তরের জেলা বগুড়া এবং গাইবান্ধার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনা নদীও এবারের ঈদ উৎসবের অংশ হয়েছিলো। পর্যটন এলাকাগুলোর চেয়ে কোন অংশে কম ছিল না যমুনার পাড় এবং মাঝ নদী। বগুড়ার সারিয়াকান্দি এবং ধুনট পয়েন্টে যমুনা পাড়ের একাধিক এলাকা এবারের ঈদে হয়ে ওঠে হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখরিত। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নদী ভ্রমণ, নৌকা ভ্রমণ করতে আসা জয়পুরহাটের বাসিন্দা রেজাউল করিম জানান, বৌ বাচ্চাদের নদী দেখানোর জন্য সারিয়াকান্দির প্রেমযমুনার ঘাটে এসেছি। ঈদের আনন্দকে আরো জমিয়ে তোলার জন্যই মুলত এখানে আসা। নৌকা ভাড়া করে তিনি দুই ঘন্টা সময় কাটান যমুনা নদীতে। স্থানীয়দের পাশাপাশি নওগা, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা জেলাসহ অনেক দূরদূরন্ত থেকে দর্শনার্থীরা নিয়মিতই এখানে আসে। ঈদের ছুটিতে আরো বেশি মানুষের উপস্থিতি নদীপাড়কে সরব করে তুলেছিল। সারিয়াকান্দির স্থানীয় সাংবাদিক ইমরান হোসাইন রুবেল জানান, বছরের সব সময় সারিয়াকান্দির প্রেমযমুনার ঘাটে দর্শনার্থীদের আগমন ঘটলেও ঈদের সময় কয়েকগুণ বেশি মানুষ এখানে নদী দেখতে আসেন।

সরেজমিনে ঈদের দ্বিতীয় দিনে বগুড়ার সারিয়াকান্দির প্রেমযমুনার ঘাট, কালিতলা গ্রায়েন বাঁধ, ধুনটের বৈশাখীরচরসহ ফুলছড়ি এবং বালাসি ঘাট এলাকাতে ঘুড়ে দেখা গেছে, সেখানে হাজারো শহুরে মানুষের ঢল। নদীপাড়গুলোতে দর্শনার্থীদের আগমনে গড়ে উঠেছে ছোটছোট দোকানঘর। তারা পানীয় পণ্যসহ বিভিন্ন রকম খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেছে সেখানে।

ঘাটে অবস্থান করা শতশত নৌকা সোভা পাচ্ছে। দর্শনার্থীরা এসব নৌকা ভাড়া করে নদীতে ঘুড়ছে ইচ্ছে মত। ছোট বড় এবং মাঝরি সাইজের এসব নৌকা ঘণ্টা চুক্তিতে ভাড়া পাওয়া যায়। দুইশত টাকা ঘণ্টা ভাড়া হলেও বর্তমানে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়ের কারণে পাঁচশ থেকে সাতশ টাকার কমে নৌকা মিলছে না।

নৌকার মাঝি আব্দুল্লাহ জানান, ঈদের মৌসুমে দশ বারো দিন লোকজন বেশি আসে এখানে। এসময়ে তাদের নৌকা চালিয়ে তুলনামূলক বেশি আয় হয়। এজন্য তারা খুশি।

সাবেক ছাত্রদের ঈদ আড্ডা

‘এসো মিলি প্রাণের টানে, বন্ধুত্বের আহবানে’ স্লোগানকে সামনে রেখে ভরতখালী উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদের পুনর্মিলনী হয়েছে। গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ওই উচ্চবিদ্যালয়ের ২০০২ সালের এসএসসি ব্যাচের ছাত্ররা অনুষ্ঠানটি করে। জমকালো এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন বর্তমান ও সাবেক শিক্ষকরাও।

রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা বিনিময়

জাতীয় নির্বাচনের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে নির্বাচনে লড়বেন এমন সম্ভাব্য প্রার্থীরা এবার এলাকায় ঈদ করেছেন। ঈদের আগেই তারা এলাকায় এসে পড়শীদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। ঈদের পর পুরো নির্বাচনী এলাকায় তাদের ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা গেছে।

(ঢাকাটাইমস/৬সেপ্টেম্বর/জেডএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :