পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় বান্ধবীর আগুনে দগ্ধ রেখা
মুখ আর বুক ছাড়া শরীরের সব অঙ্গে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে রেখা বেগমের। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের একটি বেডে শুয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন তিনি। অনেক কিছুই বলার চেষ্টা করছেন তিনি। কিন্তু যন্ত্রণায় কথাগুলো অস্পষ্ট হয়ে উঠছে তার। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রেখা একবার বললেন, ‘ফেরদৌসি তুই এই করলি’!
এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর দরগাপাড়া এলাকায় রেখার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যান এক নারী। এরপর রেখাকে হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুধু এই ফেরদৌসির নামই বলেছেন রেখা। তার এ কথার ভিত্তিতে রাতেই অভিযান চালিয়ে ফেরদৌসি খাতুনকে আটক করেছে পুলিশ।
কে এই ফেরদৌসি- জানতে চাইলে রেখার ভাই নওশাদ আলী জানালেন, ফেরদৌসি তার বোন রেখার বান্ধবী। তবে গত কয়েক বছর ধরে রেখার স্বামী কামরুল ইসলামের সঙ্গে তার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক চলছে। বিষয়টি জানতে পেরে রেখা তাদের পরকীয়ায় বাধা দেয়। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে ফেরদৌসি তার বান্ধবী রেখার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
রেখার বাবার বাড়ি নগরীর হেতেমখাঁ এলাকায়। নগরীর কলাবাগান এলাকায় তিনি তার স্বামীর সঙ্গেই থাকেন। রেখার ভাই নওশাদ বলেন, পরকীয়ার জের ধরে রেখার সংসারে দীর্ঘ দিন ধরেই অশান্তি চলছিল। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রেখা দরগাপাড়া এলাকায় হযরত শাহ মখদুম রূপস (র.) মাজারে মাগরিবের নামাজ আদায় এবং দোয়া করতে গিয়েছিলেন।
পরে মাজার থেকে বের হয়ে তিনি পদ্মা নদীর পাড়ে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। সেখানেই তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এরপর রেখা নদীতে ঝাঁপ দেন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। অভিযুক্ত ফেরদৌসির বাড়ি ঘটনাস্থল থেকে সামান্য একটু দূরের কশাইপাড়া মহল্লায়। তার বাবার নাম আলম হোসেন।
রামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক আফরোজা নাজনিন জানান, আগুনে রেখার শরীরের ৮০ ভাগ অংশ দগ্ধ হয়েছে। তার অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত ঢাকায় পাঠানো প্রয়োজন।
নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমান উল্লাহ জানান, হাসপাতালে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ রেখার জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। ফেরদৌসি তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়েছেন বলে রেখা জানিয়েছেন। এ ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ফেরদৌসিকে আটক করেছে।
ওসি জানিয়েছেন, আটকের পর ফেরদৌসিকেও এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারপরেও এ ঘটনায় থানায় মামলা হবে বলেও জানান বোয়ালিয়া থানা পুলিশের এই কর্মকর্তা।
(ঢাকাটাইমস/৮সেপ্টেম্বর/জেডএ)