রোহিঙ্গা সংকট: মিয়ানমারকে বাধ্য করার তাগিদ বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৬:৪৯ | প্রকাশিত : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৫:৫৪
ফাইল ছবি

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট ও দেশটির বিমান বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনায় সরকার চুপ থেকে নতজানু পররাষ্ট্রনীতির পরিচয় দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া এবং সংকট সমাধানে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে ‘সক্রিয় কূটনৈতিক তৎপরতা’গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে দলটি।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের হত্যা-নির্যাতন বন্ধের দাবিতে শুক্রবার সকালে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবি জানান।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে আয়োজিত মানববন্ধন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে শেষ হয় ১১টায়। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধের দাবি সংবলিত নানা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড বহন করেন।

ঢাকাসহ সারা দেশে ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচি একযোগে পালনের ঘোষণা থাকলেও বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেন, বিভিন্ন জেলায় পুলিশ এই মানববন্ধন কর্মসূচি করতে দেয়নি।

সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের খুব সুস্পষ্ট দাবি। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হোক, তাদের খাদ্য, নিরাপত্তা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। একই সঙ্গে সক্রিয় কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্য দিয়ে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করা হোক এই রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে।’

রোহিঙ্গারা হিন্দু না মুসলিম– এটা জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ওরা মানুষ। সেই মানবতার বিরুদ্ধে আজকে মিয়ানমার সরকার যুদ্ধ শুরু করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। আসুন, জনমত সংগঠনের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ করে আমরা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই, তারা যেন এই গণহত্যা বন্ধ করে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়।’

মিয়ানমারের বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের সীমানা লঙ্ঘন করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল। এ ঘটনায় সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি দাবি করে তিনি এর সমালোচনা করেন। ফখরুল বলেন, ‘যখন তাদের (মিয়ানমার) বিমান আকাশসীমা লঙ্ঘন করে, তখন এই সরকার চুপ করে থাকে। এটা হচ্ছে এদের (সরকার) নতজানু পররাষ্ট্রনীতির পরিচায়ক।’

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিপীড়নের শিকার হয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা গত ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের দিকে ছুটে আসে আশ্রয়ের জন্য। জাতিসংঘের ধারণামতে এই সময়ে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। এর আগেও বিভিন্ন সময় বহু রোহিঙ্গা আশ্যয় নিয়েছে। কয়েক দশক ধরে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে চলছে বাংলাদেশ।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘বিশ্বমানবতার পক্ষে আজকে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে যে ভয়াবহ মানবিক নির্মম অত্যাচার চলছে, তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের প্রতিবাদ জানাতে আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি। দুর্ভাগ্য আমাদের, সমগ্র বিশ্ব যখন আজকে সোচ্চার হয়ে উঠেছে, সমস্ত মানবতা যখন রুখে দাঁড়িয়েছে, তখন বাংলাদেশের সরকার যারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়নি, যাদের জনগণের সাথে সম্পর্ক নাই, তারা আজকে প্রায় নিশ্চুপ ভূমিকার পালন করছে।’

গণমাধ্যমে প্রকাশিত নাফ নদীর তীরে রোহিঙ্গা শিশুদের লাশ পড়ে থাকা, পলায়নরত রোহিঙ্গাদের নৌকা ডুবে মৃত্যু, আরাকান সেনাবাহিনী আরাকানে রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়িয়ে দেয়ার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ সময় আমাদের সরকার নীরব ভূমিকা পালন করেছে। কূটনৈতিক দিক থেকে তারা (সরকার) সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে ।’

১৯৭৯ সালে রোহিঙ্গা সংকটের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময়ে আরাকানে একই ঘটনা ঘটেছিল। তখন পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন, খাদ্য ও চিকিৎসা প্রদান করেছেন। একই সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্য দিয়ে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করেছেন সেই সময়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেশে ফিরিয়ে নিতে।’ ১৯৯২ সালে খালেদা জিয়ার সময়ও মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে বিশ্বমানবতার জন্য মানবিক কারণে যেকোনো দুঃস্থ মানুষকে আশ্রয় দেয়া ও তাদের পাশে দাঁড়ানো মৌলিক দায়িত্ব। আমাদের সংবিধানেও সেটা পরিষ্কার বলা আছে, বিশ্বমানবতার পাশে সবসময় দাঁড়াতে হবে, দুঃস্থ নির্যাতিত মানুষের পাশে সব সময় দাঁড়াতে হবে। সেখানে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। কারণ একটাই এই সরকার গণবিচ্ছিন্ন সরকার, তাদের জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহি নেই।’

প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর পরিচালনায় মানববন্ধনে আরো বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান প্রমুখ।

অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ফরহাদ হোসেন ডোনার, আতাউর রহমান ঢালী, গৌতম চক্রবর্তী, আশরাফউদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, আবদুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, বেলাল আহমেদ, ফরিদা মনি শহিদুল্লাহ, আমিরুল ইসলাম আলীম, কাদের গনি চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কাজী আবুল বাশার, উত্তরের আহসানউল্লাহ হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, যুবদলের মোরতাজুল করীম বাদরু, মামুন হাসান, এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, মহিলা দলের জেবা খান, হেলেন জেরিন খান, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক খান, তাঁতী দলের আবদুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, মিলন মেহেদী, জাসাসের শায়রুল কবির খান, শাহরিয়ার ইসলাম শায়লা, ছাত্রদলের আকরামুল হাসান প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/৮সেপ্টেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :