করতোয়া সেতুতে ফাটল, যানজটের ভোগান্তিতে উত্তরের যাত্রীরা

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে
 | প্রকাশিত : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৯:১৪

বগুড়ায় এক মাসের মাথায় করতোয়া সেতুতে আবারো ফাটল দেখা দিয়েছে। সেতুটিতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। সড়ক বিভাগ স্থায়ী পদক্ষেপ না নেয়ায় ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হচ্ছে যানবাহন। এক লাইনে থেমে অন্য লাইনের গাড়ি পার করার কারণে দুই পাশে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজটের। মহাসড়কে গাড়ির চাকা বন্ধ থাকছে ঘণ্টার পার ঘণ্টা। যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে।

বগুড়ার মহাস্থানে করতোয়া নদীর উপর অবস্থিত ব্রিজটি দুই তিন বছর ধরেই ঝুঁকির মধ্যে ছিল। সড়ক বিভাগের উদাসীতায় শেষ পর্যন্ত যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। গত সপ্তাহে ৮ আগস্ট বিপজ্জনক ফাটল দেখা দিলে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। এতে ঢাকা-রংপুরসহ উত্তরের আট জেলার সাথে মহাসড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। টানা ৩০ ঘণ্টা আটকে থাকে যানবাহন।

পরে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কর্মকর্তারা ১২ আগস্ট শনিবার রাত থেকে রবিবার বিকাল পর্যন্ত ব্রিজটি সংস্কারের কাজ করেন। পরে তা যানবাহন চলাচলের জন্য ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর ১৬ আগস্ট রাতে ব্রিজটিতে ফের ফাটল দেখা দেয়। এতে উত্তর অঞ্চলের আটটি জেলা থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী বাসসহ শতশত পণ্যবাহী ট্রাক ব্রিজের দুই পাশে আটকা পড়ে। মাত্র তিন দিনের মাথায় যানবাহন চালাচল বন্ধ হয়ে যায়। আবারো কোনো রকম মেরামত করে ব্রিজটি।

এক মাসের মাথায় আবারো অকেজো হয়ে যায় ব্রিজটি। ফলে শুক্রবার সকাল থেকেই ব্রিজের দুই পাশে মহাসড়কে হাজার হাজার পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী কোচ আটকে পড়ে। ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলের সাথে সড়কপথে যোগাযোগের একমাত্র পথ অনেকটাই বন্ধ হয়ে যায়।

গাইবান্ধা সাদুল্লাপুরের এরশাদুল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, গাইবান্ধা থেকে সকালের বাসে বগুড়ার পথে রওনা দেন তিনি। পলাশবাড়ী থেকে কিছু দূরপথ যেতেই তার বাসটি জ্যামে আটকে যায়। টানা এক ঘণ্টা বাস চলাচল বন্ধ থাকায় তিনি বাস থেকে নেমে আবারো গাইবান্ধা চলে যান। পরে তিনি রেলযোগে বগুড়ায় পৌঁছেন।

এদিকে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার যানবাহন এই রাস্তায় চলাচল করে। এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন মহাস্থানের এই করতোয়া ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে।

বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের শিবগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ের প্রাণকেন্দ্র দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীর উপর অবস্থিত উত্তরাঞ্চলের সড়কপথে যোগাযোগের একমাত্র সেতুপথটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রায় ৬০ বছর আগে নির্মিত সংকীর্ণ সরু এই সেতুটি মাঝে মাঝে সড়ক দুর্ঘটনায় রেলিং ভেঙে যায়। সেটি নামেমাত্র সংস্কার করে সচল রাখা হয়। ব্রিজের প্রশস্ততা বাড়ানোর দাবি বিভিন্ন মহল থেকে উঠলেও কর্তৃপক্ষের নজরে আসেনি।

ব্রিজটি সরু হওয়ায় গত দেড় বছরে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে প্রায় ১০টি। এতে প্রাণহানি ঘটে অন্তত পাঁচটি। মাস কয়েক আগে ব্রিজের পশ্চিম পাশে একটি সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এরপর হানিফ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি যাত্রীবাহী বাস এই ব্রিজ অতিক্রম করার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নদীতে ঝুলে পড়ে। অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পায় প্রায় ৫০ জন যাত্রী। এরপর ওই একই স্থানে একটি সবজি কপি বোঝাই ট্রাক উল্টে চালক ও সহকারী আহত হয়। চলতি বছরের ১৫ মে, সোমবার ভোর ৬টায় ওই ব্রিজের কাছে পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। গতকাল বিকালে ব্রিজটির মাঝামাঝি স্থানে আকস্মিক বড় ধরনের ফাটলে দেবে যায়। ফলে ব্রিজটি যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ব্রিজটি ফাটল ও দেবে যাওয়ায় ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসন থেকে সতর্কতার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ব্রিজে লাল পতাকা ও সাইনবোর্ড লাগিয়ে ভারী যানবহন চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া দিন-রাত কাজ করছে ট্রাফিক ও শিবগঞ্জ থানা পুলিশ। তবে এরপরেও ঝুঁকি নিয়ে চলছে পাথর বোঝাই ও অধিক পণ্যবাহী ভারী যানবাহন।

মোকামতলা পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ মিজানুর রহমান ঢাকাটাইমসকে জানান, শুক্রবার সকাল থেকেই গাড়ির চাপ বেশি থাকায় যানজট দীর্ঘায়িত হয়। এই যানজট আরও দীর্ঘ হবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

(ঢাকাটাইমস/০৮সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :