‘আমগো তো কেউ খবর নেয় না’
‘ভয়াবহ বন্যা ও অতিবষর্ণে কেড়ে নিয়েছে আমার মৃত স্বামীর রেখে যাওয়া একমাত্র জীবনের শেষ আশ্রয়টুকুও। কে তুমি বাবা! আমগো তো কেউ খবর নেয় না। ঘর-বাড়ি, খাবার-দাবার সবই বন্যায় রাতের আধারে ভেসে গেছে। শুধু জীবনটাই বাঁচাতে পেরেছি। এখন ভিটের এতটুকু মাটিও আর বাকি নেই। শেষ পর্যন্ত স্বামীর স্মৃতিজড়িত একমাত্র জায়গাও হারাতে বসেসি। শুধু অথৈই পানি আর পানি। আমগো একটু থাকার জায়গা কি হবে?’
শুক্রবার দুপুরে ঢাকাটাইমসকে কথাগুলো বলছিলেন এবারের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নাটোরের সিংড়া উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের ভূমিহীন সামিয়ারা বেওয়া (৫৬)। স্বামী মৃত গোলাম মোস্তফা, প্রায় ১৫ বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
চার ছেলের অভাবের সংসার জীবনে টিনের তৈরি ৩টি ঘর ছাড়া কিছুই ছিল না তাদের, তাও গত ২০ আগস্ট রাতের আঁধারে সম্পূর্ণ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন বেকার তিন ছেলেকে নিয়ে আশ্রয় জুটেছে পাশের আজাদ জোদদারের বারান্দায়। সব হারিয়ে নিঃস্ব এই পরিবারে এখন নেই কোন খাবার ব্যবস্থা। ভয়াবহ বন্যার মধ্যে যেতে পারেননি তারা কোন আশ্রয়কেন্দ্রেও।
সরোজমিনে দেখা গেছে, এমন অনেক পরিবার রয়েছে যারা এবারের বন্যায় সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব।
সামিয়ারা বেওয়ার ছোট ছেলে ফাহাদ হোসেন (১৪) বলেন, তিনি স্থানীয় কলম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। বড় ভাই আব্দুল খালেক বিয়ে করে অনেক আগেই আলাদা হয়ে গেছেন। তার মা ও ৩ ভাই ভিটে-মাটি হারিয়ে তারা এখন নিঃস্ব। এখন তার লেখাপড়াও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে।
প্রতিবেশী মুক্তিযোদ্ধা ডা. নুরুল ইসলাম জানান, এবারের বন্যায় সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে সামিয়ারা বেওয়ার পরিবার। আশ্রয় কেন, কোন খাবারই নেই তাদের ঘরে। তার নিজের বিল্ডিং বাড়িও এখন ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ করে তার বাড়িটি বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
সিংড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সৈয়দ আরিফুল হক জানান, এবারের বন্যায় উপজেলার ১ হাজার ১২০টি পরিবার সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ৮ হাজার ২শটি পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরে গেলেও ওই বাড়িগুলো এখন থাকার অনুপোযগী হয়ে পড়েছে।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসিফ মাহমুদ জানান, ইতোমধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নির্দেশনা মোতাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত উপজেলার ৯০টি পরিবারের মধ্যে ১৭৯ বান্ডিল ঢেউটিন ও নগদ ৫লাখ ৩৭ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বেসরকারিভাবে ২৫টি পরিবারের মধ্যে আরো ৫০ বান্ডিল ঢেউটিন ও নগদ ১ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। আগামীতে আরো ২০ হাজার বান্ডিল ঢেউটিন ও ৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহযোগিতা করার জন্য তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
(ঢাকাটাইমস/১০সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)