ধর্ষিতা কিশোরীর মৃত্যুতে জড়িতদের শাস্তি দাবি
নেত্রকোণা সদর উপজেলায় ধর্ষণের শিকার কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ হয়েছে।
রবিবার বিকাল পৌণে পাঁচটার দিকে শহরের মোক্তাপাড়া এলাকায় পৌরসভার সামনের সড়কে ‘নাগরিক সমাজ, নেত্রকোনা’র ব্যানারে এ মানববন্ধন করা হয়।
একই দাবিতে এর দুই দিন আগে গত শুক্রবার বিকালে ঠাকুরাকোনা এলাকাবাসী বিক্ষোভ করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা অনতি বিলম্বে এ ঘটনায় জড়িত তরুণদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এতে জেলা উদীচী, মহিলা পরিষদ, সচেতন নাগরিক সমাজ ঠাকুরাকোনা, জেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি, স্বাবলম্বী, নারীপ্রগতিসহ শহরের অন্তত ১৫টি সংগঠন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের ব্যানার নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়ায়। এছাড়া নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন অংশ নেন।
দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা মানববন্ধনে বক্তব্য দেন- মেয়েটির মা আলপনা আক্তার, বাবা লাল চান মিয়া, ঠাকুরাকোনা রহিম উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দস সামাদ, সহকারী শিক্ষক জিয়াউর রহমান, জেলা সিপিবির সভাপতি অধ্যাপক মোস্তফা কামাল, মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাহেজা বেগম, উদীচী কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান খান, স্বাবলম্বীর ব্যবস্থাপক কোহিনুর বেগম প্রমুখ।
মাববন্ধনে মেয়েটির মা কেঁদে অভিযোগ করেন, গত রবিবার সন্ধ্যার দিকে ঠাকুরাকোনা গ্রামের তিন যুবক তার মেয়েকে (১৪) মাছের খামারে একটি ঘরে ডেকে নিয়ে যায়। রাত আটটার দিকে তিনি কৌশলে সেখানে গিয়ে তার মেয়েকে উদ্ধার করেন। তখন তার মেয়েকে বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল। সে (তার মেয়ে) ঘরে এসে বলে ওই তিন যুবক তাকে ধর্ষণ করেছে। কিছুক্ষণ পর যুবকদের মধ্যে একজন তাদের ঘরে এসে ঘটনাটি কাউকে জানালে তাদের মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়। কিন্তু স্থানীয় লোকজন বিষয়টি জেনে ফেলেন। পরদিন সোমবার বেলা ১১টার পর পাশের ঘরের আড়ার সঙ্গে মেয়ের ঝুলন্ত লাশ দেখে তাদের জানান স্থানীয় লোকজন। ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হওয়ায় লোকলজ্জায় মেয়েটি আত্মহত্যা করে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।
পুলিশ ও এলাকাবাসীরা জানায়, সোমবার দুপুরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের নেত্রকোণা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। কিন্তু তাতে ধর্ষণের কথা উল্লেখ করা হয়নি। শুধু হত্যা না আত্মহত্যা তা জানতে চাওয়া হয়।
মেয়েটির বাবা বলেন, গত বুধবার তিনি থানায় অভিযোগ দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ অভিযোগ না নিয়ে বলেছে, আগের অপমৃত্যুর মামলাটিই চলবে। এখন চলে যান।
এ বিষয়ে গত বুধবার নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি আমীর তৈমুর ইলী বলেছিলেন, ‘মেয়েটি গলায় দড়ি দিয়ে মারা গেছে। কোনো রেপ টেপ হয়নি। প্রেমসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে অভিমানে মরেছে।’
শুক্রবার বিকালে ঠাকুরাকোনা এলাকাবাসী বিক্ষোভ করলে পুলিশ তদন্তে নামে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ ছানোয়র হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে মেয়েটির ওই দিনে গায়ে পড়া পোশাকসহ কিছু আলামত সংগ্রহ করে।
ঘটনাটি জানতে রবিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী মেয়েটির মা ও স্থানীয় কয়েকজনকে তার কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। বিষয়টি শুনে তিনি প্রকৃত বিচার পাওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।
পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী বলেন, বিষয়টি পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে। মেয়েটির মাকে বলা হয়েছে তিনি চাইলে আইন অনুযায়ী আবার মামলাও করতে পারেন। আদালতের কাছে আবেদন করে আবার ময়নাতদন্তও করা যাবে।
জেলা শহরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে জেলা সিপিবির সভাপতি অধ্যাপক মোস্তফা কামাল বলেন, পান্না ধর্ষণকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। আট দিনেও মামলা না নেয়ায় তিনি পুলিশের ভূমিকার নিন্দা জানান। স্থানীয় থানার পরিদর্শকের রহস্যজনক আচরণের প্রতিবাদ জানান। পান্নার মৃত্যুর জন্যে দায়ীদেরসহ ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এতে অন্যথা হলে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
(ঢাকাটাইমস/১০সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)