আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণে প্রস্তুত ছাত্রলীগ

মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২১:২৬ | প্রকাশিত : ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২১:০২

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণে প্রস্তুতি নিচ্ছে ছাত্রলীগ। নির্বাচনকে সামনে রেখেই সংগঠনকে সাজানো হচ্ছে। নেতাকর্মীদের তৈরি করা হচ্ছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনকে নিয়ে এমন পরিকল্পনার কথা ঢাকাটাইমসকে জানান ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি সৈয়দ মিজানুর রহমান।

সম্প্রতি ঢাকাটাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নির্বাচন কেন্দ্রিক সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রম ও পরিকল্পনা তুলে ধরেন সৈয়দ মিজান।

সৈয়দ মিজানুর রহমান জানান, ঢাকা মহানগর উত্তরে আটটি সংসদীয় আসন রয়েছে। এই আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের যেসব প্রার্থী মনোনয়ন পাবেন তাদের জয় ছিনিয়ে আনতে সর্বাত্মক ভূমিকা পালন করবে ছাত্রলীগ। এজন্য নির্বাচনী এলাকার প্রত্যেকটি থানা এবং ওয়ার্ডের আওতায় নির্বাচনী কেন্দ্র ভিত্তিক ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হবে। ছাত্রলীগের প্রত্যেক কর্মীকে সুশৃঙ্খল, প্রশিক্ষিত কর্মী হিসেবে তৈরি করা হবে। ছাত্রলীগ আন্দোলন সংগ্রামে যেমন নেতৃত্ব দেয় তেমনি আগামী নির্বাচনেও অগ্র সেনানীর ভূমিকা পালন করবে। নির্বাচনী যুদ্ধের ময়দান থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও জনগণের সেবা করার সুযোগ ছিনিয়ে আনবে ছাত্রলীগ। এটিই হচ্ছে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের প্রত্যয়।

ঢাকা মহানগর উত্তরের ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে মিজানুর রহমান বলেন, মহানগর উত্তরে নতুন করে ২৪টি ওয়ার্ড পেয়েছি। ওয়ার্ডগুলোতে কমিটি নেই। পুরাতন ৩৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৩টি ওয়ার্ডে কমিটি হয়েছে। নতুন ও পুরোনো সব ওয়ার্ডেগুলোর কমিটি সেপ্টম্বর-নভেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। আমাদের লক্ষ্য ও টাগের্ট একটাই ২০১৯ সালের নির্বাচন। এই নির্বাচনটা বড় চ্যালেঞ্জিং নির্বাচন হবে। হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। এই বড় চ্যালেঞ্জিং নির্বাচনে মহানগর উত্তর ছাত্রলীগকে প্রস্তুত করতে চাই।

এক প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, ২০১৫ সালে ২৮ মে মাসে সম্মেলন হওয়ার পরে ৩০ মে কমিটির দায়িত্ব পাই। পরের বছর ২০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়। এরপর কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, দায়িত্ব চলাকালীন কোনো ধরনের অন্যায়ের সঙ্গে আপস করা চলবে না। যদি কখনও কার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে এবং প্রমাণিত হয় সঙ্গে সঙ্গে কমিটি থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। শুধু বহিষ্কার নয়, আইনের হাতে তুলে দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। ফলে কমিটিতে যারা আছেন কেউ কোনো অপকর্মের দুঃসাহস দেখায়নি।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের এই কাণ্ডারি বলেন, আমি তৃণমূল থেকে রাজনীতি করেছি। একটি ওয়ার্ডের আওতায় ৯টি ইউনিট থাকে। সেই ইউনিটের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। এরপর ওয়ার্ড কমিটির আহ্বায়ন, পরে সভাপতি। এরপর থানার প্রচার সম্পাদক, জয়েন্ট সেক্রেটারি, মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক এরপরে সভাপতি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ব্যক্তিগতভাবে কোনো অপকর্মের সঙ্গে জড়াইনি। এমনকি কোনো অপকর্মকে প্রশ্রয় দেয়নি। আমার লক্ষ্য ছিল আমি যদি কোনো সংগঠনের দায়িত্ব পাই সেখানে অপকর্মের কোনো সুযোগ থাকবে না। এরপরেও কমিটির কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বহিষ্কারসহ তাকে তাৎক্ষণিক আইনের হাতে তুলে দিয়েছি।

মিজানুর রহমান বলেন, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমরা কাউকে দল থেকে বহিষ্কার করতে পারি না। কারও অপকর্ম প্রমাণিত হলে তাকে ওই পদ থেকে অব্যাহতি দিতে পারি। এবং তাকে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠাই। কেন্দ্র থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। আমি মনে করি দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভাল। উৎশৃঙ্খল হাজার হাজার নেতাকর্মীর দরকার নেই।

মহানগর উত্তরের ছাত্রলীগের এই সভাপতি বলেন, দায়িত্ব নেয়ার আগে যেসব স্বপ্ন দেখেছি তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। মহানগর ছাত্রলীগ তার গৌরব উজ্জ্বল ভূমিকায় থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন আর স্বপ্ন নয় বাস্তবায়নে রূপ নিয়েছে। উন্নয়নশীল বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন তা তরান্বিত এবং বাস্তাবায়নে ছাত্রলীগ এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, এরশাদ বিরোধী আন্দোলন ও খালেদা জিয়ার দুঃশাসনের সময় ছাত্রলীগের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। ওই সময়ে যারা ছাত্রলীগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে দিন পার করেছেন। একটি গামছা কিংবা লুঙ্গি পড়ে গোসল করতেন আর একই ময়লা প্যান্ট ও শার্ট পড়ে ছয় থেকে সাত দিন কাটিয়েছেন। অর্থের অভাবে সেভ কিংবা মাথার চুল কাটতে পারেনি। দিনের পর দিন এক বেলা খেতে পারলেও অন্য বেলা খেতে পারত না। বাড়িতে গিয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারতেন না। ফলে ছাত্রলীগ কর্মীদের চেহারা ভেঙে পড়ত। আর সেই কৌশল অবলম্বন করে ষড়যন্ত্রকারীরা ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার প্রচার করছে। জনসাধারণকে ভুল বুঝানোর চেষ্টা করেছে ছাত্রলীগ মানেই সন্ত্রাস, অস্ত্রবাজ। এ ধরনের মিথ্যাচার থেকে ছাত্রলীগ বের হয়ে এসেছে। ছাত্রলীগের ঐতিহ্য দীর্ঘ দিনের। ছাত্রলীগ নিজেদের আদর্শের জন্য রাজপথে সংগ্রাম ও রাজনীতি করে কিন্তু কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য নয়।

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের আর্থিক অসমর্থতার বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরে এই নেতা বলেন, আমাদের দেশে ছাত্রজীবনে টিউশনি ছাড়া অর্থ উপার্জনের বিকল্প তেমন কোনো পথ থাকে না। ২০০৩ সালে দলের দুঃসময়ে আমি টিউশনি করতাম। সেই টাকা দিয়ে নিজে চলতাম এবং নেতাকর্মীদের চালাতাম। তখন কেউ টাকা দিত না। টিউশনি থেকে যে টাকা উপার্জন করতাম সেই পয়সা সংগঠনের পেছনে খরচ করেছি। শুধু আমি নই আওয়ামী লীগের এখন যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রত্যেকের জীবনের পেছনে সংগ্রামী ইতিহাস রয়েছে। চরিত্র গঠনে আদর্শ মানুষ হিসেবে ছাত্রলীগ কাজ করছে।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে এই সংগঠনের ১৭ হাজার নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন। যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের অগ্রণী ভূমিকা ভোলার নয়।

ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, নিজেকে সারা জীবন নৌকার যাত্রী হিসেবে থাকতে চাই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনীতি করে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত পার করতে চাই।

সৈয়দ মিজানুর রহমান ময়মনসিংহের নান্দাইলে জন্মগ্রহণ করেন। বয়স যখন সাড়ে চার বছর, তখনই জয় বাংলা স্লোগান শুনতে শুনতে বড় হয়েছেন। তবে রাজনীতির হাতেখড়ি ঘটেছে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে। তেজগাঁও এসএসসি পড়া অবস্থায় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যোগ দেন। ২০০২ সালে তেজগাঁও ছাত্রলীগ থানার প্রচার সম্পাদক হন। ধীরে ধীরে তেজগাঁও রেলগেট ওয়ার্ড ছাত্রলীগের ইউনিটের সভাপতির দায়িত্ব পান। সেখান থেকে ২০০৫ সালে ৩১ ডিসেম্বর ওয়ার্ডের আহ্বায়ক হন। তখন অবশ্য বিএনপির শাসন আমল। এরপর থানা ছাত্রলীগের আহ্বায় কমিটির মেম্বার, থানা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি। ২০১১ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে সম্মেলনের মধ্যদিয়ে ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন।

নানা প্রতিকূল পরিবেশের মাধ্য দিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় সৈয়দ মিজানের। ২০০১ সালে যখন জয় বাংলা স্লোগান দেয়ার লোক খুঁজে পাওয়া যেতো না তখন জয় বাংলার স্লোগান বুকে ধারণ করে রাজপথে মিছিল করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে বিএইচএমএস করছেন ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের এই সভাপতি।

(ঢাকাটাইমস/১০সেপ্টেম্বর/এমএম/জেডএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

দেশের অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা বিএনপি: ওবায়দুল কাদের

গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মধ্যেই প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দিলেন নুর

বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী 

কৃষির উন্নয়নে সমবায় পদ্ধতি চালু করার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর

আজ কৃষক লীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

আওয়ামী লীগ নিজেদের নৌকা নিজেরাই ডুবিয়েছে: মঈন খান

দেশের মানুষকে আর বোকা বানানো যাবে না: সালাম

নির্বাচনের পর বিরোধী দলগুলোর ওপর নানা কায়দায় নির্যাতন চালাচ্ছে আ.লীগ: মির্জা ফখরুল

বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী জনগণকে সরকার বন্দি করে রেখেছে: রিজভী 

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারায় বিএনপি: ওবায়দুল কাদের

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :