রোহিঙ্গা সংকট-২

বদলে যাওয়া সু চি

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ
 | প্রকাশিত : ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২১:১৩

মিয়ানমারে এমন মানবিক বিপর্যয়ে নির্লিপ্ত অং সান সু চি! তার নির্দেশেই সংখ্যালঘুদের উচ্ছেদ হচ্ছে। উল্টো তকমা দেওয়া হচ্ছে, পূর্ব আরাকান বর্তমান রাখাইন রাজ্যের মানুষজন নাকি সব সন্ত্রাস। নুন আনতে পান্তা ফুরায় গোছের এসব মানুষ নাকি মিয়ানমারে সন্ত্রাসীকা- করে বেড়াচ্ছে। অথচ এসব মানুষের পেশা মাছ ধরা। সমুদ্র উপকূলের প্রতিকূল পরিবেশে ঝড়-ঝঞ্ঝা মাথায় নিয়ে বেঁচে থাকা। একদিন সমুদ্রে যেতে না পারলে, কায়িক পরিশ্রম না করতে পারলে যাদের উনুন জ¦লে না তাদের সন্ত্রাস তকমা দিয়ে তাড়িয়ে দিচ্ছেন সু চি নিয়ন্ত্রিত সেনারা। এই হচ্ছে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামের প্রতীক সু চি।

ধর্ম ও জাতিগত বিচারে মিয়ানমারে সংখ্যালঘু নির্যাতনের দিকে তাকিয়ে বিশ^বাসীর প্রশ্ন, নারী, শিশু, বৃদ্ধদের ওপর যে বর্বরতা চলছে, এর শেষ কোথায়? এদের দায় কে নেবে? শান্তিতে নোবেল বিজয়ী সু চি এই দায় এড়াতে পারবেন? বিশ^দরবার বলে পরিচিত জাতিসংঘের ভূমিকা কী হওয়া উচিত? ঘরছাড়া, দেশছাড়া রোহিঙ্গাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করেই তাদের দায়িত্ব শেষ? এটাই কেবল তাদের দায়িত্বের অংশ? এই মানুষজন যেন নিজের দেশে ফিরতে পারে, যারা সেখানে রয়েছেন তাদের যেন ঘরবাড়ি ছেড়ে সাগরে ভাসতে না হয় সেই উদ্যোগ কি জাতিসংঘ নিতে পারে না?

গত ২৫ আগস্ট শুরু হওয়া বর্বরতা নিয়ে কোনো কথাই বলেননি ক্ষমতাসীন সু চি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এত সমালোচনার কোনোটাতেই তিনি কান দেননি। নির্লিপ্ত থেকেছেন। ‘কিছুই হয়নি’ ভাব করে নিত্যদিনের কর্মসূচি চালিয়ে গেছেন। শেষে গত ৫ সেপ্টেম্বর মুখ খুললেন। তাও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সঙ্গে ফোনালাপে। রাখাইন রাজ্যে মুসলিম ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নির্যাতনের অভিযোগ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন। বললেন, সরকার রাখাইন রাজ্যের প্রত্যেককে রক্ষা করছে। সেই সঙ্গে সন্ত্রাসীদের স্বার্থ রক্ষা করতে প্রচুর ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলে সু চি অভিযোগ করেছেন। এনএলডি প্রধান উল্টো বলেছেন, তার সেনাবাহিনী নাকি রোহিঙ্গাদের রক্ষায় কাজ করছে! তার এই মিথ্যাচার নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নানা সমালোচনা হয়েছে, হচ্ছে।

সাফাই গাইলেন সুচি

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সঙ্গে ফোনালাপে অং সান সু চি রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের দায় স্বীকার না করে উল্টো নিজেদের সাফাই গেয়েছেন। বলেছেন, ‘মানবাধিকার বা গণতান্ত্রিক সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করার মানে কি হয় তা আমরা অন্যদের তুলনায় বেশ ভালোভাবেই জানি। আমাদের দেশের সব নাগরিকই তাদের অধিকার রক্ষার দাবিদার, এটা আমরা নিশ্চিত করেছি। এই অধিকার শুধু রাজনৈতিক নয় বরং সামাজিক এবং মানবিক প্রতিরক্ষারও দাবিদার তারা।’

সু চির অভিযোগ, সন্ত্রাসীদের উস্কে দিতে এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত সমস্যা সৃষ্টি করতে রোহিঙ্গা নির্যাতনের অনেক ভুল সংবাদ ও ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা-ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা শুরু হয়। গত দুই সপ্তাহে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এছাড়া অনুপ্রবেশের জন্য নো ম্যান্স ল্যান্ডে এখনো হাজার হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন।

সু চির নোবেল ফিরিয়ে নিতে দেওয়া হয়েছিল চিঠি

সু চি ক্ষমতার আসার পর মানুষের ওপর অমানুষিক নির্যাতনের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিল বিশ^নাগরিকরা। তারা সু চির শান্তি পদক ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য নোবেল কমিটির কাছে গণস্বাক্ষরসহ চিঠি দিয়েছিল। গত বছর ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশের নাগরিকরা লক্ষাধিক স্বাক্ষর সংগ্রহ করে নোবেল কমিটিকে পাঠিয়েছেন সু চির পুরস্কার বাতিলের জন্য। তাদের বক্তব্য, এমন নির্বিচার হত্যাযজ্ঞেও যে শাসক নীরব থাকতে পারে, সে আর যা-ই হোক শান্তিতে নোবেল পাওয়ার যোগ্য নয়।

কিন্তু নোবেল কমিটি বলছে নোবেল পুরস্কার ফিরিয়ে নিতে পারবেন না তারা। এই নিয়ম নেই। সু চি পুরস্কার পেয়েছেন তার আগের ভূমিকার জন্য। পুরস্কার পাওয়ার তিনি কী ভূমিকা পালন করছেন, সেটা দেখার দায়িত্ব তাদের নয়। তাই বদলে যাওয়া সু চির নোবেল নিয়েও তাদের মাথাব্যথা নেই।

লেখক: সাংবাদিক ও সাহিত্যিক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :