সাকিবের ব্যাপারটা আমার কাছে ধোঁয়াশাচ্ছন্ন

খন্দকার জামিল উদ্দিন
 | প্রকাশিত : ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২১:০৬

সাকিব ছয় মাসের ছুটি চাচ্ছে। খবরটা শুনে আমি যারপরনাই বিস্মিত হলাম। এটা কি সাকিবের কথা? আমার খটকা লাগছিল। অথচ অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগেই তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বেশি বেশি টেস্ট খেলতে চাই। বাংলাদেশ খুবই কম টেস্ট খেলছে।’

ভারত, অস্ট্রেলিয়া কিংবা অন্য অনেক দলের চেয়ে বাংলাদেশ দলের ব্যস্ততা অনেক কম। বছরে হাতেগোনা কয়েকটা টেস্ট ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। ক্রিকেটাররা যখন টেস্ট খেলার জন্য মুখিয়ে থাকে তখন সাকিব উল্টো কথা বলছেন। ব্যাপারটা আমার কাছে ধোঁয়াশাচ্ছন্ন মনে হচ্ছে। আমার কেন জানি বিশ্বাসই হচ্ছে না।

আমি মনে করি এবং বিশ্বাস করি শারীরিক ও মানসিক কারণেই সাকিব ছুটি নিয়েছেন। তবে, এর বাইরে যদি অন্য কোনও কারণ থাকে তাহলে সেটা মিডিয়া নিশ্চয়ই বের করবে। আর সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে তা দলের জন্য মোটেও সুখের হবে না। এ ব্যাপারটা খুব সিরিয়াসলি দেখতে হবে বিসিবিকে। সাকিবের ছুটির পেছনে যদি ভিতরে কোনও ঘটনা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কড়া হাতে এটা হ্যান্ডেল করতে হবে।

কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, শারীরিক ও মানসিক কারণেই সাকিব ছুটি নিয়েছেন, অন্য কোনও কারণে নয়। তিনি টানা ক্রিকেট খেলছেন। দেশ-বিদেশে লিগ খেলছেন। অবসাদগ্রস্ত বা ক্লান্ত হতেই পারেন। ক্রিকেটে মানসিকভাবে ফিট না থাকলে সেরাটা দেওয়া সম্ভব নয়। তাকে দুই টেস্টের জন্য বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। বিসিবির আসলে করার কিছুই ছিল না। বিসিবিকে আমি ধন্যবাদ জানাই যে, সাকিবের আবেদন গ্রাহ্য করা হয়েছে। আমি এও আশা করি, সাকিব দ্বিতীয় টেস্টেই দলের সঙ্গে যোগ দিবেন। সাকিবের জন্য বেশি বেশি ম্যাচ খেলার এটাই তো সময়।

সাকিব দলে না থাকার ক্ষতি একটা দুইটা নয়, অনেকগুলো। সাকিব দুই জনের সমান। সেরা স্পিনার এবং ব্যাটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ। সাকিব দলে না থাটা দলের মানসিক শক্তির দিক দিয়েও দারুণ নেতিবাচক। সাকিব দলে নেই, এটা দলে মানসিক শক্তিকে দুর্বল করে দিবে। অতীতে আমরা সাকিব ছাড়া ভালো করতে পারিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও সেটা প্রমাণ হয়েছে। সাকিব এমন একজন খেলোয়াড় যিনি ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। সদ্য শেষ হওয়া ঢাকা টেস্টেই আমরা দেখেছি সেটা।

কথা হচ্ছে, সব সময় তো সাকিব থাকবেন না। তিনি যদি ইনজুরিতে থাকতেন, তাহলেও তো আমাদের খেলতে হবে। কারও জন্য তো কোনও কিছু থেমে থাকবে না। খেলা তো চালিয়ে যেতেই হবে। আমি মনে করি এখন দেখানোর সময় এসেছে সাকিব ছাড়াও ভালো করা সম্ভব। সাকিব ছাড়াও জেতা সম্ভব।

অনেকেই জাতীয় দলের প্রতি সাকিবের কমিটমেন্ট নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। বলছেন, যেখানে বিপিএল, আইপিএল খেলতে অসুবিধা হবে না, সেখানে টেস্ট খেলতে বাঁধা কোথায়? আসলে সাকিবের কাছে সবার প্রত্যাশা অনেক বেশি। সাকিব যখন ছুটির কথা বলেন তখন ভক্তদের হতাশ হওয়ারই কখা। তবে, এ কথার সঙ্গে আমি একমত নই যে, আইপিএল বা বিপিএল খেলতে পারলে টেস্ট খেলতে সাকিবের বাঁধা কোথায়। টেস্টের সঙ্গে অন্য ফরম্যাটকে মিলালে হবে না। টেস্ট অনেক মনোযোগের খেলা। কঠিন খেলা। পুরোপুরি ফিট না থাকলে টেস্টে ভালো করা সম্ভব নয়। সাকিব হয়তো এই মুহূর্তে মানসিক দিক দিয়ে ফিট নন।

আর যদি তিনি সব দিক দিয়ে পুরো সুস্থ থাকার পরও স্রেফ বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ছুটি নিয়ে থাকেন তাহলে ব্যাপারটা ভালো নজির হবে না। এটা সাকিবের ক্যারিয়ারের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। দলের মধ্যে বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে। অন্য সিনিয়র ক্রিকেটারও তখন সাকিবের পথে হাঁটবেন। দলের মধ্যে তখন বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে।

খন্দকার জামিল উদ্দিন: সাবেক বিসিবি পরিচালক

সংবাদটি শেয়ার করুন

খেলাধুলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

খেলাধুলা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :