শেখ হাসিনার মানবতার জয়গান

প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৮:৩৮ | আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৮:৫৫

মামুনুর রশিদ

`মানবতা’ শব্দটি সারা বিশ্বে যখন কেবল একটি চার অক্ষরের শব্দে বন্দী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা তখন মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে চলেছেন একের পর এক। মানবতাকে অনেকে জয় করতে চান আজকাল কেবল লোক দেখিয়ে নিজেকে জাহির করার নিমিত্তে। কিন্তু, শেখ হাসিনা কেবল তার দায়িত্ববোধ, কোমল মানসিকতা ও মায়ার্দ্র হৃদয় দিয়েই জয় করে চলেছেন।

অতীতের কথায় পরে আসছি, আগে সাম্প্রতিক ও চলমান কিছু প্রত্যক্ষ দৃষ্টান্ত দিই। সারা বিশ্বে বর্তমানে আলোচনায় মিয়ানমার সরকারের রোহিঙ্গা নির্যাতন ইস্যু। অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব যতটা না আলোচনায় এ ক্ষেত্রে, বাংলাদেশকে ঘিরে মিয়ানমারের সঙ্গে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র তার চেয়ে বেশি প্রতীয়মান।

এমন স্পর্শকাতর ও উদ্বেগজনক ইস্যুতে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার অবস্থান ও সিদ্ধান্ত একটু মন দিয়ে খেয়াল করলে বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। একদিকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র সামাল দিতে হচ্ছে, অন্যদিকে বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে দিতে হচ্ছে আশ্রয় ও ভরণপোষণ।

মানবিকতার থোড়াই-কেয়ার করে তার সরকার যদি শরণার্থীদের পুশব্যাক করে, সে ক্ষেত্রে তার স্বভাবজাত মানবতাবোধের পরাজয় হতো; আবার সারা বিশ্বে শেখ হাসিনার সরকারকে মানবতাবিরোধী প্রমাণেও ব্যস্ত হয়ে পড়ত ষড়যন্ত্রকারীরা, যা সরকারপ্রধান হিসেবেও হয়তো মাথায় আছে তাঁর। কিন্তু, ষড়যন্ত্রের রক্তচক্ষুকে থোড়াই-কেয়ার করা শেখ হাসিনা কেবল তাঁর মানবতাবোধের কারণেই জোরপূর্বক পুশব্যাক পদ্ধতি কাজে লাগাননি। এ ক্ষেত্রে তাঁর মানবতাবোধই জয়ী।

মিয়ানমার সরকারকে চাপ দিতে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর ভূমিকা রাখার ব্যাপারেই বরং কাজ করে যাচ্ছেন তিনি, আবার মিয়ানমারের কোনো উস্কানিতেও পা বাড়াচ্ছে না তার সরকার। নিজেদের শক্তি-সামর্থ্যকেও দুর্বল মনে করছে না বাংলাদেশ। কৌশলই অবলম্বন করেছেন এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আবার শরণার্থী রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করছে তাঁর সরকার।

আশ্রয় দেয়া থেকে শুরু করে, খাবার জোগান, নিরাপত্তা ও চিকিৎসাসেবা প্রদান- কোনো কিছুতেই কার্পণ্য করছে না শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার। নিজের দলের নেতাকর্মীর পর এবার নিজেই সশরীরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে হাজির হয়েছেন ছোট বোন শেখ রেহানাসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানবতার প্রতীক হয়ে ওঠা শেখ হাসিনা। তাদের ব্যথায় ব্যথিত হয়েছেন, মিয়ায়ানমার সরকারের মানবতার নিষ্ঠুরতায় শরণার্থীদের চোখের পানি কাঁদিয়েছে কোমল মনের শেখ হাসিনাকেও।  অভয় দিয়ে সান্ত্বনা দিয়েছেন নির্যাতিত মানুষদের। তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েও আশ্বস্ত করেছেন তিনি। সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আশ্রয় বা খাবার পাওয়ার শতভাগ নিশ্চয়তাও দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

এর চেয়ে বেশি একজন মানবতাবাদী সরকারপ্রধান ও মানুষের আর কী করা বাবি থাকে!

অথচ, এ দেশেই তো কত রাজনৈতিক দল রয়েছে। দুবারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভূমিকার দিকে তাকালে মানবতার পরিবর্তে মানবতা নিয়ে নোংরা রাজনীতিই পরিলক্ষিত হয়। শেখ হাসিনার সরকার যখন এমন সংকটে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছে, বিএনপি তখন সরকারকে এই ইস্যুতে বেকায়দায় ফেলতে ব্যস্ত।

কোনো ষড়যন্ত্রই দৃঢ়চেতা শেখ হাসিনাকে জনকল্যাণ ও মানুষের সেবা থেকে পিছু হটাতে পারবে না সেটা ষড়যন্ত্রকারীরাও জানে নিশ্চিতভাবেই।

যাই হোক, কয়েক দিন আগে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায়ও শুধু সরকারপ্রধান হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে হৃদয় দিয়ে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন বঙ্গবন্ধু-কন্যা। দুর্গত অঞ্চলে গিয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছেন, বন্যার্তদের সাহস জুগিয়েছেন, খাবারসহ সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন। এতে করে বন্যার ভয়াবহ দুর্যোগও সহজেই মোকাবেলা করা সম্ভব হয়েছে। এমন দুর্যোগে শেখ হাসিনার মহানুভবতার হাজারো নজির আছে যা তাঁকে একজন প্রকৃত মানবতাবাদী মানুষ ও নেতার রূপ দিয়েছে।

পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি চুক্তি, সুন্দরবনের জলদস্যুদের নিঃশর্ত ক্ষমা প্রদর্শন করে তাদের সুষ্ঠুধারার জীবনে ফিরিয়ে আনা, দীর্ঘদিনের অনিশ্চিত জীবন থেকে অসহায় ছিটমহলবাসীকে মুক্তিদান ব্যক্তি শেখ হাসিনার মানবতাবোধের জয়গান গায়।

দেশবাসীর জন্য আরেকটা বাংলাদেশ উপহার, উন্নত জীবনমান নিশ্চিত করাসহ পুরো দেশটাকেই সাজিয়ে তুলছেন মানুষের কল্যাণে।

পরিবারের প্রায় সব সদস্যকে হারিয়ে নিঃস্ব ভগ্নহৃদয় শেখ হাসিনা জীবন বাজি রেখে এ দেশ ও মানুষের জন্য আর কত কল্যাণ করলে তুষ্ট হবে  এ দেশের মানুষ! সব মানুষ তুষ্ট না হোক, মানবতা ঠিকই জয়গান গায় শেখ হাসিনার।

লেখক: সাংবাদিক।