ঢাকা-১৩: বিএনপিতে এবার বাইরের প্রার্থী না স্থানীয়?

প্রকাশ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৮:০৩

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

১৯৯১ সালের পর থেকে ২০০৮ সাল পর‌্যন্ত সব কটি সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৩ (মোহাম্মদপুর-আদাবর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের কেউ ওই এলাকার ভোটার ছিলেন না। এখন পর‌্যন্ত মনোনয়ন-প্রত্যাশী যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাতে একাদশ সংসদ নির্বাচনেও বাইরের কেউ মনোনয়ন পান কি না তা নিয়ে আলোচনা আছে এলাকার নেতাকর্মীদের মধ্যে।

জানা গেছে, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও নির্বাচন করেছিলেন এখান থেকে। তিনি ওই এলাকার ভোটার ছিলেন না। এমনকি আসনটি তিনি ছেড়ে দেয়ার পর উপনির্বাচনে নির্বাচিত ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারও ওই এলাকার ভোটার নন।  

তবে এখন পর‌্যন্ত মনোনয়ন-প্রত্যাশী যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাতে এবার এই প্রবণতা ভাঙতেও পারে। কেননা বাইরের প্রার্থীর পাশাপাশি আছেন স্থানীয় নেতারাও।

মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম। তার বসবাস ঢাকার শান্তিনগরে। তিনিও ঢাকা-১৩ আসনের ভোটার নন। আলোচনায় যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল থাকলেও তাকে অন্য আসনে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা করছে বিএনপির হাইকমান্ড।

এর বাইরে সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট খন্দকার জিল্লুর রহমান ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সহসভাপতি আতিকুল ইসলাম মতিন নির্বাচন করতে আগ্রহী বলে শোনা যাচ্ছে। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা জিল্লুর রহমান নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী বলে ঢাকাটাইমসকে জানান।

আতিকুল ইসলাম মতিনও ঢাকাটাইমসের কাছে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে কথা বলেছেন।

নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, অন্যান্য দেশের আসনের মতো ঢাকা-১৩ এলাকায়ও বইছে নির্বাচনী হাওয়া। রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলা নগরের আংশিক নিয়ে গঠিত এই আসন।

বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি, এই আসনে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্য থেকে যোগ্য প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার।

বিএনপি সর্বশেষ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। সেবার এই আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী করা হয়েছিল সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে। এরপরের নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। আগামী নির্বাচনে তাকে ঢাকা-১৫ (কাফরুল) আসন অথবা নিজ এলাকা বরিশালের উজিরপুরে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে বলে দলসূত্রে জানা গেছে।

বিএনপির দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত না হলেও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সাবেক ছাত্রনেতা ও আইনজীবী খন্দকার জিল্লুর রহমানও মনোনয়নের প্রত্যায়শায় এলাকায় বিভিন্নভাবে গণসংযোগ করছেন। এ ছাড়া মহানগর উত্তর বিএনপির সহসভাপতি আতিকুল ইসলাম মতিন এ আসনে মনোনয়ন-প্রত্যাশী।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে আব্দুস সালাম নির্বাচনী এলাকায় জনসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। ঈদুল ফিতরের পর ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন এলাকায়।

অ্যাডভোকেট খন্দকার জিল্লুর রহমান ৩০ বছরের বেশি সময় মোহাম্মদপুরে বসবাস করছেন। তিনি মোহাম্মদপুরের স্থায়ী বাসিন্দা ও ভোটার। মোহাম্মদপুর আদাবর এলাকার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত আছেন। এলাকার নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গেও সুসম্পর্ক আছে এই আইনজীবী নেতার।

আইনজীবী হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি আকাশ নীলা ওয়েস্টার্ন সিটি লি. ও আকাশ নীলা হোমস্ লিমিটেডের চেয়ারম্যান।

১৯৯০ সালের এরশাদবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত জিল্লুর রহমান জাতীয়তাবাদী সমবায় দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন বলে জানান। বর্তমানে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সঙ্গে জড়িত তিনি।

ঢাকাটাইমসকে জিল্লুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত আছি। এরশাদবিরোধী আন্দোলনসহ সব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ছিল আমার। ৩০ বছর ধরে মোহাম্মদপুর এলাকায় বসবাস। এখানেই বাড়ি, এখানেই আমি ভোটার। দলের বাইরেও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থেকে মানুষের জন্য সাধ্যমত কাজ করার চেষ্টা করেছি।’

দল সুযোগ দিলে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বিনির্মাণ এবং বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিশন-২০৩০ বাস্তবায়নে কাজ করবেন জানিয়ে জিল্লুর রহমান বলেন, ‘মোহাম্মদপুর-আদাবরের এ আসনটি আমি পুনরুদ্ধার করে দলকে উপহার দিতে পারব, ইনশাল্লাহ।’

আতিকুল ইসলাম মতিন ’৮৬ সাল থেকে ৯১ সাল পর‌্যন্ত বৃহত্তর মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। সব সময় দলের কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে  অংশ নিয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘৯১ সাল থেকে প্রত্যেক নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমার প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের পক্ষে কাজ করি। আশা করি দল আগামী নির্বাচনে এসব বিষয় বিবেচনা করবে। আমি আশাবাদী।’

(ঢাকাটাইমস/১৩সেপ্টেম্বর/মোআ)