পাঁচ যুগ ধরে পরিত্যক্ত বিমানবন্দরটি এখন 'কৃষি ফার্ম'

রাহেবুল ইসলাম টিটুল, লালমনিরহাট থেকে
 | প্রকাশিত : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৮:০৯

ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ‘লালমনিরহাট বিমানবন্দর’টি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইংরেজ সরকারকে তথা তৎকালীন ভারতবর্ষকে রক্ষার একটি প্রধান বিমানক্ষেত্র। এই ঘাঁটি না থাকলে ভারতবর্ষ এবং ইংরেজদের ভারতবর্ষ ছাড়ার ইতিহাস হতো অন্য রকম। জাপানের সহযোগিতায় নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’ চলে এসেছিল বার্মা অতিক্রম করে আসাম সীমান্তে। লালমনিরহাটের এই বিমান ঘাঁটি ব্যবহার করে ব্রিটিশরা ঠেকিয়ে দেয় আজাদ হিন্দ ফৌজের সেই অগ্রযাত্রাকে।

লালমনিরহাটকে তখন বলা হতো ‘গেটওয়ে টু নর্থ-ইস্ট' এবং 'মাউথ অব আসাম'; ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তখনকার বিশাল প্রদেশ বৃহত্তম আসামে প্রবেশের একমাত্র পথ ছিল এই লালমনিরহাট। রেলপথের ‘লালমনিরহাট জংশন’ এবং বিমানপথে ‘লালমণিরহাট জাহাজ-ঘাঁটি’। ভারত ভাগ না হলে লানমনিরহাট তার এই যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্বের জন্য আপন মহিমায় হয়ে উঠত আর এক 'দ্বিতীয় কোলকাতা'।

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পরে পরিত্যক্ত হয়ে বিভিন্ন রকম অবহেলার ঘাত-প্রতিঘাতের পর এক হাজার ১৬৬ একরের বিশাল পরিধি ব্যাপ্ত এশিয়ার এই দ্বিতীয় বৃহৎ বিমানবন্দর তার গুরুত্ব এবং ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলে আজ বিমানবাহিনীর শুধু একটি 'কৃষি ফার্ম' মাত্র। প্রায় চার মাইল লম্বা রানওয়ে, বিশাল টারমাক, হ্যাঙ্গার এবং ট্যাক্সিওয়ে নিয়ে বিশাল এই ঐতিহাসিক বিমানবন্দরটি আজ জৌলুসহীন ও বিবর্ণতায় মলিন হয়ে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে যেন তার অতীত গৌরবের ইতিহাস স্মরণ করে। ‘মঙ্গা’র অলঙ্ঘনীয় অভিশাপ হতে মুক্ত হয়ে অবহেলিত উত্তরাঞ্চলে এখন লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। উন্নয়নের ফলে দেশের জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় লালমনিরহাটের জনগণেরও ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। এই অবস্থায় লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি যাত্রী পরিবহনের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে যেমন সরকার পেত বিপুল পরিমাণ রাজস্ব, তেমনি এলাকার জনগণও লাভবান হতো দ্রুততম সময়ে ঢাকা যাতায়াতের সুবিধা ব্যবহার করে। সেই সাথে ঐতিহাসিক এই বিমানবন্দরটি একদিকে যেমন তার হারানো ঐতিহ্য কিছুটা হলেও ফেরত পেত, গর্ব অনুভব করত লালমনিরহাটবাসী।

অন্যদিকে যাতায়াত সুবিধায় বেঁচে যেত এলাকার জনগণের অনেক মূল্যবান কর্ম-ঘন্টাও। এ ছাড়াও বিমান বন্দরটি চালু হলে ভবিষ্যতে একদিন হয়ত এটি নেপাল, ভুটান, শিলিগুড়ি রুটে যাত্রী পরিবহন করার পথে অগ্রসর হয়ে অর্জন করতে পারত এক আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের মর্যাদাও।

১৯৫৮ সালে স্বল্প পরিসরে পুনরায় বিমান সার্ভিস চালু হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে এটিকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর হেডকোয়ার্টার করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। এ কারণে চার কিলোমিটার রানওয়ে, বিশাল টারমাক, হ্যাংগার, ট্যাক্সিওয়ে এগুলো সবই এখন পরিত্যক্ত।

১৯৮৩ সালে বিমানবাহিনী কর্তৃপক্ষ এখানে কৃষি প্রকল্প গ্রহণ করে। সরকারি এই মূল্যবান স্থাপনাজুড়ে মিলিটারি ফার্মের তত্ত্বাবধায়নে গড়ে তোলা হয়েছে গরুর খামার এবং সংরক্ষিত ভূমিগুলিতে চলছে কৃষি কাজ। রাখালেরা ওই জমিগুলোতে পশু চারণ করে। বিমান বন্দরটি ব্যবহারের উপযোগী হলেও শুধু ভারতীয় আকাশসীমা লঙ্ঘনের অজুহাতে অবহেলায় পড়ে রয়েছে। লালমনিরহাট পৌরসভার মেয়র রিয়াজুল ইসলাম রিন্টু ঢাকাঢাইমসকে বলেন, ‘বিমানবন্দরটি চালু হলে এলাকার উন্নয়ন অনেকাংশে ত্বরান্বিত হবে।’

এফবিসিসিআইর পরিচালক সিরাজুল হকও মনে করেন বিমানবন্দরটি চালু হলে এলাকার ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম মমিনুল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এলাবাসীর দাবি লালমনিরহাট বিমানবন্দরের ঐতিহ্য ফিরে আসুক এবং বিমানবন্দরটি পুনরায় চালু করা হোক। বিমানবন্দরটি চালু হবে এটি জেলাবাসীর প্রাণের দাবি।’ জেলার আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট পাল্টে দিতে বিমানবন্দরটি চালুর প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি।

লালমনিরহাট বিমান বাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিটের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ভুটান সরকার লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি ব্যবহারের জন্য পছন্দের তালিকায় রাখলেও আকাশসীমা নিয়ে জটিলতা থাকায় তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না।

সূত্রটি আরও জানায়, ভারত, বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় একটি চুক্তি হলেই বন্দরটি ব্যবহার করা যাবে।

(ঢাকাটাইমস/১৩সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :