সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে ‘শীতল’ সম্পর্ক হাথুরুসিংহের

প্রকাশ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৫:২৪ | আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৫:৪৬

ক্রীড়া প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম কোচ মনে করা হয় তাকে। ২০১৪ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের দলের সাফল্যের গ্রাফ কেবলই উর্ধ্বমূখী। দলকে একের পর এক সাফল্য এনে দিলেও নানা কারণে সমালোচিতও কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে। বিশেষ করে তার অতিরিক্ত মাতব্বরি ও খবরদারিতে বিরক্ত অধিনায়ক এবং সিনিয়র খেলোয়াড়রা।

মাশরাফির সঙ্গে কোচের চূড়ান্ত সম্পর্কের অবনতি চলতি বছর মার্চে শ্রীলঙ্কা সফরে। টি-টোয়েন্টির সিরিজের শুরুর আগের রাতে এ ফরম্যাট থেকে মাশরাফিকে হঠাৎ অধিনায়ক ছাড়তে বলেন কোচ। রাগে ক্ষোভে এ ফরম্যাট থেকেই অবসর নিয়ে নেন মাশরাফি। দল গঠন বা একাদশ নিয়ে আগে থেকেই কোচের সঙ্গে মাশরাফির মতপার্থক্য বা দ্বিমত ছিল। তবে ওই ঘটনায় দুজনকে দুই মেরুতে ঠেলে দিয়েছে। কোচের সঙ্গে ওয়ানডে অধিনায়কের সম্পর্ক এখন তলানিতে।

হাথুরাসিংহের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক নেই টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের সঙ্গেও। কয়েকদিন আগেই দুবার কোচকে প্রচ্ছন্ন খোঁচা দিয়েছেন মুশি। প্রথমটা  দলের সাফল্যে নিয়ে এবং অন্যটা টিম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে। দলের সাফল্যের পুরো কৃতিত্ব কোচকে না দিয়ে মুশফিক বলেছিলেন, ‘তিনি ভালো একটা দল হাতে পেয়েছেন এবং সময়টাও খুব ভালো।’

টিম ম্যানেজমেন্টে অধিনায়ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। কিন্তু কোচের অতিরিক্ত মাতবরিতে অধিনায়ক যে পুরো কোণঠাসা সেটা মুশফিকের কথাতেই স্পষ্ট। ব্যাটিং কম্বিনেশন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মুশি বলেন,‘ কে কোন পজিশনে নামবে সেটা আমাকে জিজ্ঞাসা না করে টিম ম্যানেজমেন্টকে জিজ্ঞাসা করলে ভালো হয়।’ মুশফিকের কথাতেই স্পষ্ট আসলে টিম ম্যানেজমেন্টে তার কোনো অবস্থান নেই। পুরো কর্তৃত্বই কোচের।

জানা গেছে, শুধু দুই দুই অধিনায়ক নন, দলের সব সিনিয়র ক্রিকেটারের সঙ্গেই কোচের সম্পর্ক এখন অত্যন্ত শীতল। ড্রেসিং রুমে বা অনুশীলনে আগের সেই প্রাণ খোলা পরিবেশ নেই  এই শীতল সম্পর্কের জেরে।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে শ্রীলঙ্কা সফরের মাঝপথে দেশে পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিলেন কোচ। কিন্তু মাশরাফি বেঁকে বসলে সেটা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কোচের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে দেশ থেকে তখন মাশরাফি বলেছিলেন, ‘রিয়াদকে তার দরকার। তাকে দেশে ফিরিয়ে দেওয়া হলে তিনি শ্রীলঙ্কা সফরে যাবেন না।’ এ হুঙ্কারে কাজ হলেও পরে মূল্য দিতে হয়েছিল ম্যাশকে। কোচের মুখ থেকে অধিনায়কত্ব ছাড়ার আকস্মিক প্রস্তাব শুনতে হয়েছিল।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রিয়াদকে দলের বাইরে রাখা হয় কোচের কারণে। কিন্তু টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হলে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে রিয়াদকে দলের নেওয়ার দাবি ওঠে।তবে কোচ রিয়াদের ব্যাপারে ছিলেন নেতিবাচক। কিন্তু প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল অবেদীন নান্নুর চাওয়াতে তাকে দক্ষিণ আফ্রিকা ডাকা হয়। সে কথা নান্নুর মুখ থেকেই বেরিয়ে এসেছে।বলেন,‘ রিয়াদকে আসলে কোচ নয়, আমিই  দলে ডেকেছি। মনে করেছি, ও সেখানে ভালো করবে।’

মুমিনুলের সঙ্গে সবচেয়ে খারাপ সম্পর্ক থাকার কথা কোচের। কারণ সবচেয়ে বেশি অবিচারের শিকার হতে হয়েছে কোচকে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ টেস্টে বাদ দেওয়া, অস্ট্রেলিয়া সিরিজে প্রথমে মুমিনুলকে না নেওয়া।,ঢাকা টেস্টে একাদশে না রাখা এবং বিস্ময়করভাবে চট্টগ্রাম টেস্টে তাকে আট নম্বরে ব্যাট করতে পাঠানো। মুমিনুলের উপর এসব বড় অবিচার মনে করছেন সবাই।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম টেস্টে আট নম্বরে ব্যাট করে খুবই হতাশ হন মুমিনুল। তিনি নাকি অসন্তোষও প্রকাশ করেন খানিকটা। কোচের কানে খবরটা গেলে  তিনি নাকি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন,‘ মুমিনুলকে দেখে নেব।’

ভালো সম্পর্ক নেই সাকিব তামিমের সঙ্গেও। চট্টগ্রাম টেস্টে খারাপ করায় কোচের নাকি গরম কথাও শুনতে হয়েছে তাদের। কোচের সঙ্গে সিনিয়র খেলোয়াড়দের ভালো সম্পর্ক নেই-ব্যাপারটা বেশ ভালো করেই জানেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট।  পাপনের কাছে নাকি তারা অভিযোগও করেছেন। কিন্তু সামনে বিশ্বকাপ পর্যন্ত কোচের সঙ্গে চুক্তি। সে পর্যন্ত কোচকে চটাতে চাচ্ছেন না বোর্ড প্রেসিডেন্ট। দলে সাফল্যের যে ধারাবাহিকতা এ কোচের আমলে এসেছে, সেটা নষ্ট করতে চাইছে না বিসিবি। তাই সিনিয়র খেলোয়াড়দের ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেছেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট।

(ঢাকাটাইমস/১৩সেপ্টেম্বর/ডিএইচ)